রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ, ১৪৪৫ | ০৯:২৬ অপরাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


সোমবার, ২২ অক্টোবর ২০১৮ ০১:৫৭:৪৩ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

জয়ে স্বস্তি আছে, প্রশ্নও আছে

আকাশভরা অনেক তারা। সে ভিড়ে তাঁকে নিয়ে তেমন উচ্ছ্বাস ছিল না কখনো। তবুও কাল তাঁকে ধ্রুবতারা হয়ে পথ দেখাতে হয় শুরুতে। তার পরও সবাই দিকভ্রান্ত, তখন জ্বলে উঠতে হয় লুব্ধক হয়ে। উজ্জ্বলতম তারাটির মতো আলো ছড়ানো ইনিংস খেলেন ইমরুল কায়েস। তাতেই রক্ষা। বিব্রতকর পরাজয়ের আগুনে পুড়ে যায় না বাংলাদেশের ক্রিকেট মহাকাশ। জিম্বাবুয়েকে ২৮ রানে হারিয়ে বরং ওয়ানডে সিরিজের শুরুটা দাপটেই। ম্যাচের ফল যেমন বলছে, দাপটটা এর চেয়ে ঢের বেশিই। সিরিজপূর্ব আবহে অমন পূর্বাভাসই তো ছিল। দুই দলের মুখোমুখি সব শেষ ১০ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের জয়, এই ফরম্যাটে সব প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সব শেষ ১০ ম্যাচে জিম্বাবুয়ের হার, বাংলাদেশের ওয়েস্ট ইন্ডিজে সিরিজ জিতে ফেরা, সদ্যই এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠা—সব হাওয়া মাশরাফি বিন মর্তুজার দলের পালে। কিন্তু সে পাল ফুটো হওয়ার জোগাড় ম্যাচের প্রথম ভাগে। ইনজুরির কারণে সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের না থাকাটাও তখন অনেক বড় হয়ে ওঠার পথে। ৬৬ রানে তিন উইকেট এবং ১৩৯ রানে স্বাগতিকদের ছয় উইকেট পড়ে যাওয়াটা তো শঙ্কার শিরশিরে অনুভূতি ছড়িয়ে দেয় শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের কংক্রিটের গোলকে। মাঠের সবুজ তখন রং বদলে বেদনার নীলে রূপান্তরের উদ্বেগে থমথমে। তখনই ইমরুলের বীরত্ব। তখনই তাঁর হার না মানা মানসিকতার আরেক প্রস্থ বিজয়গাঁথা। আড়াই বছর ওয়ানডে দলের বাইরে থেকে ২০১৪ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রত্যাবর্তনে ৫৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন যিনি। ২০১৫ বিশ্বকাপ ব্যর্থতায় বাদ পড়ার পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ফিরে ৭৬ ও ৭৩ রানের ইনিংসের গল্প লেখা হয় যাঁর ব্যাটে। আরেক ফিরে আসায় এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে মহামূল্য ম্যাচে মহামূল্যবান অপরাজিত ৭২ রানের কারিগরও যে বাঁহাতি। ইমরুলের ওই সব শেষ প্রত্যাবর্তন কাল যেন পূর্ণতা পায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৪৪ রানের অপূর্ব ইনিংসে। দলে থিতু হওয়ার দাবিটা স্লোগানের মতো জানানোর জন্য আর কিই-বা করতে পারেন তিনি! এর আগে কেমন বিদঘুটে অবস্থাতেই না পড়েছিল বাংলাদেশের ইনিংস! একবার রানআউট হতে হতে বেঁচে গিয়ে, আরেকবার মুঠোবন্দি করার পর বলের মাটি স্পর্শে রক্ষা পেয়েও লিটন দাস করতে পারেন না চার রানের বেশি। অভিষিক্ত ফজলে মাহমুদ রানের খাতা খোলার আগেই ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। আর মুশফিকুর রহিমও (১৫) যখন ডাউন দ্য লেগে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নমুখী, ১৫ ওভারে ৬৬ রানে তিন উইকেট হাওয়া স্বাগতিকদের। ওপেনার হিসেবে নেমে আস্থায় অবিচল তখনো ইমরুল। মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে ৭১ রানের জুটিতে সামাল দেন বিপর্যয়। কিন্তু সে জুটির ভাঙনে যে ধেয়ে আসবে আরো বড় বালুঝড়, কে জানত! ১৩ বলের মধ্যে মিঠুন (৩৭), মাহমুদ উল্লাহ (০) ও মেহেদী হাসানের (১) আউটে বাংলাদেশের তখন দুই শ করা নিয়েই সংশয়। কিন্তু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এমন বিরুদ্ধ পরিস্থিতি যদি সামলাতে না পারে, তাহলে আর বড় দল হয়ে উঠবে কিভাবে! বাংলাদেশ কাল দেখাল ওই বড় দলের ডিএনএ। আর তা ইমরুলের ব্যাটের নেতৃত্বে। অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন আসতে আসতে তাঁর ফিফটি করা সারা। আট চার ও তিন ছক্কায় ১১৮ বলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরিও তুলে নেন সময় পরিক্রমায়। কিছুদিন আগেই পৃথিবীর আলো দেখা সন্তানকে তা উৎসর্গ করেন জোড় দুই হাতকে দোলনা বানানো উদ্যাপনে; ১৯৯৪ ফুটবল বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বেবেতোকে ফিরিয়ে এনে। তবে সেঞ্চুরি করেই দায়িত্বের শেষ ভাবেননি ইমরুল। সপ্তম উইকেটে দেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড জুটি টেনেছেন ১২৭ পর্যন্ত। যেখানে জাতীয় দলে ফেরার ম্যাচে তাঁকে দারুণ সঙ্গ দেন সাইফুদ্দিন; তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি। আর ইমরুল খেলেন ১৪০ বলে ১৩টি চার ও ছয় ছক্কায় ক্যারিয়ারসেরা ১৪৪ রানের ইনিংস। এক আফসোসেরই একটুখানি অবকাশ। কাভার বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন যখন, ইনিংসের আট বল বাকি তখনো। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ তামিম ইকবালের ১৫৪ রান যে টপকানো হলো না! তা না হোক, দুই শর নিচে গুটিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় থাকা বাংলাদেশের ইনিংস তো ২৭১ পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারেন ইমরুল। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়ের রসদ সেখানেই। পরের কাজটুকুন করতে কোনোই অসুবিধা হয়নি বোলার-ফিল্ডারদের। হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও চেগাস ঝুওয়াওয়ের ৭ ওভারে ৪৮ রানের ওপেনিং জুটি মাশরাফির কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছিল কিছুটা। তখনই মুস্তাফিজ-শরণ। আর প্রথম বলেই স্বস্তি ছড়িয়ে তাঁর উইকেট শিকারের আনন্দে মেতে ওঠা। বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম তাঁর দ্বিতীয় ওভারে আউট করেন ব্রেন্ডন টেলরকে। প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি করা মাসাকাদজা হয়ে যান রানআউট। সিকান্দার রাজা ও শন আরভিনও যখন এক শর মধ্যে ফিরতি যাত্রার সঙ্গী, তখন আর ম্যাচের ফল নিয়ে সামান্যতম সংশয় থাকে কিভাবে! জিম্বাবুয়ের তো আর কোনো ইমরুল নেই! নেই বলেই এরপর শুরু শেষের অপেক্ষা। বাংলাদেশ কত বড় ব্যবধানে জেতে অথবা জিম্বাবুয়ে কত কম রানে হারে। ষষ্ঠ উইকেটে ৪৫ এবং নবম উইকেটে ৬৭ রানের জুটিতে সে ব্যবধানটা কমিয়েছে সফরকারীরা। ইনিংসের একেবারে শেষ বলে নিজের ফিফটি পূর্ণ করে অপরাজিত থাকেন শন উইলিয়ামস। কিন্তু বাংলাদেশের হেরে যাওয়ার সামান্যতম শঙ্কাও জাগেনি কখনো। ৯ উইকেটে ২৪৩ রানে তাদের থামিয়ে শেষ পর্যন্ত ২৮ রানের জয় বাংলাদেশের। স্বাচ্ছন্দ্য এ জয়ে কিছুটা হয়তো আড়াল লিটন-ফজলে-মুশফিক-মাহমুদদের ব্যাটিং ব্যর্থতা। মিঠুনের থিতু হয়ে বড় ইনিংস খেলতে না পারার অক্ষমতা; মাশরাফির উইকেটহীন খরুচে বোলিংও (১০-০-৫৫-০)। কিন্তু ওসব ব্যর্থতার বেদীতে তো আবার বাংলাদেশের বড় দল হয়ে ওঠার কীর্তিস্তম্ভ গড়ার সদম্ভ ঘোষণাও আছে। বিরুদ্ধ স্রোতে সাঁতার কেটেও যারা বিজয়ের সুবর্ণতীর খুঁজে নিতে পারে ঠিকঠাক। পাল্টে যাওয়া সময়ে এই দ্বৈরথের উল্টে যাওয়া আবহ সুরটারও জানান দেয় আরেকবার। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তো আর ‘শিকার’ হয়ে নেই বাংলাদেশ; এখন তাঁরা শিকারিই।





আরো খবর