বিজ্জান ও প্রযুক্তি / ব্ল্যাকহোলের প্রথম ছবি আলোয় আনার কৃতিত্ব যার সবচেয়ে বেশি
শুক্রবার, ১২ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:৫০:৩৯ পূর্বাহ্ন
ব্ল্যাকহোলের প্রথম ছবি আলোয় আনার কৃতিত্ব যার সবচেয়ে বেশি
মহাকাশের এক অনন্ত বিস্ময় ব্ল্যাকহোল। মহাকাশীয় এই দানবের কাছে পথ হারায় আলোকতরঙ্গ। নিকষ কালো অন্ধকার সংসার নিয়েই বেঁচে থাকে ব্ল্যাকহোল। মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় মহাজাগতিক বিস্ময় ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর।
প্রথমবারের মতো এই ‘ব্ল্যাকহোল’ বা কৃষ্ণগহবরের ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে এই কৃষ্ণগহবরের ছবি তোলার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন কেটি বাউম্যান নামে এক নারী। ২৯ বছর বয়সী এই নারী একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী।
অ্যালগরিদম পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ব্ল্যাক হোলের ছবি তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন কেটি বাউম্যান।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মহাকাশ গবেষণা বিষয়ক সাময়িকী অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নালে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়েছে। আনুমানিক ৫০০ মিলিয়ন ট্রিলিয়ন কিলোমিটার দূরের সেই ব্ল্যাকহোলের ছবি তোলা হয়েছে বিশ্বব্যাপী আট টেলিস্কোপের মাধ্যমে।
বিবিসি বলছে, গ্যালাক্সিটি পৃথিবী থেকে চার হাজার কোটি কিলোমিটার দূরে অবিস্থিত। আর আয়তনে সেটি পৃথিবীর থেকে ৩০ লাখ গুণ বড়। বিজ্ঞানীরা এটিকে বর্ণনা করেছেন ‘মনস্টার’ বা দৈত্য হিসেবে।
নাসার প্রকাশ করা এই কৃষ্ণগহবরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি বৃত্তাকার কালো আভার চারিদিকে এক উজ্জ্বল আগুনের বলয়। পৃথিবীর নানাপ্রান্তে বসানো আটটি রেডিও টেলিস্কোপের এক নেটওয়ার্কের সাহায্যে এই ছবি তোলা সম্ভব হয়েছে। একক টেলিস্কোপের সাহায্যে কৃষ্ণগহবরের ছবি তোলা সম্ভব ছিল না বিজ্ঞানীদের। কৃষ্ণগহবরটির দেখা মিলেছে এমএইটসেভেন নামের একটি বহু দূরবর্তী গ্যালাক্সি বা ছায়াপথের মধ্যে। পৃথবী থেকে এই কৃষ্ণগহবরের দূরত্ব ৫০ কোটি ট্রিলিয়ন কিলোমিটার দূরে এবং এটির ভর সূর্যের চেয়ে ৬৫০ কোটি গুণ বেশি।
এস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্সে এই আবিষ্কারের বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে। নিজের ল্যাপটপে কৃষ্ণগহবরের ছবি তৈরি করার পর নিজেই বিস্মিত হন কেটি বাউম্যান। নিজের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে কেটি বাউম্যান ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, অ্যালগরিদমকে কাজে লাগিয়ে যখন এই ছবিটি প্রথম যখন দেখি তখন নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছিল না। মজার বিষয় হলো, কেটি বাউম্যান প্রথম যখন অ্যালগরিদমটি তৈরি করেছিলেন তিন বছর আগে, তখন তিনি ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) স্নাতকের শিক্ষার্থী ছিলেন। বর্তমানে এমআইটিতে ইভেন্ট হোরিজন টেলিস্কোপ প্রজেক্টে পোস্ট ডক্টরাল ফেলো। সামনেই কালটেক’স কম্পিউটিং এন্ড ম্যাথামেটিক্যাল সাইন্স ডিপার্টমেন্টে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেবেন। তিন বছর ধরে এমআইটির কম্পিউটার সাইন্স এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণাগারের গবেষক দলের অধীনে একটি প্রকল্পে কাজ করে এই সাফল্য লাভ করেন কেটি।
এই প্রকল্পে ২০০’র বেশি বিজ্ঞানী কাজ করলেও কৃষ্ণগহবরের ছবিটি প্রকাশের পর আন্তর্জাতিক হিরো বনে গেছেন কেটি। টুইটারে তার প্রশংসায় ভাসছে মানুষ। অনেকেই তাকে অভিবাদন এবং ধন্যবাদ জানিয়েছেন।