২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘গণবিচ্ছিন্ন বাজেট’ বলে আখ্যা দিয়েছে বিএনপি। প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দলটির নেতারা জানান, বাজেট জনবান্ধব হয়নি। যেখানে বর্তমান সরকারের কাছ থেকে এর বেশি কিছু আশা করে লাভও নেই। কারণ, জনগণের কাছে তাদের কোনও জবাবদিহি নেই।
আজ (৩ জুন) বৃহস্পতিবার বাজেট পরবর্তী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, এক কথায় এটি একটি গণবিচ্ছিন্ন বাজেট হয়েছে। সাধারণ মানুষের যে মূল সমস্যাগুলোকে এড়িয়ে নিজেদের ইচ্ছামত বরাদ্দ দিয়ে বাজেট পেশ করেছে সরকার। তিনি বলেন, প্রত্যাশা ছিলো বাজেটে স্বাস্থ্য খাত সবোচ্চ প্রাধান্য পাবে, কিন্তু সরকার সবাইকে হতাশ করেছে। ফখরুল বলেন, অর্থমন্ত্রী আ ফ ম মুস্তফা কামাল শীর্ষ অর্থনীতিবিদদের অভিমতকে উপেক্ষা করেছেন। আশা ছিল করোনা কাটিয়ে টেকসই অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তুলতে তিনি অসাধারণ বাজেটের ঘোষণা দেবেন। কিন্তু নিতান্তই একটি সাধারণ বাজেট ঘোষণা দিলেন।
২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের ভবিষ্যত আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, বাজেটে সবচেয়ে বেশি প্রতিফলিত হওয়া উচিত ছিলো দেশের দ্ররিদ্র হত দ্ররিদ্র, নিন্ম মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্তসহ ক্ষুটির শিল্প, ছোট শিল্পসহ অন্যান্য খাতে যারা কাজ করছে তাদের জন্য। তিনি বলেন,আমাদের সম্প্রসারণশীল একটি অর্থনীতি হওয়া উচিত মানুষকে বাঁচানোর জন্য। বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো, গণতান্ত্রিক দেশগুলো নিন্ম আয়ের মানুষকে পুনরুদ্ধার করার জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যয় করছে। বাংলাদেশে সবচেয়ে কম ব্যয় করছে। এই লোকগুলোকে বাহিরে রেখে যে অর্থনীতি তারা চালু করেছে এ অর্থনীতিতে বাংলাদেশের কোনো ভবিষ্যত নাই। তবে ক্ষমতাসীন দলের লোক জনের ভবিষ্যত আছে এখানে। সাধারণ মানুষের কোনো ভবিষ্যত নাই। খসরু বলেন, যারা কর্মচ্যুত হয়েছেন, ব্যবসা কর্মচ্যুত হয়েছে, যারা আর্থিকভাবে দ্রারিদ্র হয়ে পরেছে, অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে হলে এ লোকগুলোকে আগে বাঁচাতে হবে। এদের বাঁচানোর জন্য জিডিপির অত্যন্ত ৭-৮ শতাংশ বরাদ্দ থাকতে হবে প্রণোদনার জন্য। এ লোকগুলোকে বাঁচাতে হবে। কিন্তু আমার দেখতে পাচ্ছি সেই পুরনো জিডিপির শতাংশের নিচে রয়ে গেছে তারা। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পরেছে, শুধু বরাদ্দের জন্য নয়, যেটুকু সামান্য বরাদ্দ দেয় সেটা লুটপাট, দুর্নীতি হয়। যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেটাও আগের মতো বরাদ্দ। যদি এ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করতে হয় তাহলে জিডিপির ৫ শতাংশ এখানে বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিলো। তিনি বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রেও তাই। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে জিডিবির ৫ শতাংশের নিচে করলে আমরা যেখানে এসে দাঁড়িয়েছি আজকে অর্থনীতিকভাবে এর থেকে বের হয়ে আসার কোনো সুযোগ নেই। বিরোধী দলের এই নেতা বলেন, আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষ কম বয়সের, যেটা আমাদের জন্য বড় সম্পদ। এই সম্পদ যদি আমরা সম্পদ হিসেবে অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করতে চাই এবং তাদের মাধ্যমে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই তাহলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দিতে হবে।
২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাাবিত বাজেটকে অধমর্ণের বাজেট’ বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। বাজেট প্রস্তাবের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে এই আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে এমন একটি বাজেট উপহার দিয়েছে, যা হলো ‘অধমর্ণেও বাজেট। তিনি আরও বলেন, মোট বাজেটের ৩৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ, অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশের বেশি হলে ঘাটতি, যা বৈদেশিক অথবা অভ্যন্তরীণ সোর্স থেকেই ঋণের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। বিএনপি অতীতে দেশকে বৈদেশিক ঋণ নির্ভরতা থেকে বার বার করে আনার চেষ্টা করেছে, আর আওয়ামী লীগ তাদের বিশৃঙ্খল মেগা প্রকল্প ও মেগা দুর্নীতির কারণে দেশের অর্থনীতিকে বার বার বৈদেশিক নির্ভর করে দেশের প্রতিটি শিশুর মাথায় জন্মের আগেই হাজার হাজার টাকার ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে, এবারের বাজেট তারই চরম বহিঃপ্রকাশ। সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, বাজেটে অর্থমন্ত্রী ৪৭ টি সেবা দেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু বাস্তবে সেবা দেওয়া হয় মাত্র ৭টি। এগুলো শুভঙ্করের ফাঁকি ছাড়া কিছুই নয়।