শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল, ১৪৪৫ | ০১:২৬ পূর্বাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


বুধবার, ০১ জুলাই ২০২০ ০২:১১:৫৬ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

২০ কোটি টাকা ব্যয়ের অভিযোগ সত্য নয়: ঢামেক পরিচালক

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এক মাসের থাকা খাওয়া বাবদ ২০ কোটি টাকা বিল করা হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা সত্য নয় বলে দাবি করেছেন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেছেন, বিলের বিষয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এতে আমরা অত্যন্ত অপমান বোধ করছি এবং দুঃখ পেয়েছি। যারা মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন তাদের বিচার দাবি করেছেন তিনি। মঙ্গলবার হাসপাতালে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ দাবি করেন। উল্লেখ্য, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগীদের সেবাদানকারী চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এক মাসে খাবারের বিল ২০ কোটি টাকা হয়েছে বলে সম্প্রতি খবর ছড়িয়ে পড়ে। এত ব্যয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আলোচনা হচ্ছে। সোমবার বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের সংসদে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ২০ কোটি টাকা বিলের প্রসঙ্গ তোলেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধী দলের উপনেতা ঠিকই বলেছেন, থাকা-খাওয়া বাবদ মেডিক্যাল কলেজের হিসাব অনুযায়ী ২০ কোটি টাকা ব্যয় একটু বেশিই মনে হচ্ছে। তবে এটা আমরা তদন্ত করে দেখছি, এত অস্বাভাবিক কেন হবে। এখানে কোনো অনিয়ম হলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। জানা গেছে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিসাব অনুযায়ী করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত সেখানকার চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের দুই মাসে ব্যয় এক লাখ টাকা। এটা থাকা-খাওয়া এবং যানবাহনের খরচ। এ কারণে তারা দুই মাসের জন্য বরাদ্দ পেয়েছেন ২০ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর অর্থ মন্ত্রণালয়ও এই বরাদ্দ পাস করেছে। পরিচালক নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ২ মে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে করোনা রোগীদের চিকিৎসা শুরু হয়। এরপর ১৬ মে হাসপাতালের নতুন ভবনে করোনা রোগীদের ভর্তি শুরু হয়। এখনো ৭শর মতো করোনা রোগী প্রতিদিন ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের জন্য ডাক্তার নার্স স্টাফ টেকনিশিয়ান আনসার কাজ করছেন। ডাক্তার এবং নার্সরা ৭ দিন ডিউটি করছেন এবং ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিন পালন করছেন। কর্মচারী ও আনসার সদস্য কম থাকায় তারা ১৫ দিন ডিউটি করছেন এবং ১৫ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকছেন। গতকালকেও ১৯শর মতো স্বাস্থ্যকর্মী ৩ ব্যাচে হোটেলে ছিল। এইসব ম্যানপাওয়ায়ের জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরির ত্রিশটি হোটেল রাখা হয়েছে। এসব দেখভাল করার জন্য একটি কমিটিও আছে। হোটেল নির্বাচনের সময় নিরাপত্তা বাহিনী সেটি যাচাই-বাছাই করেছে। তিনি জানান, প্রতিজনের খাবারের জন্য সকাল দুপুর এবং রাত ৫শ টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩৬৮৮ জন ৮ সপ্তাহ ডিউটি করেছেন, হোটেলে থেকেছেন এবং যাতায়াত করেছেন। তাদের যাতায়াতের জন্য ১৩টি মাইক্রোবাস, একটি মিনিবাস ও দুইটি বাস রয়েছে। তারা সবাই ঝুঁকির মধ্যে আছেন। এরইমধ্যে আড়াইশ’ নার্স, দেড়শ’ ডাক্তার ও একশর মতো কর্মচারী ও আনসার সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। পরিচালক বলেন, মিডিয়াতে দেখছি এক মাসে চিকিৎসক নার্সদের থাকা ও খাবারের বিল বাবদ আমরা নাকি ২০ কোটি টাকা ব্যয় করেছি। এটি যে কত বড় মিথ্যা কথা..., এটা বলার মধ্য দিয়ে এ হাসপাতাল ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট যারা কাজ করে আসছি আমরা সবাই অত্যন্ত অপমান বোধ করছি এবং দুঃখ পেয়েছি। যেখানে মানুষের জীবন রক্ষার জন্য নিজেদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছি, সেখানে এখন আমরা কোথায় আছি, কী খাচ্ছি তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। আমরা অতিরিক্ত ব্যয় করে থাকলে তা দেখার জন্য আমাদের অথরিটি রয়েছে, মন্ত্রণালয় রয়েছে। এই অথরিটির নির্দেশনার বাইরে আমরা কোনো কাজ করতে পারি না। অতিরিক্ত যদি আমরা কিছু ব্যয় করে থাকি সেটি মন্ত্রণালয়/অধিদপ্তর সেটি দেখবে। তিনি বলেন, আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, ঢাকা মেডিক্যালে মতো দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান যারা ৭৪ বছর ধরে সেবা দিয়ে যাচ্ছে, এই অপপ্রচারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠান সম্পৃক্ত সবাইকে অপদস্ত করা হয়েছে। নাসির উদ্দিন বলেন, আমি আজ মিডিয়ার সামনে বক্তব্য দিচ্ছি, দুদিন পর হয়তো তদন্ত কমিটির সামনে আমাকে বক্তব্য দিতে হবে। এখানে ভ্রান্ত কিছুই করা হয়নি আমি কনফিডেন্ট। সে ক্ষেত্রে যারা এ বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তা আমার জানার অধিকার রয়েছে এবং যিনি বক্তব্য দিয়েছেন তাকে মিডিয়ার সামনে বক্তব্য দিতে হবে তিনি এই তথ্য কোথা থেকে পেয়েছেন এবং কিভাবে পেয়েছেন। তিনি অপপ্রচারকারীর বিচার দাবি করে বলেন, এই বক্তব্য দিয়ে সমাজে আমাদের হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে, আমাদের সব কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। সেজন্য আমি বিচার চাই। তিনি বলেন, আমরা কিভাবে কাজ করছি কিভাবে ব্যয় করছি, আমাদের কাজের প্রক্রিয়া কী, কতজন কর্মরত ছিল, এটি আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতনদের কাছে লিখিত দিয়েছি। নিশ্চয়ই তারা সেটি দেখবেন। ঢামেক পরিচালক বলেন, এ পর্যন্ত আমাদের ৩৬৮৮ জন ম্যানপাওয়ার ডিউটি করেছে। তারা হোটেলে থেকেছে, খেয়েছে এবং হাসপাতালে যাতায়াত করেছে। এই হিসাবটি আমরা আনুমানিক হিসেবে উপস্থাপন করেছি। সেটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেখে পরে অর্থমন্ত্রণালযয়ে উপস্থাপনা করেছে। এরপর অর্থমন্ত্রণালয় সেটি অনুমোদন দিয়েছে। পরিচালক পরিসংখ্যান দেখিয়ে বলেন, ৩ সপ্তাহে মোট ডাক্তার লেগেছে ৫১০ জন, নার্স ৬৩৬ জন, কর্মচারী ৪৫৬ জন, টেকনিশিয়ান ৭৬ জন, সিকিউরিটি ২১৬ জন। মোট তিন সপ্তাহের জন্য ১৮৯৪ জন কর্মী লেগেছে। বিশ্রামে ছিলেন ৩৮২ জন। অর্থাৎ এক মাসে ২২৭৬ জন কর্মী লেগেছে। তাহলে দুই মাস লেগেছে ৪৫৫২ জনশক্তি। এখন আমাদের বরাদ্দ হওয়া ২০ কোটি টাকা দুই মাসে এই জনশক্তির মধ্যে ভাগ করলে বোঝা যাবে কেমন খরচ করা হয়েছে। বুধবার সকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিমযয়ের সময় আরও বিস্তারিত তুলে ধরা হবে বলে তিনি জানান।





আরো খবর