বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেছেন, “মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গেইম চেঞ্জার হিসেবে কাজ করবে। বর্তমানে ৩১৫টি জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে এবং জাপানি বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ গন্তব্যও বাংলাদেশ।”
মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলমের সাথে এক সৌজন্য সাক্ষাতে এসব কথা বলে জাপানি রাষ্ট্রদূত। চট্টগ্রাম নগরীর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে চেম্বার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চেম্বার পরিচালকরাও উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, “নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজারে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে জাপান। পরবর্তীতে মিরসরাই ইকনোমিক জোনেও ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হবে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশকে উন্নত দেশের দিকে এগিয়ে নিচ্ছে। বিনিয়োগ পরিবেশ এবং অবকাঠামো উন্নয়ন চলমান রয়েছে।”
এসময় তিনি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে বিদ্যমান সমস্যাগুলো দূরীকরণ, বিগ-বি ইনিশিয়েটিভ কার্যকর করা, নীতিমালা সংশোধন এবং আগামী ১০ বছরের জন্য প্রয়োজনীয় মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
রাষ্ট্রদূত বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক প্রণোদনা সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানান। বাংলাদেশে জাপানের বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগবান্ধব নীতি এবং প্রশিক্ষিত জনশক্তি তৈরি করতে হবে বলে মন্তব্য করেন।
অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে দীর্ঘ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে জাপান সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, “জাপান এদেশের অবকাঠামো ও মেগা প্রজেক্ট যেমন- মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রো রেল, এক্সপ্রেস হাইওয়ে নির্মাণ ইত্যাদিতে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে।”
তিনি বেসরকারি খাতকে দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি মন্তব্য করে চিটাগাং চেম্বারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সেন্টার অব এক্সিলেন্সের মাধ্যমে উভয় দেশের বেসরকারি খাতের উন্নয়নে একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের প্রস্তাব করেন।
মাহবুবুল আলম জাপান-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন এবং পরবর্তী দশ বছর (২০২১-২০৩০) বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য প্রাইভেট সেক্টর কো-অপারেশন পরিকল্পনা উপলক্ষে চিটাগাং চেম্বার, জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেটরো), ঢাকা এবং জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রি (জেবিসিসিআই) আগামী ২২ নভেম্বর একটি সমঝোতা স্মারক চুক্তি সম্পাদন করবে বলে রাষ্ট্রদূতকে অবহিত করেন।
চেম্বার পরিচালকবৃন্দ বাংলাদেশের উন্নয়নে জাপান সরকার তথা জাইকা ও জেটরোর অবদান, জাপানী মার্কেটের চাহিদানুযায়ী কোয়ালিটি পণ্য উৎপাদনে দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি, সকল ধরণের প্রতিষ্ঠানে কাইজান পদ্ধতি অনুসরণ করে ধারবাহিক উন্নয়ন, জাপানের প্রতি বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের ইতিবাচক মনোভাব এবং দেশীয় বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের প্রণোদনা প্রদানে চেম্বারের কর্মকান্ড সম্পর্কে অবহিত করেন।
মতবিনিময় শেষে রাষ্ট্রদূত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের এক্সিবিশন হল পরিদর্শন করেন।
এ সময় চেম্বার পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ, মো. শাহরিয়ার জাহান, নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন, সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর ও সাকিফ আহমেদ সালাম, দূতাবাসের ইকনোমিক অ্যাফেয়ার্স ডেভলপমেন্ট কো-অপারেশন সেকশনের সেক্রেটারি কেই ওনিশি উপস্থিত ছিলেন।