করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমাতে সরকারের ঘোষিত কঠোর লকডাউনেও মৃত্যু এবং সংক্রমণ কমছে না। চলতি বছরের জুলাইয়ে ৫ হাজার ৫০৩ জন করোনায় মারা গেছেন আর করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৭২৪ জন।
বুধবার (২৮ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত চব্বিশ ঘণ্টায় দেশে ২৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ২০ হাজার ১৬ জনে। আর গত চব্বিশ ঘণ্টায় ৫৩ হাজার ৮৭৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ১৬ হাজার ২৩০ জনের। এ নিয়ে দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে ১২ লাখ ১০ হাজার ৯৮২ জনে।
চলতি মাসের মাত্র চার দিনে আরও এক হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিল এ ভাইরাস। জুলাইয়ের শুরু থেকে ১৪ দিন সারা দেশে কঠোর লকডাউনের পর কোরবানির ঈদের বিরতি দেওয়া হয়েছিল নয় দিন। বিশেষজ্ঞরা তাতে বড় ধরনের ঝুঁকি দেখার কথা বলেছিলেন।
ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে আবার সারা দেশে বিধিনিষেধ চললেও সেই শঙ্কা সত্যি করে নিত্যনতুন রেকর্ড হচ্ছে প্রতিদিন। গত সোমবার দেশে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ১৯২ জন নতুন রোগী শনাক্তের পাশাপাশি ২৪৭ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মঙ্গলবার শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে কিছুটা কমলেও এক দিনে ২৫৮ জনের মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হয়। বুধবার মৃত্যুর সংখ্যা আড়াইশর সামান্য নিচে নামলেও ১৬ হাজারের বেশি রোগী শনাক্তের নতুন রেকর্ড বাংলাদেশকে দেখতে হল।
গত এক দিনে শুধু ঢাকা বিভাগেই ৮ হাজার ২৭১ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে যা দিনের মোট আক্রান্তের অর্ধেকের বেশি। আর এই সময়ে যে ২৩৭ জন মারা গেছেন, তাদের ৭০ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের। চট্টগ্রাম বিভাগে ৬২ জন এবং খুলনা বিভাগে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪১ লাখ ৮০ হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ১৯ কোটি ৫৪ লাখের বেশি রোগী।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে। সেই থেকে করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্ত বেড়ে চলছে। গত এক দিনে ঢাকা জেলায় দেশের সর্বোচ্চ ৬ হাজার ২৬৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিভাগের ফরিদপুরে ১৬১ জন, গাজীপুরে ৩০৩ জন,কিশোরগঞ্জে ১২২ জন, মানিকগঞ্জে ১৯২ জন, মুন্সিগঞ্জে ১৩২ জন, নরসিংদীতে ১৮১ জন, নারায়ণগঞ্জে ২০০ জন, রাজবাড়ীতে ১২৪ জন, শরীয়তপুরে ২০২ জন এবং টাঙ্গাইল জেলায় ১৯৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৯১৫ জন, কক্সবাজারে ৩২৬ জন, ফেনীতে ১৯৪ জন, নোয়াখালীতে ২৫১ জন, চাঁদপুরে ২২৯ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩০২ জন এবং কুমিল্লায় ৮৫৩ জন আক্রান্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।
রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলায় ২১৮ জন, পাবনায় ২০৯ জন, সিরাজগঞ্জে ১৯৮ জন এবং বগুড়ায় ১০৬ জন নতুন রোগী পাওয়া গেছে গত একদিনে। খুলনা বিভাগের মধ্যে বাগেরহাটে খুলনা জেলায় ১৭৬ জন এবং কুষ্টিয়ায় ২২৭ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন গত ২৪ ঘণ্টায়।
অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহে ৪৪০ জন, বরিশালে ২৮৮ জন, পটুয়াখালীতে ১৬৮ জন, ভোলায় ১৭৬ জন, সিলেটে ৩৪১ জন, সুনামগঞ্জে ১১৬ জন, মৌলভীবাজারে ২২৫ জন এবং রংপুরে ১৮৬ রোগী শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়।ঢাকা বিভাগে গত এক দিনে যে ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ৩৭ জনই ছিলেন ঢাকা জেলার। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া ৬২ জন জনের মধ্যে ১৭ জন চট্টগ্রামের এবং ১৮ জন কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা ছিলেন।
এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ২১ জন, খুলনা বিভাগে ৩৪ জন, বরিশাল বিভাগে ৯ জন, সিলেট বিভাগে ১৮ জন, রংপুর বিভাগে ১৬ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৭ জনের মৃত্যু ঘটেছে গত এক দিনে।
মৃত ২৩৭ জনের মধ্যে ১৩৯ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ৪৪ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৩৪ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১১ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং ৯ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল।
তাদের মধ্যে ১৪৯ জন ছিলেন পুরুষ, ৮৮ জন ছিলেন নারী। ১৬৭ জন সরকারি হাসপাতালে, ৫৭ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ১৩ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।