শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ, ১৪৪৫ | ০৪:৫৬ অপরাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


শুক্রবার, ২২ মার্চ ২০১৯ ০৩:১২:৫২ অপরাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

রাজবাড়ীর পদ্মা, গড়াই ও চন্দনা নদীতে আকাল

২০১৩ সালে বছরের ১১৫টি দিনকে জাতিসংঘের বিশেষ দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। হিসেব কষলে তাই বছরের প্রায় ৩২ শতাংশ দিনই কোনো না কোনো বিশেষ দিনের ভেতর পড়ে। তবে এর মধ্যে একটি দিন বাংলাদেশের মতো নদীমাতৃক দেশের কাছে অধিক গুরুত্ব বহন করে। তা হলো ২২ মার্চ, বিশ্ব পানি দিবস। বলা হয় 'নদী বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে' অথচ রাজবাড়ীতে যে কয়েকটি নদী রয়েছে তার কোনটিতেই এখন আর সেই পরিমাণ পানি নেই। শীতের শুরুতে নদীগুলোতে পানিপ্রবাহ থাকলেও শুকনো মৌসুমে এসব নদীতে আর পানি পাওয়া যায় না। রাজবাড়ী জেলাটি নদীমাতৃক হওয়ায় নদীর সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের। এসব নদীকে ঘিরেই নদীতীরবর্তী অঞ্চলের মানুষের জীবনযাপন। অথচ প্রতিবছরের বন্যা ও ভাঙনের কারণে নদীগুলো এখন আর আগের মতো প্রাণবন্ত নেই। প্রতিবছর বন্যা ও ভাঙনের ফলে প্রচুর পলি পড়ে পদ্মা ও গড়াইসহ অন্যান্য নদীগুলো তার নাব্যতা হড়িয়ে ফেলছে। ফলে নদীগুলোতে আগে যে পরিমাণ মাছ পাওয়া যেত তা আর এখন পাওয়া যায় না। কষ্টে দিন চলছে এ অঞ্চলের জেলেদের। এসব নদীকে আকড়ে ধরে বেঁচে থাকা মানুষগুলো চায় রাজবাড়ীর নদীগুলো আবার খনন করা হোক। রাজবাড়ীতে উল্লেখযোগ্য নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে পদ্মা, গড়াই, চন্দনা, হড়াই ও কুমার। এ ছাড়া রয়েছে কয়েকটি ছোট নদী। এসব নদীর মধ্যে পদ্মা ও গড়াই নদীতে স্বল্প পরিমাণ পানি থাকে। প্রতিবছর বন্যা ও নদীভাঙনের কারণে প্রচুর পরিমাণ পলি ও বালিমাটিতে নদীগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে পানিপ্রবাহ ও নৌযান চলাচলে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এর মধ্যে জেলায় পদ্মা নদীর ৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা রয়েছে। এ পাঁচটি নদীর আয়তন এখন প্রায় ১৪ হাজার ৬৫৪ হেক্টর। অথচ এখন আর আগের সেই জৌলুস নেই। কোনরকমে চলছে এর প্রবাহ। পদ্মা নদীতে কিছুটা পানি থাকলেও বাকি নদীগুলো এখন ধুধু বালুচর। পরিণত হয়েছে চরাঞ্চলে। নদীগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জীবনযাপন করছে কষ্টে। এলাকাবাসী ও জেলেরা বলেন, একসময় এসব নদী অনেক গভীর ছিল, প্রচুর পানি থাকত, পাওয়া যেত বিভিন্ন ধরনের মাছ। এখন পলি পড়ে নদী ভরাট হওয়ায় আগের মতো আর মাছ পাওয়া যায় না। অন্যদিকে, নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে বন্যায় ও নদীভাঙনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। এলাকাবাসীর দাবি, নদী খনন করা হলে পানি ও মাছ পেতে কোনো সমস্যা হবে না। সরকারের কাছে এর খনন কাজের জন্য অনুরোধ জানান তারা। শুকনো মৌসুমে নদীগুলো শুকিয়ে চৌচিড় হয়ে যায়। তবে সরকার নদীকে বাঁচাতে চাইলে মেগা পরিকল্পনা করে প্রতিবছর ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। আর দেশ ও দেশের মানুকে বাঁচাতে হলে নদীশাসন অতি জরুরি এবং নদী বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে বলেও মনে করেন তারা। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মজিনুর রহমান বলেন, 'নদী ও প্রাকৃতিক জলাশয়গুলোতে পলি পড়ে প্রচুর ডুবোচর সৃষ্টি হয়েছে। ফলে মাছ উৎপাদন কমে গেছে। তবে মাছের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হলে পলিপড়া জলাশয়গুলোকে পুনঃখনন করতে হবে। পানি থাকায় মাছের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে, চাপ সৃষ্টি হচ্ছে মাছ উৎপাদনে। তবে ইলিশ মাছের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হলে ব্যাপক আকারে প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে নদী খনন করতে হবে। ' জেলা প্রশাসক মো. শওকত আলী বলেন, 'রাজবাড়ী জেলাটি পদ্মা ও গড়াই নদীবেষ্টিত। এ জেলার এক পাশ দিয়ে পদ্মা ও অন্য পাশে গড়াই নদী প্রবাহমান। তবে এ দুটি নদীভাঙনে রাজবাড়ী জেলাটি ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। প্রতিবছরই এ জেলার পাঁচটি উপজেলা নদীভাঙনের কবলে পড়ে বাড়িঘর ও ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে। বন্যায় প্রচুর পলি মাটি বয়ে আনে এ দুটি নদী। এতে জমি উর্বর হয় এবং ফসলের আবাদ ও উৎপাদন ভালো হয়। ' তবে সমস্যার কথাও বলেন জেলা প্রশাসক, 'উজান থেকে প্রচুর পরিমাণ পলি মাটি ও বালি এসে নদীগর্ভে স্তূপ আকারে এসে প্রতিনিয়ত চর পড়ে যাচ্ছে এবং নদীর ধারণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে যে পরিমাণ পানি নদীতে থাকার কথা তা থাকছে না। এ কারণে বর্ষা মৌসুমে নদীর দুই কূল ছাপিয়ে বন্যা ও নদীভাঙন সৃষ্টি হচ্ছে। ' জেলা প্রশাসক আরো বলেন, 'নদীকে বাঁচাতে পারলেই দেশকে বাঁচানো সম্ভব এবং নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হলে প্রতিবছর ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন। এর ফলে নদীর ধারণ ক্ষমতা বাড়বে নদীর পানি প্রবাহ সঠিকভাবে থাকবে এবং বর্ষা মৌসুমে আমরা বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাব। আর শুষ্ক মৌসুমে নদীতে যে পানি থাকবে তা দিয়ে সেচকার্যসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা যাবে। তবে ৮৫ কিলোমিটার প্রমত্তা পদ্মা নদী খনন করা প্রয়োজন। একইভাবে গড়াই নদীও চর পড়ে এর ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে, সেটাও দেখা দরকার। ' এভাবে পদ্মা ও গড়াই নদীকে রক্ষার মাধ্যমে জেলার মানুষকে রক্ষা করার মাধ্যমে এর সুফল সারা দেশ পাবে বলে মনে করেন তিনি।





আরো খবর