শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ | ০৪:০৬ অপরাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


বুধবার, ২৮ জুলাই ২০২১ ০৫:৩৯:২৫ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

সারাদেশে আইসিইউর জন্য হাহাকার

করোনা রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে আইসিইউর চাহিদা। তবে সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালেই একই চিত্র। কোথাও নেই আইসিইউ বেড। একটি আইসিইউ বেডের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ জন রোগীকে।

করুণ বাস্তবতা হচ্ছে, একজন রোগীর মৃত্যুর পরই কেবল আইসিইউ বেড পাচ্ছে অপেক্ষারত রোগীদের কেউ কেউ। বিভাগীয় অফিস, স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।

বরিশাল: 
দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষের জন্য নিবিড় পরিচর্চা কেন্দ্রের (আইসিইউ) ভেন্টিলেটর রয়েছে মাত্র ৩৩টি। এর মধ্যে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) করোনা ওয়ার্ডে ২২টি, ভোলা জেলায় ৬টি এবং পটুয়াখালীতে পাঁচটি। শের-ই-বাংলার করোনা ওয়ার্ডের ৩০০ বেডসহ মোট ৬৪৫টি আইসোলেশন বেডের ব্যবস্থা থাকলেও সেন্ট্রাল অক্সিজেন সেবা অপ্রতুল।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, বরিশাল শের-ই-বাংলার করোনা ওয়ার্ডে ৯৭টি সেন্ট্রাল অক্সিজেন বেড, ১০টি হাইফ্লোনাজাল ক্যানোলা বেডের বাইরে পাঁচ জেলার হাসপাতালগুলোতেও সেন্ট্রাল অক্সিজেন রয়েছে। 

তবে ভুক্তভোগীরা জানান, শের-ই-বাংলার বাইরে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সেবা তেমন একটা নেই। বিভাগের একমাত্র শের-ই-বাংলা ভরসাস্থল হওয়ায় সেখানকার ৩০০ বেডের সবগুলোতেই মুমূর্ষু রোগী ভর্তি থাকছে। সিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন সেবা নেওয়া মুমূর্ষু রোগীদের ক্ষেত্রে প্রায়ই ঘটছে বিপর্যয়।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, আইসিইউর চেয়ে মুমূর্ষু রোগী কয়েকগুণ বেশি হওয়ায় এ হাসপাতালে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছেই। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সেবা কিংবা আইসিইউর জন্য রাজনৈতিক, প্রশাসনিক তদবির বাড়ছে।

শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের মাত্র একজন চিকিৎসক দিয়ে এবং ৪০ নার্সকে প্রশিক্ষণ দিয়ে করোনা ওয়ার্ডের আইসিইউ সেবা চালু রাখা হয়েছে।

বরিশাল বিভাগে করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গে গত ২৪ ঘণ্টায় ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে পিরোজপুরে চার জন, পটুয়াখালীতে দুই জন, বরগুনায় দুই জন এবং ঝালকাঠীতে এক জন মারা যান।

খুলনা: 
করোনা রোগীদের জন্য খুলনার পাঁচটি হাসপাতালে ৫০টি আইসিইউসহ ৫১৫টি শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে খুলনা ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে ২০টি, শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ১০টি এবং বেসরকারি অপর দুটি হাসপাতালে ২০টি আইসিইউ রয়েছে।

খুলনার হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড ফাঁকা না থাকায় এ অঞ্চলের মুমূর্ষু করোনা রোগীরা এখন রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ছুটছেন। গত পাঁচ দিনে খুলনার পাঁচটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

তবে হাসপাতালের পরিচালক ডা. রবিউল হাসান বলেন, আইসিইউ সিট খালি না থাকলেও আমাদের এইচডিইউ শয্যা ফাঁকা রয়েছে। ফলে কোনো রোগীর চিকিৎসা না পাওয়ার কোনো কারণ নেই। কোনো রোগী আইসিইউ সিট না পেয়ে ঢাকায় চলে গেছে—এ ধরনের কোনো সংবাদ আমার জানা নেই।

চট্টগ্রাম: 
নগরীতে সরকারি হাসপাতালে ৪৩টি এবং বেসরকারি হাসপাতালে ১১৯টি আইসিইউ বেড থাকলেও এর একটিও ফাঁকা নেই। সিভিল সার্জন কার্যালয় জানায়, চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসারর জন্য সরকারি হাসপাতালে ১ হাজার ১৪৪টি ও বেসরকারি হাসপাতালে ২ হাজার ৭২৮টি বেড রয়েছে। তার মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৪৯৪ জন ও বেসরকারি হাসপাতালে ৮৫৬ জন করোনা রোগী ভর্তি রয়েছেন।

অন্যদিকে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা রয়েছে সরকারি ১২টি ও বেসরকারি ১৪টি হাসপাতালে। হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা রয়েছে সরকারিতে ৪৭টি ও বেসরকারিতে ১২৪টি। অক্সিজেন কনসেনট্রেটর সরকারিতে ৬৯টি ও বেসরকারিতে ২৪টি।

চমেক হাসপাতালে করোনা রোগীর জন্য ৩০০ বেড ও ১০টি আইসিইউ রয়েছে। আইসিইউতে কোনো বেড খালি নেই। ফৌজদারহাট বিআইটিআইডিতে ৫০টি সাধারণ ও পাঁচটি আইসিইউ বেড রয়েছে। এতে সব মিলিয়ে ৪৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। ১৫০ শয্যার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে শতাধিক করোনা রোগী ভর্তি রয়েছে।

মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৩ হাজার ৩৮৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ১ হাজার ৩১০ জনের করোনা পজিটিভ হয়েছে। তার মধ্যে মহানগরী এলাকায় ৮৩৩ জন ও উপজেলায় ৪৭৭ জন। আর মারা গেছে সর্বোচ্চ ১৮ জন। এত মৃত্যু ও শনাক্ত আগে আর হয়নি।

রাজশাহী: 
বিভাগের তিন হাসপাতালে মোট আইসিইউর সংখ্যা ৫৮টি। এর মধ্যে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ২০টি। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২০টি, মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল, বগুড়ায় আটটি এবং ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস) মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ বেড রয়েছে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. হাবিবুল আহসান তালুকদার বলেন, রামেক হাসপাতালে ২০টি আইসিইউ থাকলেও প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ জন রোগী আইসিইউর জন্য অপেক্ষা করেন।

এদিকে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে করোনা পজিটিভ ১০ জন এবং উপসর্গে ১১ জন মারা যান।

রংপুর: 
রংপুর করোনা ডেডিকেটেড আইসোলেশন হাসপাতালে রোগীদের জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শয্যা ফাঁকা নেই। ১০০ শয্যার এ হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে ৯১টির। এর মধ্যে ৯০টি শয্যায় রোগী ভর্তি আছে। রংপুর বিভাগের আট জেলায় দেড় কোটি মানুষের জন্য আইসিইউ শয্যা রয়েছে মাত্র ২৬টি। এর মধ্যে রংপুর ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে ১০টি ও দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে আছে ১৬টি আইসিইউ বেড। রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. হিরন্ময় কুমার রায় তথ্য নিশ্চিত করেন।

রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. মোতাহারুল ইসলাম এক প্রেসবার্তায় জানান, বিভাগের আট জেলায় ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রংপুরের চার জন, ঠাকুরগাঁওয়ের দুই জন, পঞ্চগড়ের দুই জনসহ দিনাজপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার এক জন করে রয়েছেন। এ সময়ে বিভাগে ১ হাজার ৭৭১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৮৩৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, আইসিইউ সংকট মোকাবিলায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

ময়মনসিংহ : 
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনে শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধি করে সাড়ে ৪০০-এ উন্নীত করা হয়েছে। এর মধ্যে আইসিইউ শয্যা ২০টি। তবু আইসিইউ শয্যার সংকট রয়েই গেছে। একজন মুমূর্ষু রোগীর স্বজন জানান, সারা দিন অপেক্ষায় আছেন আইসিইউ শয্যার জন্য। খালি না হওয়া পর্যন্ত তিনি তার ভাইকে আইসিইউ শয্যায় স্থানান্তর করতে পারছেন না। বর্তমানে গড়ে প্রতিদিনই ৭০ থেকে ১০০ জন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন।

সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৩০০টি নমুনা পরীক্ষায় আরও ৩৩২ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ময়মনসিংহ মেডিক্যালের পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও শয্যা এবং অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

 সিলেট: 
সিলেটে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলে কোভিড চিকিৎসার জন্য রয়েছে প্রায় ৮০০ শয্যা। আইসিইউ শয্যা ১২১টি। এর মধ্যে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ৮৪টি সাধারণ ও ১৬টি আইসিইউ, ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তিনটি ওয়ার্ড মিলে ১৬৫টি সাধারণ ও আটটি আইসিইউ, খাদিমপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩১টি করে সাধারণ আইসোলেশন শয্যা রয়েছে।

এছাড়া সিলেটে বেসরকারি সব হাসপাতাল মিলে প্রায় সাড়ে ৪০০ সাধারণ ও ৯৭টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। কিন্তু কোথাও শয্যা খালি নেই। সিলেটে আইসিইউ শয্যার সংকটে হাহাকার করছেন করোনা আক্রান্ত জটিল রোগী ও তাদের স্বজনরা।

শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. চয়ন রায় জানান, হাসপাতালে কোনো শয্যা খালি নেই। কেউ সুস্থ হলে বা মারা গেলে তবেই নতুন রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে আইসিইউ না পেয়ে অনেক রোগী মারা যাচ্ছেন সিলেটে।

গত ২৪ ঘণ্টায় মঙ্গলবার আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭০৮ জন। সিলেট বিভাগে এক দিনে আক্রান্তের রেকর্ড এটি। সোমবার করোনায় ১৪ জন ও মঙ্গলবার সাত জন মারা গেছেন।

 
 





আরো খবর