নিজের অবস্থান থেকে পিছু হটেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে করা দুটি মামলায় তার সম্পৃক্ততা নেই জানিয়ে তাপস বলেছেন, ‘দুজন আইনজীবী অতি উৎসাহী হয়ে মামলা করেছেন। আমি তাদেরকে অনুরোধ করব, তারা যেন মামলা প্রত্যাহার করে নেন। তিনি আরও বলেন, মধুমতি ব্যাংকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের টাকা রাখায় আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।’ গতকাল সাকরাইন ঘুড়ি উৎসব-১৪২৭ উপলক্ষে নগর ভবনের মেয়র হানিফ অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে সোমবার সকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র তাপস বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের (সাঈদ খোকনের) পরিপ্রেক্ষিতে অবশ্যই এটা মানহানিকর হয়েছে। আমি এ ব্যাপারে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে পারি।’ ওইদিনই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে নিয়ে মানহানিকর বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা আবেদন করা হয়। মামলা দুটি করেন কাজী আনিসুর রহমান ও অ্যাডভোকেট মো. সারোয়ার আলম।
মামলার পরে সারোয়ার আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস সম্পর্কে ৯ জানুয়ারি সাঈদ খোকন মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন, যা গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। যে কারণে সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছি।’
এদিকে গতকাল গণমাধ্যমে নতুন করে কোনো কথা বলেননি সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। সাবেক এই মেয়র তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের জানিয়েছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চেতনা, শেখ হাসিনার আদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাই আমার আস্থা ও বিশ্বাস। তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নে এখন থেকে সক্রিয়ভাবে মাঠে কাজ করতে চাই। নেত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে সংগঠন করতে চাই। এই মুহূর্তে আর কিছু নিয়ে ভাবছি না। এদিকে বর্তমান ও সাবেক মেয়রের মধ্যে বাগ্যুদ্ধ ‘আপাত’ দৃষ্টিতে বন্ধ হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে ক্ষমতাসীন দলে। নীতিনির্ধারকরা বলছেন, তাঁরা দুজনই ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান। উভয়কে সংযত হওয়ার পরামর্শ তাদের। গত শনিবার নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে বক্তব্য রাখায় পুরান ঢাকার নেতা-কর্মীদেরকে চাঙাভাব দেখা গেছে। সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডেও প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। এর অংশ হিসেবে গতকাল ঢাকাবাসীর ব্যানারে মানববন্ধন করা হয়েছে। আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজপথেও মোকাবিলার প্রস্তুতির ঘোষণা ছিল সাঈদ খোকনের। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুটি মামলার আদেশ প্রদানের দিন ধার্য ছিল গতকাল। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী দিন পিছিয়ে আগামী ১৯ জানুয়ারি এই দিন ধার্য করেন। এদিকে আইনি লড়াইয়ের জন্য গতকাল আদালত পাড়ায় সাঈদ খোকনের আইনজীবীরাও সতর্ক ছিলেন। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে মেয়র তাপস বলেন, ‘গতকাল যে দুটি মামলা হয়েছে তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। দুজন আইনজীবী অতি উৎসাহী হয়ে মামলা করেছেন। আমি তাদেরকে আনুরোধ করব তারা যেন মামলা প্রত্যাহার করে নেন।’ তাপস আরও বলেন, ‘গত ৯ জানুয়ারি সাঈদ খোকন যে বক্তব্য দিয়েছেন তা মানহানিকর হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। তাই তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতে পারি, গতকাল আমি সংবাদমাধ্যমকে এ কথা জানিয়েছিলাম। কিন্তু কে বা কারা আমাকে না জানিয়ে সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশের মানুষ বিষয়টাকে হাস্যকর হিসেবে নিচ্ছে। এর আগেই আমি বলেছি। একটি দায়িত্ববান পদে থাকলে অনেকেই অনেক কথা বলবে।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের টাকা নিজের মালিকানাধীন মধুমতি ব্যাংকে রাখার বিষয়ে সাঈদ খোকনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এক প্রশ্নের জবাবে তাপস বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকারের নিয়ম মেনেই মধুমতি ব্যাংকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের টাকা রাখা হয়েছে। এখানে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। আমি মেয়র পদে আসার আগে থেকে মধুমতি ব্যাংকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের টাকা রাখা হচ্ছে।’ এ সময় সাঈদ খোকনকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘মার্কেটসংক্রান্ত কিছু তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সেখানে বিভিন্নভাবে টাকা লেনদেন হয়েছে। যাদের সঙ্গে টাকা লেনদেন হয়েছে, যারা লেনদেন করেছেন, তারাই অভিযোগ এনেছেন। ...আমরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অথবা আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনোভাবেই কোনো অভিযোগ আনিনি।’ প্রসঙ্গত, গত শনিবার রাজধানীতে এক মানববন্ধনে সাঈদ খোকন বলেছেন, ‘তাপস দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শত শত কোটি টাকা তার নিজ মালিকানাধীন মধুমতি ব্যাংকে স্থানান্তরিত করেছেন এবং শত শত কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লাভ হিসেবে গ্রহণ করছেন।’
‘সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ : এদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ও সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে গতকাল আমরা ঢাকাবাসীর ব্যানারে রাজধানীর বাহাদুরশাহ পার্ক প্রাঙ্গণে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাদেক মিঠুর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক সদস্য ওমর আলী, মোহাম্মদ সাজেদ ব্যাপারী, যুবলীগ নেতা মোখলেসুর রহমান রোমেল, জাকির হোসেন দিপু প্রমুখ। সভায় বক্তারা বলেন, ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে একটি উৎসাহী মহলের আবেদনকৃত মামলাগুলো ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। এটি একটি ‘মিথ্যা’ মামলা উল্লেখ করে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানান বক্তারা। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর জজ কোর্ট প্রাঙ্গণ, জনসন রোড, রায় সাহেব বাজার, নর্থ সাউথ রোড প্রদক্ষিণ করে সুরিটোলায় এসে শেষ হয়। এ সময় সাঈদ খোকনের ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই; সাঈদ খোকনের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে; সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, করতে হবে; স্লোগানে মুখোরিত ছিল বিক্ষোভকারীদের।