এবার ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই নির্বাচনে ভোটার তালিকায় থাকা ব্যাপক অনিয়ম তুলে ধরেছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা।
সংগঠনটির নির্বাচন আপিল বোর্ডের কাছে ভোটার তালিকায় জাল-জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে ২২টি সংগঠন। অভিযোগে বলা হয়- সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন ব্যক্তিদের ভোটার তালিকায় রাখা হয়েছে। সাধারণ ব্যবসায়ীরা ভুয়া ভোটার বাতিলের দাবি জানিয়ে একাধিক লিখিত আবেদন জানিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই নির্বাচন বোর্ডের সদস্য শামসুল আলম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভোটার তালিকার জন্য দুই গ্রুপ প্রতিনিধিদের নাম জমা দিয়েছে। অভিযোগের সত্যতা যাচাই-বাছাই করে আপিল বোর্ড সিদ্ধান্ত দেবে। আমরা সে সিদ্ধান্ত মেনে নেব। নির্বাচন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলামিন বলেন, সংগঠনগুলোর অভিযোগের ভিত্তিতে শুনানি চলছে।
নির্বাচন বোর্ড সূত্র জানায়, তফসিল মোতাবেক আগামী ৫ মে পরিচালক পদের ভোট গ্রহণ হবে। এ লক্ষ্যে গত ১৩ মার্চ অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ১ হাজার ৯১৩ জন ও চেম্বার গ্রুপে ৪৮৮ জনসহ সর্বমোট ২ হাজার ৪০১ জনের প্রাথমিক ভোটার তালিকা প্রকাশ হয়। এখন অভিযোগ এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনী সাপেক্ষে ২৪ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হওয়ার কথা রয়েছে। জানা গেছে, ওই ভোটার তালিকায় থাকা ব্যাপক অনিয়ম ও জাল-জালিয়াতির লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছে ২২টি সংগঠন। এই ভুয়া ভোটার তৈরি ও সংগঠনগুলো দখলের নেপথ্যে এফবিসিসিআইর দুজন সহসভাপতিকে দুষছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে বাংলাদেশ রেডি-মিক্স কনক্রিট অ্যাসোসিয়েশনের সচিব শুভ্রজিৎ দাশগুপ্ত স্বাক্ষরিতপত্রে বলা হয়, সংগঠনটির সদস্যরা ভোটার হতে অপারগ। কারণ সংগঠনটির সদস্য নয়, এমন পাঁজজনকে ভোটার তালিকায় রাখা হয়েছে। এই ভুয়া ভোটার বাতিলের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। ক্যাব অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মো. শফিকুর রহমান খান স্বাক্ষরিত আপত্তিপত্রে বলা হয়, সংগঠনটির পাঠানো তালিকার বদলে অজ্ঞাত পাঁচজনের নাম ভোটার তালিকায় এসেছে। যাদেরকে সংগঠনটির কেউ চেনেন না।
বাংলাদেশ ইলেক্ট্রিক্যাল ক্যাবলস মানুফেকচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আনিছুর রহমান পত্রে উল্লেখ করেন, ভোটার তালিকায় পাঁচজন সংগঠনটির অনুমোদিত বৈধ প্রতিনিধি নন। তারা ভুয়া ট্রেড লাইসেন্সধারী। বাংলাদেশ সিমেন্ট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়, ভোটার তালিকায় যাদের নাম উঠেছে, তারা সংগঠনটির কেউ নন। এ ক্ষেত্রে সংগঠনটির ভাইস চেয়ারম্যান সালমান সাদেকিনের স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। ফাউন্ড্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মো. আবদুল মালেক আকন্দ পত্রে বলেন, আমরা অত্যন্ত আশ্চর্যজনকভাবে দেখলাম ভোটার তালিকায় আমাদের পাঠানো নামের বদলে কতিপয় ব্যক্তির নাম এসেছে। যারা কোনোভাবেই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত নন। এই ভুয়া ভোটারদের ফাউন্ড্রি প্রতিষ্ঠান নেই। বাংলাদেশ ব্যাঙ্কার সাপ্লাইয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জক পত্রে বলেন, তফসিল মোতাবেক কুরিয়ারযোগে কাগজপত্র প্রেরণ করা হলেও, এফবিসিসিআই ফেরত দিয়েছে। পরে সশরীরে জমা দিলেও, গ্রহণ করা হয়নি। সূত্র জানায়, রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরীর পাঠানো নাম ভোটার তালিকায় এলেও, আরেকটি পক্ষ তালিকা জমা দিয়েছে। আবার বাংলাদেশ এনার্জি কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন কোনো কাগজপত্রাদি দাখিল না করলেও, ভুয়া ভোটার হিসেবে তালিকায় কয়েকজনের নাম উঠেছে। এ ছাড়াও ভোটার তালিকায় আরও ব্যাপক অনিয়ম, জাল-জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।