শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৯ জিলকদ, ১৪৪৫ | ০৬:২৭ পূর্বাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


সোমবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ ০২:১৪:৩৬ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

বঙ্গোপসাগরে একদিনে ১৪ ট্রলার, ৫৭ জেলে অপহৃত

টেকনাফ-সেন্টমার্টিন এলাকা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) একদিনে ১৪টি মাছধরা ট্রলারসহ অন্তত ৫৭ জন জেলেকে অপহরণ করেছে জলদস্যুরা। রোববার বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত স কক্সবাজারের পাটুয়ারটেক থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত অঞ্চলের উপকূলবর্তী গভীর বঙ্গোপসাগরে প্রায় ১শ কিমি দীর্ঘ এলাকাজুড়ে জলদস্যুরা এসব অপহরণের ঘটনা ঘটায়। শনিবারও বঙ্গোপসাগরের একই অঞ্চলে প্রায় ৩০টি মাছধরা ট্রলার জেলেসহ অপহরণের শিকার হয়। এতে আতঙ্কিত জেলেরা সাগরে মাছ না ধরেই ট্রলার নিয়ে কূলে ফিরে আসছে। এদিকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে ট্রলার মালিকদের জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতি সূত্র জানায়, রোববার মুক্তিপণ আদায়ের জন্য জলদস্যুদের হাতে আটক ট্রলারগুলোর মধ্যে ৮টি কক্সবাজারের, ৪টি চট্টগ্রামের ও ২টি বরগুনার পাথরঘাটা এলাকার। এরমধ্যে কক্সবাজারের আবু সোলতান নাগু কোম্পানির মালিকানাধীন এফবি ছেনুয়ারা ও এফবি ভাই ভাই নামের দু’টি ফিশিং বোট চারজন করে মোট আটজন, নূনিয়াচঢ়ার মোজাম্মেল কোম্পানির এফবি মায়ের দোয়ার তিন মাঝিমাল্লা, একই এলাকার সোহেলের মালিকানাধীন বোট ৪ জন, নতুন বাহারছড়ার ওসমান গনি টুলুর মালিকানাধীন এফবি নিশান-১ ও ২ ফিশিং বোট দু’টি ১৮ জন জেলেসহ অপহরণ করা হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজার শহরের এন্ডারসন রোডের কাইয়ূম সওদাগরের মালিকানাধীন এফবি রিফাত ও এফবি রফিকুল হাসান নামের দু’টি ফিশিং বোট তিনজন করে ছয়জন জেলেসহ অপহরণের শিকার হয়। একই সময়ে বরগুনার পাথরঘাটা এলাকার এফবি ইদ্রিস ও এফবি জলপুরী নামের দু’টি ট্রলারও তিনজন করে জেলেসহ অপহরণ করা হয়। রোববার একই এলাকায় এফবি কিংফিশার-১ ও ২ নামের ২১০ অশ্বশক্তি সম্পন্ন দু’টি ট্রলার, চট্টগ্রাম এলাকারও ৪টি মাছধরা ট্রলারসহ মোট ১২জন অপহরণের শিকার হয়েছে। বর্তমানে জলদস্যুরা এ শক্তিশালী ট্রলার দু’টি ব্যবহার করে সাগরে ফিশিং ট্রলারসহ মাঝিমাল্লাদের জিম্মি করছে বলে জানায় ট্রলার মালিক সমিতি সূত্র। জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ বলেন, জেলের বেশ ধরে ডাকাতদল প্রথমে ট্রলারের কাছে আসে এবং পরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ট্রলারের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ডাকাতেরা ট্রলারসহ জেলেদের জিম্মি করার পর কয়েকজনকে রেখে বাকিদের অন্য ট্রলারে তুলে ছেড়ে দেয়। এরমধ্যে বেশ কিছু জেলে রাতে কূলে ফিরে এসেছে। তিনি জানান, অপহৃতদের মুক্তির বিনিময়ে ট্রলারপ্রতি ৪/৫ লাখ করে পণ দাবি করছে জলদস্যুরা। শনিবার একইভাবে অপহরণের শিকার ৩০টি ট্রলার ২/৩ লাখ হারে মুক্তিপণ দিয়ে একদল জলদস্যুর কাছ থেকে মুক্ত হয়ে ফের আরেকদল জলদস্যুর কবলে পড়েছে। বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে টানা গত ২৫ দিন ধরে জলদস্যুদের এ তাণ্ডব চলছে। তিনি আরো জানান, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের এমন কোনো মাছধরা ট্রলার নেই, যেটি এই সময়ে জলদস্যু আক্রান্ত হয়নি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাগরে মাছধরা বন্ধ করে ট্রলারগুলোকে কূলে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং এ বিষয়ে আলোচনার জন্য সোমবার সকাল ১১টায় সমিতির জরুরি বৈঠকও ডাকা হয়েছে। অপহরণের শিকার ট্রলারের মালিক ও জেলেরা জানান, বঙ্গোপসাগরের পাটুয়ারটেক থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার বর্গ কিমি এলাকাজুড়ে এখন জলদস্যুদের রামরাজত্ব চলছে। এই বিস্তীর্ণ এলাকা তিনটি জলদস্যু গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আর একেকটি গ্রুপে ৭০ থেকে ১শ জন পর্যন্ত সদস্য রয়েছে। জেলেরা আরো জানান, জলদস্যুদের তিনটি গ্রুপের সদস্যদের অধিকাংশই বয়সে তরুণ। বাহিনীর সদস্যরা মূলত চট্টগ্রামের বাঁশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়ার রাজাখালী, মহেশখালী শাপলাপুর, ধলঘাটা ও মাতারবাড়ি এলাকার। ট্রলার মালিকরা সাগরে ডাকাতি রোধে কোস্টগার্ডের তৎপরতা বৃদ্ধি, সি-গার্ড গঠন, ড্রোন মোতায়েন ও মেরিন র‌্যাব প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্ব দেন। ইয়াবা রোধে যেভাবে র‌্যাব সাগরে দায়িত্ব পালন করে, সেভাবেই জরুরিভিত্তিতে সাগরে র‌্যাবের তৎপরতা বাড়ানোরও দাবি তোলেন তারা। এ বিষয়ে কক্সবাজারে নবগঠিত র‌্যাব-১৫ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান বলেন, সাগরে ডাকাতির ঘটনা শুনেছি। সোনাদিয়া থেকে জলদস্যুদের আমরা নির্মূল করেছি। কিন্তু গভীর সাগরে গিয়ে জলদস্যু দমনের অনুমতি পাওয়া গেলে র‌্যাব তাই করবে।





আরো খবর