দিনের পর দিন দরপতনই হচ্ছে শেয়ারবাজারে। কোনোভাবেই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরছে না বাজারে। কোনোভাবেই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে না বাজার। মুনাফা দূরে থাক, নিজের বিনিয়োগের টাকা ধরে রাখতেই হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
শেয়ারবাজারের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রাতিষ্ঠানিক থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। শেয়ারবাজারে মূল মার্কেটের পাশাপাশি আইপিওতেও অস্থিরতা চলছে। নানা ঘটনার পরে এখনো বাজারে ভুয়া কোম্পানির শেয়ারের আইপিও আসছে।
এসব কোম্পানির ভবিষ্যৎ নিয়ে বাজার-সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি শুরু হয়েছে ২০১০ সালের কারসাজির অন্যতম পদ্ধতি প্লেসমেন্ট বাণিজ্য। কারা কিনছে, কীভাবে কিনছে কেউ জানতে পারছে না প্লেসমেন্ট নিয়ে। এর ফলে লগইন উঠে যাওয়ার পরই কিছু কোম্পানির উদ্যোক্তারা শেয়ার মূল মার্কেটে বিক্রি করে চলে যাচ্ছেন। কোম্পানির ১০ টাকার শেয়ার চলে আসছে ফেসভ্যালুর নিচে।
জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে কিছুটা উল্লম্ফন দেখা যায় শেয়ারবাজারে। কিন্তু ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে এসে ধসে পড়তে শুরু করে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেরই শেয়ারদর কমেছে এই কয়েক দিনে। ধারাবাহিক দরপতনের কারণে গত এক মাসে বাজার মূলধন দুই হাজার কোটি টাকা কমেছে। ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি মাসে শেয়ারবাজার কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও গত ফেব্রুয়ারি থেকে তা নিম্নমুখী প্রবণতায় চলে আসে।
বছরের তৃতীয় মাস মার্চে বাজার পুরোপুরি অস্থিরতায় লেনদেন হয়। সর্বশেষ লেনদেনে দেখা গেছে, ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫০২ পয়েন্টে। অপর দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৪ পয়েন্ট ও ডিএসই-৩০ সূচক ১১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১২৮১ ও ১৯৬৮ পয়েন্টে। টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৩৫৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা গত ৩ মাস ৯ দিন বা ৬৪ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর এর চেয়ে কম লেনদেন হয়েছিল। ওই দিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৩৩৪ কোটি টাকার। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৪৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ১২১টির বা ৩৫ শতাংশের, দর কমেছে ১৬৫টির বা ৪৮ শতাংশের এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৬১টির বা ১৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির শেয়ারদর এক মাস ধরে কমেছে ১০ থেকে ২০ শতাংশ। ২০১০ সালে ভয়াবহ ধসের পর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আইপিওর মাধ্যমে মুনাফা করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু চলতি বছর শেয়ারবাজারে নতুন আসা সব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার পর শেয়ারদর কমেছে। এই সময় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত শতাধিক কোম্পানির শেয়ারদর ফেসভ্যালু বা অভিহিত মূল্যের কাছাকাছি। অভিহিত মূল্যের নিচে রয়েছে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, প্রকৌশল, খাদ্যসহ সব খাতের কোম্পানির। কোম্পানি চলছে না কিন্তু বাজারে লেনদেন হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা এসব ভুয়া অতিরঞ্জিত আর্থিক প্রতিবেদন দিয়ে টাকা তুলছে। ফেসভ্যালুর নিচে শেয়ারদর রয়েছে এমন কোম্পানি সিএনএ টেক্স, ঢাকা ডায়িং, ডেল্টা স্পিনিং, ফ্যামিলি টেক্স, জেনারেশন নেক্সট, ম্যাকসন স্পিনিং, মেট্রো স্পিনিং, আরএন স্পিনিং, তাল্লু স্পিনিং, তুং হাই, জাহিন টেক্স, অ্যাপোলো ইস্পাত, গোল্ডেন সন, বিআইএফসি, ফারইস্ট ফিন্যান্স, ফাস ফিন্যান্স, ফার্স্ট ফিন্যান্স, পিএলএফএসএল, প্রিমিয়ার লিজিং, জিবিবি পাওয়ার, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স, বিএক্স সিনথেটিক, কেয়া কসমেটিক্স। কোম্পানিগুলো নিজেদের মতো শেয়ার বিক্রি করে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে গত এক বছরে। কারসাজি-অনিয়মের দায়ে একাধিকবার এসব কোম্পানির পরিচালকদের জরিমানাও করেছে বিএসইসি।