বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, বাবা হলে নাকি পুরুষ বদলে যায়। কারণ তখন তার ওপর অনেক দায়িত্ব এসে পড়ে।
দায়িত্বশীবোধের সৃষ্টি হয়। ইমরুল কায়েসের ক্ষেত্রেও কি সেটাই হলো? মাত্র কয়েকদিন আগে বাবা হয়েছেন ইমরুল। আজ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুর্দান্ত সেঞ্চুরির পর ব্যাটটা কোলে নিয়ে দোলালেন। ঠিক ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার বেবেতোর সেই বিখ্যাত গোল উদযাপনের মতো সন্তানের জন্য সেঞ্চুরি উৎসর্গ করলেন ইমরুল। এই ঝড়ো সেঞ্চুরিটাই তার ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস।
বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্ভাগা ক্রিকেটার বলা হয় ইমরুল কায়েসকে। ১০ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। কিন্তু দলে জায়গা পাকা করতে পারেননি। থাকেন আসা-যাওয়ার মাঝে।
জাতীয় দলও তাকে যেমন আঁকড়ে ধরে না তেমন ছেড়েও দেয় না। কারণ ইমরুলের প্রয়োজন জাতীয় দলে এখনও আছে। একসময়ের এই ওপেনার বহুদিন ধরেই হুটহাট সুযোগ পান দলে; পরেক্ষণেই বাদ পড়েন। সর্বশেষ কয়েকঘণ্টার নোটিশে দুবাইয়ে এশিয়া কাপ খেলতে গিয়ে ভালো ব্যাটিং করেছিলেন। পুরস্কার স্বরূপ হয়তো জিম্বাবুয়ে সিরিজে নিজের প্রিয় ওপেনিং পজিশন ফিরে পেলেন।
সন্তান জন্মের পর প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই আজ যেন সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে নিলেন ইমরুল। ইনিংস শুরু করতে নেমে আউট হলেন ৪৯তম ওভারের চতুর্থ বলে। ততক্ষণে তিনি খেলে ফেলেছেন ১৪০ বলে ১৩ চার ৬ ছক্কায় ১৪৪ রানের মহিমান্বিত ইনিংস। যা তার ক্যারিয়ার সেরা এবং তিন নম্বর সেঞ্চুরি। সাইফউদ্দিনকে নিয়ে ৭ম উইকেটে গড়েছেন ১২৭ রানের রেকর্ড জুটি। রাজার মতো একাই জিম্বাবুয়েকে শাসন করেছেন তিনি। পরিস্থিতি যখন যা দাবি করছিল, তখন ঠিক সেটাই করে যাচ্ছিলেন তিনি। এই দাপট এর আগে কখনই দেখা যায়নি ইমরুলের ব্যাটে!
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস যে, ইমরুলকে নিজের জায়গার জন্য লড়াই করতে হয়। তার খেলার স্টাইল এবং ধারাবাহিকতার অভাব এর জন্য দায়ী। ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত ১৮ ওয়ানডে খেলার সুযোগ পেয়েছেন, গড় ৪৭.২৫। এই সময়ে খেলা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে গড়ে তাঁর ওপরে শুধু আছেন তামিম ইকবাল (৬১.৬৪)। বহুদিন ধরে তামিমের যোগ্য উত্তরসূরি খুঁজছে বাংলাদেশ। কেউ থিতু হতে পারছে না। ইমরুলও পারেননি। বাবা হওয়ার পর নতুন উদ্যমে তিনি কি পারবেন পুরনো জায়গাটি দখল করতে?