জাতীয় / খাশোগি হত্যাকাণ্ডের পেছনের রহস্য দেখতে চান বিশ্বনেতারা
রোববার, ২১ অক্টোবর ২০১৮ ০৬:৪৮:৩৭ পূর্বাহ্ন
খাশোগি হত্যাকাণ্ডের পেছনের রহস্য দেখতে চান বিশ্বনেতারা
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থিত সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করার বিষয়ে অঙ্গিকার করেছে তুরস্কের সরকার।
শনিবার তুর্কি সরকারের পক্ষ থেকে এমনটি বলা হয়। খাশোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে রিয়াদ বহুমুখী আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রয়েছে।
বার্তা সংস্থা মিডেল ইস্ট আইকে এরদোগানের ঘনিষ্ঠ এক সূত্র জানিয়েছে, তুর্কি নেতারা খাশোগি হত্যাকাণ্ডের সকল রহস্য উন্মোচন করতে বদ্ধপরিকর। তারা খাশোগি হত্যাকাণ্ডের পেছনের রহস্য দেখতে চান এবং তা জনগণের সম্মুখে তুলে ধরতে চান।
আনাদোলু নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, শনিবার একেপি পার্টির মুখপাত্র ওমের চেলিক বলেন, ‘খাশোগিকে নিয়ে যা ঘটেছে তার সবটুকু রহস্য উন্মোচন করবে তুরস্ক। এ বিষয়ে কারো কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়।’
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গত শুক্রবার রাতে অক্টোবর মাসের ২ তারিখে ইস্তাম্বুলে অবস্থিত সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক খাশোগি হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সৌদি সরকার স্বীকার করেছে।
কিন্তু খাশোগি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সৌদি সরকারের দেয়া ব্যাখ্যার সাথে তুরস্ক পুরোপুরি একমত হতে পারেনি। তুর্কি সরকারের একজন উচ্চ পর্যায়ের সূত্র মিডেল ইস্ট আইকে জানিয়েছেন, প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণের উপর ভিত্তি করে এমনটি মনে করা হচ্ছে যে, সাংবাদিক খাশোগিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
এর পূর্বে একটি তুর্কি সূত্র মিডেল ইস্ট আইকে জানিয়েছিল, সৌদি কনস্যুলেটে ১৫ সদস্যের একটি ঘাতক দল খাশোগিকে নির্যাতন করে হত্যা করে এবং তার লাশ টুকরো টুকরো করে এমন প্রমাণ তুর্কি সরকারের নিকট রয়েছে। এবং খাশোগিকে হত্যা করতে তারা মাত্র ৭ মিনিট সময় নিয়েছিল বলেও তুর্কি সূত্র জানায়।
শীর্ষনিউজ/এম
তবে সেসময় রিয়াদ দাবী করেছিল যে, খাসোগি তার প্রয়োজনীয় কাজ সেরে সৌদি কনস্যুলেট ত্যাগ করেছিল।
খাসোগির অন্তর্ধানের দুদিন পরে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স সালমান বার্তা সংস্থা ব্লুমবার্গকে খাসোগি সৌদি কনস্যুলেট ত্যাগ করেছিল জানিয়ে বলেন, ‘হ্যাঁ, তিনি সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরে নেই।’
হারিয়ে যাওয়া মৃতদেহ
গত সপ্তাহজুড়ে তুর্কি তদন্তকারী কর্মকর্তারা খাসোগির মৃতদেহের টুকরোগুলো উদ্ধারের জন্য ব্যাপক তদন্ত চালিয়েছিল।
তুরস্কের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা খাসোগি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন লিখেছেন কিন্তু তা নিহত খাসোগির দেহাবশেষ উদ্ধার হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রকাশ করা হবে না বলে মিডেল ইস্ট আই একটি সূত্রে জানতে পেরেছে।
খাসোগি খুনের শিকার হয়েছেন সৌদি সরকার এমনটি স্বীকার করলেও তার মৃতদেহের সাথে কি ঘটছে সে সম্পর্কে কোনো তথ্য দেয়নি।
মিডেল ইস্ট আই আরেকটি সূত্রে জানতে পেরেছে যে, খাসোগির শরীরে মরফিন জাতীয় মাদক প্রবেশ করানো হয়েছিল এবং এর পরেই তাকে খুন করা হয়েছিল।
শুক্রবার তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান সৌদি বাদশা সালমানের সাথে খাসোগি নিহত হওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তারা খাসোগি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের বিষয়ে একে অপরকে সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করেন।
এদিকে সৌদির একজন আইন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, খাসোগি হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার দায়ে ১৮ জন সন্দেহভাজনকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
খাসোগি হত্যাকাণ্ডের জড়িতরা
খাসোগি হত্যাকাণ্ডের সাথে সাথে জড়িত থাকার দায়ে সৌদি তদন্তকারী কর্মকর্তাগণ দেশটির উল্লেখযোগ্য দুজন ব্যক্তিকে সন্দেহের আওতায় এনেছেন। তারা হলেন- সৌদি ডেপুটি গোয়েন্দা প্রধান আহমেদ আল-আসিরি এবং ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের একজন শীর্ষ পরামর্শক সাউদ আল-কাহটানি। তাদের দুজনকেই ইতোমধ্যেই পদচ্যুত করা হয়েছে।
তথাপি সাউদ আল-কাহটানি এর পূর্বে জানিয়েছিলেন যে, তিনি শুধুমাত্র ক্রাউন প্রিন্সের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করেন।
হত্যার শিকার হওয়ার পূর্বে ২০১৭ সালে খাসোগি মিডেল ইস্ট আইকে বলেছিলেন যে, সৌদি আরবের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্কের বিষয়ে কোনো ধরনের লেখালেখি করা থেকে তাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এমন তথ্য তিনি সাউদ আল-কাহটানির মাধ্যমে জেনেছিলেন।
আন্তর্জাতিক চাপ
ট্রাম্প যিনি সৌদি বাদশা সালমান এবং ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে একটি উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন, তিনি খাসোগি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সৌদি সরকারের দেয়া ব্যাখ্যায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে একে গ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন।
তবে ওয়াশিংটনসহ বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের অনেক নেতাই খাসোগি হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সৌদি সরকারের দেয়া ব্যাখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিক দলের সিনেটর লিন্ডসেই গ্রাহাম বলেন, ‘আমি খাসোগি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সৌদি আরবের দেয়া ব্যাখ্যায় সংশয় প্রকাশ করছি।’
একই সাথে ডেমোক্রেটিক দলের নেতা এডাম স্কিফ তার টুইটার একাউন্টে লিখেন, ‘সৌদি সরকারের দেয়া ব্যাখ্যা মতে ১৫জন ব্যক্তির সাথে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে খাসোগি নিহত হয়েছেন, এমন মত গ্রহণযোগ্য নয়। খাসোগি যাদের সাথে ধস্তাধস্তি করেছেন তাদেরকে সেখানে তার জীবন নিয়ে নেয়ার জন্যই প্রেরণ করা হয়েছিল।’
যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেমনটি বলেছিলেন, এটি একটি ভয়ঙ্কর কাজ এবং এ কাজে জড়িতদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা উচিত।’
ইতোমধ্যে জাতিসংঘের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন যে, মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস ‘খাসোগি হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরে তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।’
জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, ‘তিনি আশা করেন খাসোগি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনের জন্য একটি স্বচ্ছ তদন্ত কাজ চালানো হবে এবং দোষীদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।’