শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৯ জিলকদ, ১৪৪৫ | ০৬:৪৪ পূর্বাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


বুধবার, ২২ মে ২০১৯ ১০:৫১:০৩ অপরাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ড তদন্ত প্রতিবেদন: রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানসহ দায়ী অর্ধশতাধিক

রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারের নকশা অনুমোদনে বিধি লঙ্ঘন এবং নির্মাণের ক্ষেত্রে ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল। শুধু তাই নয়, অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে ভবনটির ১৯ থেকে ২৩ তলা। আর এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন খাদেমসহ অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, বনানীর এফআর টাওয়ারে অবৈধভাবে নির্মিত ১৯ থেকে ২৩ তলা পর্যন্ত ভেঙে ফেলা হবে। এজন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আলাদা মামলা করা হবে। আর ১৬ থেকে ১৮ তলা পর্যন্ত অনুমোদনের ক্ষেত্রে আইনি ত্রুটি থাকায় সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। ২৮ মার্চ এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৭ জন নিহত হন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। পাশাপাশি ওই জমির মালিক সৈয়দ মো. হোসাইন ইমাম ফারুক এবং এফআর টাওয়ার ওনার্স সোসাইটিও অগ্নিদুর্ঘটনার দায় এড়াতে পারে না। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, যাদের নাম এ প্রতিবেদনে এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এফআর টাওয়ারের অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িত রাজউকের কর্মকর্তাসহ যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখব। যারা অবসরে গেছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রযোজ্য প্রক্রিয়ায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা এখনও কর্মরত আছেন তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ১৯৯০ সালে এফআর টাওয়ারের মাল্টি পারপাস কমার্শিয়াল ১৫ তলা ভবনের নকশা অনুমোদন প্রক্রিয়া এবং অনুমোদন যথাযথ ছিল। কিন্তু, ১৯৯৬ সালে ওই ভবনের ১৯ তলা আবাসিক কাম বাণিজ্যিক ভবনের নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে ইমারত বিধিমালা মানা হয়নি। কেননা ‘১৯৯৬ সালের ইমারত বিধিমালা জারি হওয়ার পরেও বনানীর এফআর টাওয়ারের নকশা অনুমোদন করা হয় ১৯৮৪ সালের পুরনো বিধিমালার আলোকে। এক্ষেত্রে রাজউকের তৎকালীন চেয়ারম্যান হুমায়ুন খাদেমসহ সংশ্লিষ্টরা তাদের দায় এড়াতে পারেন না।’ সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ যাতে জানতে পারে তদন্তের নামে লুকোচুরি করা হয় না। সত্যকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বা রাজউক চেপে রাখেনি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, সেটা শুধু মুখে নয়, কথায় কথায় নয়- কাজে প্রমাণ করছি।’ তদন্ত প্রতিবেদনে ভবন নির্মাণের অনিয়ম ও ত্রুটিতে যেসব ব্যক্তিকে দায়ী করা হয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন খাদেম ছাড়াও রাজউকের সাবেক সদস্য ডিএম ব্যাপারী, রাজউকের সাবেক নগর পরিকল্পনাবিদ জাকির হোসেন, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. সাইদুর রহমান, সাবেক অথোরাইজড অফিসার-২ সৈয়দ মকবুল আহমেদ, সাবেক সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ উল্লাহ এবং জমির মূল মালিক এসএমএইচআই ফারুক। সাবেক অথোরাইজড অফিসার এটিএম কামরুজ্জামান, সাবেক অথোরাইজড অফিসার নাজমুল হুদা, সাবেক সহকারী অথোরাইজড অফিসার মো. বদরুজ্জামান মিয়া, সাবেক সহকারী অথোরাইজড অফিসার বশির উদ্দিন খান, ইমারত পরিদর্শক ইমরুল কবির, ইমারত পরিদর্শক মো. শওকত আলী, উচ্চমান সহকারী মুহাম্মদ আবদুর রহমান, উচ্চমান সহকারী (সাময়িক বরখাস্ত) মো. সফিউল্লাহ, নিুমান সহকারী মো. মজিবুর রহমান (সাময়িক বরখাস্ত), সাবেক তত্ত্বাবধায়ক জাহানারা বেগম, বিষয় পরিদর্শক মো. মেহেদুজ্জামান, সহকারী পরিচালক শাহ মো. সদরুল আলম, উপ-পরিচালক মুহাম্মদ শওকত আলী (প্রেষণ), পরিচালক শামসুল আলম (প্রেষণ), সদস্য (এস্টেট) রাজউল করিম তরফদার, তত্ত্বাবধায়ক মোফাজ্জল হোসেন, তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. এমদাদ আলী বিশ্বাস (মৃত), পরিচালক আবদুল্লাহ আল বাকী, সদস্য আ ই ম গোলাম কিবরিয়া, অফিস সহকারী মো. এনামুল হক, তৎকালীন ইমারত পরিদর্শক নজরুল ইসলাম প্রমুখ। রাজউকের ২৪ টিমের ১৮১৮টি বহুতল ভবন পরিদর্শন : সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম আরও জানান, রাজউক থেকে বহুতল ভবনের অনিয়ম চিহ্নিত করার জন্য ২৪টি পরিদর্শন টিম ১ হাজার ৮১৮টি ভবন পরিদর্শন করেছে। এসব ভবনের মধ্যে রাজউকের অনুমোদিত নকশা আছে এমন ভবন পাওয়া গেছে ১ হাজার ১৩৬টি। রাজউক ব্যতীত অন্যান্য সংস্থা অনুমোদিত নকশা আছে এমন ভবন সংখ্যা ২০৭টি, ভবন মালিকরা রাজউক অনুমোদিত নকশা প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়েছে- এমন ভবনের সংখ্যা ৪৩১টি এবং সরকারি ভবনের নকশা প্রদর্শন করা হয়নি এমন ভবন ৪৪টি। নির্দিষ্ট সময়ে নকশা প্রদর্শনে ব্যর্থ ভবনের বিরুদ্ধে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ব্যত্যয়কৃত ভবনের অনিয়মকৃত অংশ ভেঙে ফেলার জন্য আমরা নির্দেশ দেব। ভেঙে না ফেললে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, আমরা তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখিয়েছি। রাজউক চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত সম্পৃক্তদের নাম উল্লেখ করে রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। কাজেই আপনারা আস্বস্ত থাকতে পারেন আইনানুগ প্রক্রিয়ায় যারাই অভিযুক্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনোভাবেই কাউকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘পরিদর্শন একটি চলমান প্রক্রিয়া। পর্যায়ক্রমে সব ভবন পরিদর্শন করা হবে। এ সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব মো. ইয়াকুব আলী পাটওয়ারী, স্থাপত্য অধিদফতরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসিরসহ তদন্ত কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।





আরো খবর