শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৯ জিলকদ, ১৪৪৫ | ০৬:৪৪ পূর্বাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


সোমবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ ০২:০৬:৪৫ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

নদী দখলদার উচ্ছেদে যৌথ অভিযান, আইনি ব্যবস্থাও থাকা উচিত

নদী দখলদার উচ্ছেদে ইতিপূর্বে বিক্ষিপ্তভাবে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা অংশ নিলেও এখন থেকে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবে। আর এ সংস্থাকে সহযোগিতা করবে পরিবেশ অধিদফতর, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং সিটি কর্পোরেশনসহ সাতটি সরকারি সংস্থা। অতীতে নদী দখল ও দূষণ রোধে বহু অভিযান পরিচালিত হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি মূলত সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে। এ প্রতিবন্ধকতা দূর হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই আশা করা যায়, নদী দখল ও দূষণসহ বিভিন্ন অনিয়ম রোধে পরিচালিত কার্যক্রমগুলো এখন থেকে সফলতার মুখ দেখবে। আশঙ্কার বিষয় হল, উচ্ছেদ অভিযানের সমান্তরালে দেশে নদী দখল ও দূষণের হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি রাজধানীর চারপাশে ৯০৬টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে উচ্ছেদ অভিযান শুরুর পর এ সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে, যা অনভিপ্রেত। আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, কোনো উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার পর কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারও তা দখল হয়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে সরকারের গা-ছাড়া ভাব। আশার কথা, উচ্ছেদ পরবর্তী দখল রোধে এবার বুড়িগঙ্গার তীরে ওয়াকওয়ে ও বনায়নসহ অন্যান্য প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। তবে একইসঙ্গে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। দখলদাররা যত বড় প্রভাবশালীই হোক না কেন; আইন অনুযায়ী শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে ভবিষ্যতে নদী দখল ও দূষণ রোধসহ পরিবেশ রক্ষায় তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশকে বলা হয় নদীমাতৃক দেশ। একসময় জালের মতো সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য খরস্রোতা নদ-নদী আমাদের জীবন-জীবিকা, সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করলেও আজ সেগুলো জীর্ণ-শীর্ণ অথবা মরণাপন্ন অবস্থায় উপনীত হয়েছে। অনেক নদী ইতিমধ্যে মানচিত্র থেকে হারিয়েও গেছে। এজন্য দায়ী আমাদের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ড ও অদূরদর্শিতা। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা ছাড়াও এক শ্রেণীর দুর্বৃত্ত দেশের নদ-নদীগুলো দখল করে বাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, আবাসিক প্লট, ইটভাটা ইত্যাদি গড়ে তোলার পাশাপাশি নানা ধরনের দূষণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, এ কাজে দুর্বৃত্তরা ক্ষমতাসীন দলের নাম-পরিচয় ব্যবহার করছে এবং তারা প্রচলিত আইন ও নিয়ম-কানুনের খুব একটা তোয়াক্কা করছে না। দেশের নদ-নদীগুলোকে দখল, দূষণ ও ভরাট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে হলে অবশ্যই আইনের যথাযথ প্রয়োগ হওয়া দরকার। ভাটির দেশ হিসেবে আমাদের উল্লেখযোগ্য নদ-নদীগুলোর উৎস দেশের ভূ-সীমানার বাইরে। অভিন্ন নদ-নদীগুলোর গতি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশ, বিশেষ করে ভারত ও নেপালের সঙ্গে গঠনমূলক উদ্যোগ নেয়া উচিত, যাতে তা কার্যকর ও ফলপ্রসূ হয়। আন্তর্জাতিক নদ-নদীগুলোর ব্যাপারে আমাদের অবস্থান ও দাবি আরও জোরালো করার লক্ষ্যে শক্ত কূটনৈতিক ভূমিকা গ্রহণ করা জরুরি। এর ফলে দখল ও দূষণে জর্জরিত দেশের নদ-নদীগুলোর প্রবহমানতায় নতুন প্রাণের সঞ্চার হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সরকার এ বিষয়ে মনোযোগী হওয়ার পাশপাশি শক্ত হাতে নদী দখল ও দূষণ রোধে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।





আরো খবর