শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল, ১৪৪৫ | ০৪:০২ পূর্বাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


মঙ্গলবার, ১৫ জানুয়ারী ২০১৯ ১২:৫৬:৪৮ অপরাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

পদ্মা সেতুর নকশার জটিলতা মিটল

অবশেষে নকশার জটিলতা পুরোপুরি মুক্ত হলো পদ্মা সেতু। যে কারণে সেতুটির নির্মাণকাজে বারবার বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছিল, সেই ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের নকশা চূড়ান্ত হয়ে গেছে। এর মধ্য দিয়ে বড় সমস্যা কাটানো সম্ভব হয়েছে বলে মনে করে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ। পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের নকশার জটিলতা আগেই দূর হয়েছে। আর দুদিন আগে নতুন নকশার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নতুন নকশা অনুযায়ী এই দুটি পিলারের প্রতিটি ছয়টি করে অতিরিক্ত একটি পাইল মাঝখানে বসানো হবে। Eprothom Alo দ্বিতল পদ্মা সেতু হচ্ছে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ডাঙার অংশ ধরলে সেতুটি প্রায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। পিলারের ওপর ইস্পাতের যে স্প্যান বসানো হবে, এর ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। আর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন। পুরো সেতুতে মোট পিলারের সংখ্যা ৪২টি। প্রতিটি পিলারে রাখা হয়েছিল ছয়টি পাইল। একটি থেকে আরেকটি পিলারের দূরত্ব ১৫০ মিটার। এই দূরত্বের লম্বা ইস্পাতের কাঠামো বা স্প্যান জোড়া দিয়েই সেতু নির্মিত হবে। ৪২টি খুঁটির ওপর ৪১টি স্প্যান বসানো হবে। এর মধ্যে ৫টি স্প্যান বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। স্প্যানের অংশগুলো চীন থেকে তৈরি করে সমুদ্রপথে জাহাজে করে আনা হয় বাংলাদেশে। ফিটিং করা হয় মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে। প্রতিটি পিলারে পাইলের সংখ্যা ছয়। সব মিলিয়ে ২৪০টি পাইল বসানোর কথা ছিল। ইস্পাতের এসব পাইল মাটির নিচে ৯৬ থেকে ১২৮ মিটার পর্যন্ত গভীরে বসানোর কথা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর ৬ নম্বর পিলারের পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। এরপর ৭ ও ৬ নম্বর পিলারে তিনটি করে মোট ছয়টি পাইলের বটম সেকশনের কাজ করা হয়। কিন্তু এসব পাইল বসাতে গিয়ে নদীর তলদেশে নরম মাটির স্তর পাওয়া যায়। তখন দুটি পিলারের ছয়টি পাইলের টপ সেকশনের কাজ বন্ধ রাখা হয়। মাওয়া প্রান্তে কাজ বন্ধ রেখে জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়। পরে আরও ১২টি পিলারের পাইল বসানোর সময় মাটির স্তরে কাদামাটি পাওয়া যায়। এই পিলারগুলোর নম্বর হলো ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ২৬, ২৭, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২ ও ৩৫। আগের নকশা অনুযায়ী এই ১৪টি পিলারের পাইলের সংখ্যা ছিল ৮৪। সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু করে ব্রিটিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাউই (COWI) ইউকে লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির বিশেষজ্ঞরা মাটি পরীক্ষার প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন তথ্য যাচাই করেন। তাঁদের পরামর্শ অনুযায়ী, কাদামাটির পরই শক্ত মাটি না পাওয়ায় পদ্মা সেতুর ১৪টি পিলারের মধ্যে পাইলের সংখ্যা একটি করে বাড়ানো হয়। অন্যদিকে এসব পিলারে খাঁচ কাটা পাইল বসিয়ে বিশেষ ধরনের সিমেন্টের মিশ্রণে নরম মাটি শক্ত করা হয়। কিন্তু ৬ ও ৭ নম্বর পিলারে আগে থেকে ছয়টি পাইল বসে যাওয়ায় চিন্তায় পড়েন বিশেষজ্ঞরা। এসব পাইল তুলে নতুন করে পাইল বসানোর কথাও ভাবা হয়। শেষ পর্যন্ত আগে থেকে বসে যাওয়া পাইলগুলো রেখেই ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের নকশা চূড়ান্ত করা হয়। পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘৬ ও ৭ নম্বর পিলারের পাইল বসানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে। পদ্মা সেতুর বড় সমস্যা আমরা ওভারকাম করেছি। বড় কোনো সমস্যা আর নেই।’ দেড় শ মিটার দৈর্ঘ্যের পাঁচটি স্প্যান বসে যাওয়ায় পদ্মা সেতুর ৭৫০ মিটার অংশ এখন দৃশ্যমান। এ মাসের শেষ দিকে ষষ্ঠ স্প্যান বসানো হবে। আসছে ফেব্রুয়ারিতে আরও একটি স্প্যান বসে যেতে পারে। পদ্মা সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের সামনে ষষ্ঠ ও সপ্তম স্প্যান দুটি প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। ষষ্ঠ স্প্যানটি বসানো হবে সেতুর ৩৭ ও ৩৬ নম্বর পিলারের (খুঁটি) ওপর। আর সপ্তম স্প্যানটি ৩৬ ও ৩৫ পিলার দুটিতে বসানো হবে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের এক প্রকৌশলী জানান, কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে আরও স্প্যান প্রস্তুত করার কাজ দ্রুত চলছে। কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে আরও পাঁচটি স্প্যানের ৯০ শতাংশ প্রস্তুতের কাজ শেষ হয়েছে। এ মাসের মধ্যে এসব স্প্যান প্রস্তুত হয়ে যাবে। এই স্প্যানগুলো আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বসানো হবে। তবে আপাতত জাজিরা প্রান্ত থেকে স্প্যান বসানোর কাজ চলবে। পিলার ও স্প্যানের পাশাপাশি সেতুতে রেলপথের জন্য স্ল্যাব বসানোর কাজ চলছে। দুটি রেলওয়ের স্ল্যাব বসানো হয়ে গেছে। এ মাসেই শুরু হবে ২২ মিটার প্রস্থের রোডওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজ। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত পদ্মা সেতুর পুরো প্রকল্পের ৬২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে মূল সেতুর কাজ হয়েছে ৭২ শতাংশ। এ ছাড়া নদীশাসনের কাজ হয়েছে ৪৮ শতাংশ। পদ্মা সেতুর বর্তমান ব্যয় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। মূল সেতু নির্মাণে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। আর নদীশাসনের কাজ করছে চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। দুই প্রান্তে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক, অবকাঠামো নির্মাণ করছে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, দিন–তারিখ নির্ধারণ না হলেও ষষ্ঠ স্প্যানটি জাজিরা প্রান্তে জানুয়ারি মাসেই বসানো হবে।





আরো খবর