শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল, ১৪৪৫ | ০১:১৯ পূর্বাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


শনিবার, ১৭ নভেম্বর ২০১৮ ০১:১৪:৩২ অপরাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

রিকশাওয়ালার সেই মেয়ের রাজসিক বিয়ে!

নবান্ন উৎসবের ডামাডোল আর ব্যস্ততার ফাঁকে শুক্রবার কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার পানান গ্রামের ফসলের মাঠে বিভিন্ন বয়সের হাজার হাজার নারী-পুরুষ মিলিত হন এক ভিন্নরকম আনন্দ উৎসবে। আর এ উৎসব হচ্ছে ১৮ বছর আগে গ্রামের রিকশা চালকের কুড়িয়ে পাওয়া এক মেয়ের বিয়ে উৎসব। ব্যাপক প্রচার দিয়ে আয়োজিত এ অনুকরণীয় অনুষ্ঠানে মানুষের ঢল নামে। আগত লোকজনের সবাই ভাগাভাগি করে পালন করলেন এ পিতা-মাতাহীন শিশুটির বিয়ে উৎসব। এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বয়সের পাঁচ হাজারেরও বেশি নারী-পুরুষ অংশ নেয়। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করতে হয় সাড় ৩০০ স্বেচ্ছাসেবককে। ১২০০ কেজি মোরগ, ৪টি গরু ও ১০টি খাসি জবাই করে ফসলের মাঠে বিশাল প্যান্ডেল ও আলোকসজ্জা করে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন এলাকাবাসী । সুন্দর- সুখী দাম্পত্য জীবন গড়ে তুলতে এবং সচ্ছল দম্পতি হিসেবে সমাজে মাথা উচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ করে করে দিতে নিমন্ত্রিত লোকজন এ দরিদ্র বর-কনের প্রতি সাধ্যানুযায়ী সাহায্যের হাতও বাড়িয়ে দেন। ১০ টেবিলে সংগ্রহ করা এ টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় সর্ব সাকুল্যে পাঁচ লাখেরও বেশি। এসব টাকা দিয়ে বরকে একটি নতুন অটোরিকশা কিনে দেয়ার কথা জানালেন আয়োজকরা। জানা গেছে, হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের উত্তর পানান গ্রামের রিকশাচালক মফিজ উদ্দিন ১৮ বছর আগে এক রাতে বাড়ির পাশের শ্মশানঘাটে আনুমানিক এক বছর বয়সী এ শিশুকন্যাটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে চিৎকার করতে দেখে কুড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে আসেন। তাসলিমা আক্তার নাম রেখে নিজের সন্তানের মতোই আদর যত্ন এমনকি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করিয়ে বড় করেন। বিয়ের বয়স হওয়ায় রিকশাচালক মফিজ জন্মদাতা পিতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তিনি এলাকাবাসীর সহয়তায় একটি ছেলের কাছে ওই কুড়িয়ে পাওয়া মেয়েটিকে পাত্রস্থ করে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। মফিজ উদ্দিন যুগান্তরকে জানান, ১৮ বছর আগে তিনি ক্লান্ত দেহে সন্ধ্যার পর রিকশা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে একটি শ্মশানের পাশে আনুমানিক এক বছর বয়সী ওই শিশুকন্যাকে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ভয়ার্ত কণ্ঠে কান্নাকাটি করতে দেখেন। তার মায়া লাগলে শিশুটিকে কুড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে আসেন। তারপর থেকে তাসলিমা আক্তার নাম দিয়ে পিতৃস্নেহে বড় করতে থাকেন। স্হানীয় মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে লেখাপড়াও করাতে থাকেন তাকে। কিন্তু দেখতে দেখতে ১৮ বছর চলে গেলে সে বিবাহযোগ্য হয়ে উঠে তাসলিমা। একই গ্রামের আবদুস সাত্তারের ছেলে গার্মেন্টকর্মী রাজন সব জেনেশুনে তাকে বিয়ে করতে রাজি হয়। তাই পিতা-মাতার মতোই দায়িত্বপালন করতে গিয়েই এ বিয়ের আয়োজন। আর এ আয়োজনে সাড়া দিয়ে গ্রামবাসীও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। রাজ-রাজরানীর মতোই আমার তাসলিমার বিয়ে হয়। মফিজ বলেন, আজ থেকে আমার মাথার ওপর থেকে পাহাড়ের মতো দায়িত্বের বোঝা সরল। তাসলিমা খুশি - আমরাও আনন্দিত। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বদিউল আলম মতি বলেন, আমি যখন চেয়ারম্যান তখন উত্তর পানান গ্রামের রিকশাচালক মফিজ উদ্দিন বাড়ির পাশের শ্মশান থেকে ওই শিশুটিকে কুড়িয়ে এনে আমাদের বললে অনেক খুঁজাখুঁজি করেও আমরা তার মা-বাবার হদিস পেলাম না। জানতে পারলাম না তার জন্ম ও জাত পরিচয়। আজ যখন সেই শিশুটি বিবাহযোগ্য হয়েছে এবং মফিজ বিয়ের জন্য জামাইও ঠিক করে তখন আমরা সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই। কিশোরগঞ্জ জেলা সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি মানবাধিকার সংগঠক অ্যাডভোকেট অশোক সরকার বলেন, রিকশাচালক মফিজ পথে কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটিকে কোলেপিঠে করে মানুষ করে আজ রাজসিক আয়োজনে তার বিয়ে দিয়ে আমাদের চোখ খুলে দিয়েছেন। এটি আমাদের জন্য একটি শিক্ষা এবং অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, আর্তপীড়িত এবং অসহায়-এতিম শিশুদের পাশে হৃদয়বান রিকশাচালক মফিজদের মতো সব শ্রেণি-পেশার মানুষ পাশে দাঁড়াই তাহলে সমাজের অনেক সমস্যাই হয়তো কেটে যাবে।





আরো খবর