জাতীয় / ঢামেকে মারধরের শিকার সেই ছাত্রলীগ নেতা অনশনে
বৃহস্পতিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:২০:৫৫ অপরাহ্ন
ঢামেকে মারধরের শিকার সেই ছাত্রলীগ নেতা অনশনে
রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিজ সংগঠনের নেতাকর্মীদের দ্বারা মারধরের শিকার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি রুহুল আমিন অনশন করছেন। এ ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী।
অন্যদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস রুহুল আমিনের শাস্তি দাবি করেছেন। তার দাবি, রুহুল আমিন তার অন্তঃসত্ত্বা ভাবির গায়ে হাত তোলায় এমন অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, বুধবার রুহুল আমিনের ভাবির মা ঢাকা মেডিকেল কলেজে ইন্তেকাল করেন। একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিতের মা। রাত সাড়ে ১১টার দিকে রুহুলকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে মায়ের লাশ নিতে যান রুহুলের ভাবি।
অন্যদিকে অসুস্থ মাকে দেখতে হাসপাতালে আসেন সনজিতের বড় ভাই। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজের নতুন ভবনের লিফটে ওঠেন। সেখানে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত লোক ওঠায় লিফটি আর কাজ করছিল না। তখন কাকে রেখে কে নামবে- এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত।
পরবর্তীতে মারধরের শিকার হলে রুহুল আমিনকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা দেয়া হয় এবং পরে রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরবর্তী ঘটনার বর্ণনায় হামলার শিকার ছাত্রলীগ নেতা রুহুল আমিন যুগান্তরকে বলেন, ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিতের ভাই পরে এসে লিফটে ওঠে। তার সঙ্গে আরও ৫-৬ জন লিফটে ওঠে। এতে লিফট বন্ধ হয়ে যায়। পরে লিফট সচলের জন্য তাদের দু’একজনকে নেমে যেতে বললে তারা আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয় এবং ধাক্কা দেয়। আমার ভাবি অন্তঃসত্ত্বা ছিল। তারা তার গায়েও হাত দেয়। এরপর সনজিত এসে তার নেতাকর্মীদের নিয়ে আমাকে প্রথম দফায় মারধর করে। ক্যাম্পাস এবং রাজনীতিতে জুনিয়র হয়েও সে আমার গায়ে হাত দেয়।
তিনি বলেন, কিছুক্ষণ পর তার অনুসারীরা এসে আমাকে ‘শিবির’ বলতে বলতে মেরে ৮ তলা থেকে নিচে নামায়। আমার ভাবির মায়ের লাশ দেখতে যারা এসেছিল, তাদের ৮-৯ জনকেও মারধর করে। তাছাড়া ভাবির মায়ের লাশ তারা আটকে রাখে। এ ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমি অনশনে থাকব, বিচার না পেলে সুইসাইড করব।
তবে এ ঘটনা অস্বীকার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস যুগান্তরকে বলেন, আমার মা গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। তাকে দেখতে আমার ভাই এবং বৌদি (ভাবি) মেডিকেলে আসে। লিফট দিয়ে ওপরে ওঠার সময় রুহুল আমিন ও তার ভাই এস এম আব্দুর রহিম আমার ভাইকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।
তিনি বলেন, এমনকি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা আমার বৌদির গায়েও তারা হাত দেয়। এরপর ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ক্যাডার নিয়ে আসে আমার ভাইকে মারধর করার জন্য। আমি গিয়ে কারণ জানতে চাইলে আমারও ওপরও তারা ক্ষিপ্ত হয়। এ নিয়ে পরবর্তীতে জুনিয়রদের সঙ্গে তার হাতাহাতি হয়েছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।
এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা সনজিতের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে রুহুল আমিনের পরিবার।
এ বিষয়ে রুহুল আমিনের বড় ভাই এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি এস এম আব্দুর রহিম যুগান্তরকে বলেন, রাজনীতি করার বাইরেও তো আমরা মানুষ। এত নির্মম, এত বর্বর মানুষ হতে পারে না। কারও লাশ কাঁধ থেকে নামিয়ে এভাবে কাউকে মারা কোনো সভ্য সমাজের কাজ হতে পারে না।
তিনি বলেন, যখন রুহুলকে মারছে, আমি ফেরাতে গেলে তারা আমাকেও মারধর করে। চোখের সামনে আমার ছোট ভাইটাকে মারছিল। আমি আর্তনাদ করেছি, ওকে ছেড়ে দেয়ার জন্য। কেউ আমার ভাইকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। সাংগঠনিকভাবে বিচার চাই। আর প্রশাসনিকভাবে আমরা হত্যার উদ্দেশ্যে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এ ঘটনার বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী যুগান্তরকে বলেন, এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিতকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে তাকে লিখিতভাবে এ ঘটনার জবাব দিতে বলা হয়েছে। তার থেকে পাওয়া জবাব এবং আমাদের নিজস্ব তদন্ত অনুযায়ী পরবর্তীতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।