বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আওয়াল, ১৪৪৬ | ০১:০৬ অপরাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


শুক্রবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১২:০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

দিনভর বিক্ষোভ, কান্না-আকুতি;

সৌদি সিদ্ধান্ত: ২৪ দিন বাড়লো আকামার মেয়াদ

ভিসা বা আকামার মেয়াদ শেষ হওয়ার আশঙ্কায় আন্দোলনরত আটকে পড়া সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য অবশেষে রিয়াদ থেকে সুখবর এসেছে। গতকাল সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অনেকগুলো ভালো খবর একসঙ্গে এসেছে। প্রথমত যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হতে চলেছে আগামী রোববার থেকে ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাস তাদের ভিসা রিনিউ বা নবায়ন করে দেবে। দ্বিতীয়ত: আকামার মেয়াদ শেষ হওয়ার আশঙ্কায় আগামী ৩০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে যাদের সৌদি আরবে প্রবেশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে তাদের জন্য গ্রেস পিরিয়ড দেয়া হয়েছে ২৪ দিন। অর্থাৎ চলতি সফর মাসের বাকি ২৪ দিনের মধ্যে তারা সৌদি আরবে প্রবেশ করবেন এবং সেই সময়ের মধ্যে কর্মস্থলে পৌঁছে আকামা নবায়ন করতে পারবেন। তৃতীয়ত: বাংলাদেশ যত ফ্লাইট চাইবে সৌদি আরব তা পরিচালনার অনুমতি দিতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে এবং ওই সব ফ্লাইটে বাংলাদেশিরা ফিরতে পারবেন। চতুর্থত: সাউদিয়া এয়ারলাইন্স যেসব ফ্লাইট পরিচালনা করতে চায় বাংলাদেশ তাদের সবক’টি ফ্লাইট চালানোর অনুমতি দেবে। শুধু তাই নয়, উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আগামী রোববার সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভার্চ্যুয়াল বৈঠক হবে।

সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই বৈঠকটি হোস্ট করছে। সেগুনবাগিচা বলছে, জটিলতা নিরসনের পর এখন প্রতিদিন সৌদি আরবে এক হাজার থেকে ১২ শ’ আটকে পড়া প্রবাসী ফিরতে পারবেন। সে হিসাবে ৩০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ১৫-১৬ হাজার প্রবাসী সৌদি পৌঁছাবেন। উল্লেখ্য, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন গণমাধ্যমকে সন্ধ্যায় জানান, সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটওয়ারী ঢাকাকে সৌদি সরকারের ইতিবাচক মনোভাবের বিষয়টি জানিয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের শ্রমিকদের আকামা নির্ধারিত সময়ের পর আরো ২৪ দিন বৈধ থাকবে এবং প্রয়োজনে আরো বাড়ানো হবে। সৌদি সরকার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অবতরণের অনুমতি দিয়েছে যা বাংলাদেশিদের সুষ্ঠুভাবে সেখানে ফেরাতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশ সরকারও সৌদি এয়ারলাইন্সকে এদেশে অবতরণ এবং বাংলাদেশিদের সৌদি আরবে নেয়ার অনুমতি দিয়েছে। এর আগে দেশে আটকা পড়াদের জন্য মোট তিন দফায় বাংলাদেশিদের আকামার মেয়াদ বাড়িয়েছে সৌদি সরকার। আকামার সর্বশেষ বর্ধিত মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ৩০শে সেপ্টেম্বর। এমন পরিস্থিতিতে আকামার মেয়াদ আরো তিন মাস বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি পাঠায় রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। সৌদি আরবে ফিরে যাওয়ার জন্য ভিসা ও আকামার মেয়াদ বাড়ানো এবং বিমানের টিকিটের ব্যবস্থা করার দাবিতে ক’দিন ধরে রাজধানীতে বিক্ষোভ করেছেন আটকে পড়া প্রবাসী শ্রমিকরা। তাদের একটাই কথা ছিল, ৩০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে কর্মস্থলে ফিরতে না পারলে আমরা চাকরি হারাবো। এই প্রেক্ষাপটে বুধবার সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন সৌদি আরবে ফিরতে আন্দোলনরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিশৃঙ্খলা করার পরিবর্তে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

বিমানের বিশেষ ফ্লাইট: সৌদি আরব থেকে ছুটিতে এসে আটকে পড়া প্রবাসীদের জন্য দুটি বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। আগামী ২৬শে সেপ্টেম্বর একটি ফ্লাইট জেদ্দার উদ্দেশ্যে এবং ২৭শে সেপ্টেম্বর আরেকটি ফ্লাইট রিয়াদের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে বলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাব্বির হোসেন জানিয়েছেন। যাদের রিটার্ন টিকিট কেটে রাখা ছিল তারাই এই ফ্লাইটে যেতে পারবেন। এই ফ্লাইটে বুকিংয়ের জন্য বিমানের সেলস অফিসে আগামী ২৪শে সেপ্টেম্বর যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হয়েছে বিমানের তরফে। ফ্লাইট অনুমোদন সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে অন্য যাত্রীদেরও বুকিংয়ের জন্য অবহিত করা হবে বলে বিমানের এমডি জানিয়েছেন। এই যাত্রীদের কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ সঙ্গে রাখতে হবে।

দিনভর বিক্ষোভ-কান্না: ‘পরিবারে সাতজন সদস্য। এই সাতজনের পেট চলে আমার আয়ে। ফেব্রুয়ারিতে দেশে এসে আটকা পড়ে যাই। এখন ঋণ করে চলছি। দেশে তো করার মতো কিছু নাই। এভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। টিকিট না পাইলে আত্মহত্যা করবো’- এভাবেই বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন নোয়াখালী থেকে আসা ইসমাইল হোসেন। টানা তৃতীয় দিনের মতো টিকিটের অপেক্ষায় প্রহর গুনেন সৌদি প্রবাসীরা। বুধবারও তারা রাজধানীর কাওরানবাজার-বাংলামোটর সড়ক অবরোধ করেন। তবে কিছু সময় পরই পুলিশের হস্তক্ষেপে তারা সড়কটি ছেড়ে দেন।

প্রবাসীদের দাবি, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সৌদি ফিরতে চান তারা। তারা এ বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। টিকিটপ্রত্যাশী আবুল হোসেন অভিযোগ করেন, রিটার্ন টিকিটসহ আসলেও এখন সেই টিকিটে যেতে পারছেন না। আবার টিকিট নির্ধারিত দামেও পাচ্ছেন না।
স্ত্রী ও মায়ের গহনা বিক্রি করে সৌদিতে গিয়েছিলেন রাজন ইসলাম। তিনি বলেন, এখন যদি টিকিট না পাই, কাজে যেতে না পারি, বাড়িঘর বিক্রি করে দিতে হবে। আমার বাবা নাই। বাবার শেষ স্মৃতি মায়ের গহনাও বিক্রি করে দিলাম। ছেলে হিসেবে এটা আমার জন্য লজ্জার।

সড়কের ধারে ব্যাগ মাথায় দিয়ে শুয়ে ছিলেন আবুল হাসনাত। তিনি সৌদি আরবের রিয়াদে পেট্রোল পাম্পে কাজ করেন। দেশে করোনার আঘাত হানার আগেই দেশে ছুটিতে এসেছিলেন তিনি। তার শরীর বেশ খারাপ। ব্যাগে থাকা কাঁথা গায়ে দিয়ে শুয়েছিলেন। কথা বলবার মতো শক্তিটাও যেনো নেই। বলেন, ‘ভাইরে আমরা কি চুরি করতে চাইছি। এমনভাবে আমাদের মানসিক নির্যাতন করতেছে। আমরা তো দেশের জন্যই কাজ করি।’

তিনি আরো বলেন, আমাদের দাবি যাতে আমরা সুষ্ঠুভাবে সৌদিতে যেতে পারি। তিনদিন যাবৎ এখানে অপেক্ষা করছি কোনো শিডিউল নাই। আমাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩০ তারিখ। আবার টিকিট বিক্রি করছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত।
শুধু তাই নয়, অনলাইনে টিকিট কেটেও দ্বিধায় আছেন অনেকে। মানিকগঞ্জ থেকে আসা জলিল মিয়া বলেন, বিমানের টিকিট কাটছি অনলাইনে কিন্তু কোনো শিডিউল পাচ্ছি না। ২৬ তারিখ একটা শিডিউল ছিল সেটাও আর নেই।

শাহনাজ বেগম গৃহকর্মীর কাজ করেন। তাকে বারবার তাগাদা দিচ্ছেন সৌদিতে ফিরে যাবার জন্য। আজ (গতকাল) আমাদের ডাকা হইলো কিন্তু কোনো কথা বলছে না তারা। আমার স্বামী নাই। আমার টাকায় ছেলেমেয়ে, বৃদ্ধ বাবা-মায়ের খোরাক চলে। আমি না গেলে না খেয়ে মরতে হবে। ছেলেমেয়ে দুটোর লেখাপড়াও করা হবে না।






আরো খবর