জাতীয় / মন্ত্রণালয় ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ প্রতিবেদন: ২৪ শতাংশ আবাদি জমি কমার শঙ্কা
সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৫৮:১৬ পূর্বাহ্ন
মন্ত্রণালয় ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ প্রতিবেদন: ২৪ শতাংশ আবাদি জমি কমার শঙ্কা
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে বাংলাদেশের কৃষি খাত। এর প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে ২০৪৫ সালের মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় ফসলি জমির পরিমাণ ২৪ শতাংশ কমতে পারে বলে নতুন এক প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বিশ্বব্যাংকের এক যৌথ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ‘ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (সিএসএআইপি)’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়। কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা এবং কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা, স্থিতিস্থাপকতা ও অভিযোজনে বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে ২০৪৫ সালের মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় ২৪ শতাংশ এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ৯ শতাংশ ফসলি জমির কমতে পারে। ২০৩০ সালের মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় ৬ শতাংশ এবং অন্য অঞ্চলে ২ শতাংশ আবাদি জমি কমবে। ২০৩৫ সালের মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় ১২ শতাংশ এবং দেশের অন্য অঞ্চলে ৪ শতাংশ আবাদি জমি হ্রাস পাবে। ২০৪০ সালের মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় ১৮ শতাংশ এবং অন্য অঞ্চলে ৭ শতাংশ আবাদি জমি কমবে। মাটির লবণাক্ততা উপকূলীয় জমিগুলোর ৬২ শতাংশকে প্রভাবিত করেছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ ৮ কিমি. উত্তরে অগ্রসর হওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। কৃষিকাজের জন্য জমির সহজলভ্যতা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়া ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে প্রধান দুটি ফসলের (আমন এবং বোরো ধান) ফলনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। উচ্চ পানির চাপের ফলে ধানের ফলন ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতার প্রবৃদ্ধি বিশ্বে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে দেশের গ্রামীণ পরিবারগুলোর অবদান প্রায় ৮৭ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক বলছে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদনশীলতার প্রবৃদ্ধির জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবেদনে কৃষি খাতের উৎপাদনের নিয়মিত চিত্র স্থবির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে দেশের মূল জাতীয় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় ধান ও গমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বলে প্রতিবেদনে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৫ থেকে ২০৪০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এবং ধরন পরিবর্তিত হচ্ছে? এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে কৃষি কাজে? ফলে প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে?
বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা ইতিমধ্যেই বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে? বিভিন্ন গবেষণা রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২১০০ সাল নাগাদ সাগরপৃষ্ঠ সর্বোচ্চ ১ মিটার উঁচু হতে পারে, যার ফলে বাংলাদেশের মোট আয়তনের প্রায় ১৮.৩ শতাংশ এলাকা নিমজ্জিত হতে পারে? এ পূর্বাভাস সত্যে পরিণত হলে বাংলাদেশকে ওই এলাকার কৃষিসহ সবকিছুই হারাতে হবে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবে? বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম একটি নিদর্শন বৃষ্টিপাতের ধরন পাল্টে যাওয়া? আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে তেমন বৃষ্টি হয় না? আশ্বিন মাসে ৪-৫ দিন এমন পরিমাণে বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়? খরাসহ বিভিন্ন কারণে দেশে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিনে দিনে নিম্নমুখী হয়ে সেচকাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে? এর ফলে বিভিন্ন কৃষির উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে?
অন্যদিকে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত বিঘ্নিত হওয়ায় ঘন ঘন বন্যা ও খরার সম্মুখীন হতে হচ্ছে দেশকে? প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন বাংলাদেশের কৃষির জন্য অবধারিত নিয়তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? বন্যা, খরা, লবণাক্ততা প্রভৃতি দেশের কৃষির ধরনকে বদলিয়ে দিয়েছে? এক সময় এ দেশে কয়েক হাজার প্রজাতির ধান চাষ হতো? বর্তমানে তা গেছে অনেক কমে?
বন্যার কারণে আউশ ও আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় কৃষক সেচ ও খরচনির্ভর বোরো ধানের দিকে ঝুঁকেছে? অপরদিকে ধানের দিকে কৃষক বেশি ঝুঁকে পড়ায় ডাল চাষের জমি হ্রাস পেয়েছে? ফলে ডালশস্যের আবাদ তাৎপর্যপূর্ণভাবে হ্রাস পেয়েছে? তাছাড়া পাট, গম ও আখের চাষ উৎপাদন উভয়ই লক্ষণীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে? সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের সামনে যে ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে, তা সত্যিই দুঃখের, বলছেন বিশেষজ্ঞরা?