বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল, ১৪৪৫ | ০৯:০০ পূর্বাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ ১২:০৩:৪১ অপরাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

এত লোককে মাসের পর মাস আশ্রয় দেয়া সম্ভব না

বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার ছয় মাস পার হচ্ছে। ছয় মাস আগে যখন বাংলাদেশে তারা আশ্রয় নিয়েছিল, তখন কক্সবাজারের মানুষ তাদের আশ্রয় দিয়েছিল, নানাভাবে সাহায্য করেছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের আসা অব্যাহত রয়েছে। একই সাথে কবে তাদের ফেরত নেয়া হবে সেটা নিশ্চিত নয়। এমন অবস্থায় স্থানীয় মানুষ যারা তাদের আশ্রয় দিয়েছিল তারা বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়েছে? এ নিয়ে বিবিসি বাংলায় শনিবার বিকেলে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন শীর্ষনিউজ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে উখিয়ার বালুখালিতে। এখানকার এক বাজারে একটি চায়ের দোকানে দেখলাম - ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে জোর আলোচনা চলছে, বিষয় মিয়ানমার থেকে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশে সর্বদক্ষিণের এই জেলা কক্সবাজার গত কয়েক মাস ধরে বিশ্ববাসীর নজরে রয়েছে রোহিঙ্গাদের কারণে। বিশেষ করে কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া উপজেলায় লাখ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়ার কারণে স্থানীয় মানুষের জীবনে যে একটা সার্বিক পরিবর্তন এসেছে, সেটা এখানকার মানুষের সাথে কথা বললেই বোঝা যায়। মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন একজন কৃষক। ছয় মাসে তার জীবনে কী প্রভাব পড়েছে - তা তিনি বেশ অসন্তোষ নিয়েই ব্যাখ্যা করছিলেন। তিনি বলছিলেন, ‘তাদের (রোহিঙ্গা) থাকার জায়গা করতে যেয়ে চাষের কোনও জমি নেই এখন। গাছ-পালা কেটে একাকার করে ফেলেছে। আমাদের এখন কোনও কাজ নেই।’ মো. শাহাবুদ্দিন বলছিলেন দিনমজুরের কাজ এখন আর স্থানীয়রা পাচ্ছে না। কারণ রোহিঙ্গারা এসে অল্প টাকায় সব কাজ করছে। ২০১৭ সালের অগাস্টের শেষ সপ্তাহে যখন রোহিঙ্গারা দলে দলে মিয়ানমার বাংলাদেশ সীমান্তের নাফ নদী পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছিলো, তখন কারো ধারণা ছিল না কী সংখ্যায় তারা আসবে এবং কতদিনের জন্য তারা বাংলাদেশে থাকবে। বিবিসি বাংলার প্রতিবেদক ফারহানা পারভীন বলেন, আমি গত ছয় মাসে দুবার এই এলাকায় এসেছি প্রতিবেদন তৈরির জন্য। তখন আমি দেখেছি মানুষের মধ্যে একটা মানবিকতা বোধের কারণেই অনেকেই রোহিঙ্গাদের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়েছেন, তাদের আশ্রয় দিয়েছেন। কিন্তু ছয় মাস পরে পরিস্থিতি এবারে ভিন্ন। স্থানীয় একজন বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলছিলেন, ‘বিশাল জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটাতে যেয়ে আমাদের স্থানীয়দের ওপর বিরাট চাপ পড়ছে।’ তিনি বলছিলেন, ‘ধরেন এখানে ১০ লাখ রোহিঙ্গা আছে, ৬০ হাজার এনজিও কর্মী। রাস্তায় বের হলে কোনও যানবাহন পাওয়া যায় না। আগে যেখানকার ভাড়া ছিল ২০ টাকা - এখন সেখানে ৪০ টাকা ভাড়া।’ রবিউল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল- যখন তারা এসেছিল তখন বলেছিলেন মানবিকতার কারণে তাদের আশ্রয় দিচ্ছেন, তাহলে এখন এমন কথা কেন? উত্তরে তিনি বললেন, ‘কয়েক মাসের জন্য আশ্রয় দেয়া যায়, কিন্তু মাসের পর মাস তো সম্ভব না।’ ‘প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বারবার বিলম্বিত হচ্ছে এটাও ঠিক না। আমরা চাই, তাদের মিয়ানমারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে দ্রুত যাতে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।’ বিবিসির এই প্রতিবেদক বলেন, কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফ, বালুখালি, কুতুপালং এর নানা পেশা, শ্রেণির মানুষের সাথে আমি কথা বলেছি। তাদের সাথে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে, এসব মানুষ প্রথম পর্যায়ে মানবিকতার কারণে তাদের সাহায্য করলেও এখন সরকারি হিসেবে সাত লখের মতো রোহিঙ্গা এবং কয়েক হাজার উন্নয়ন কর্মীর চাপে এই এলাকাতে তাদের দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিকতা হারিয়ে গেছে। মুদি দোকানদার মো. রফিক বলছিলেন সব জিনিসের দাম বেড়েছে। ‘আগে ময়দার দাম ছিল ২৫ টাকা এখন সেটা ৩৫ টাকা হয়েছে। ৩০ টাকা দিয়ে লাকড়ি (জ্বালানী কাঠ) কিনতাম, এখন সেটা দুইশ টাকা হয়েছে। চালের দাম ৪৫ টাকা। শাক-সবজির দাম অনেক। চারিদিক দিয়ে সমস্যায় আছি আমরা।’ -বলেন ব্যবসায়ী রফিক। ঘুনধুম হাইস্কুলে একজন শিক্ষক আব্দুল গফুর। তিনি নতুন এক তথ্য দিলেন। তিনি বলছিলেন, স্কুলের নবম এবং দশম শ্রেণির অনেক শিক্ষার্থী এখন পার্ট টাইম কাজ করছে বিভিন্ন এনজিও’র সাথে। ফলে তাদের পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তিনি বলছিলেন, ‘এখন যা চলছে তাতে করে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে। মেধাশূন্য হয়ে পড়বে সব এক সময়।’ বাংলাদেশের রোহিঙ্গাদের প্রবেশ আগের মতো প্রতিদিন শত শত না হলেও একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়নি। এরই মধ্যে চলছে মিয়ানমারে তাদের ফেরত পাঠানোর আলোচনা। কিন্তু কক্সবাজারের মানুষের মনে আগের সেই সহমর্মিতা ছাপিয়ে এখন ঝরে পড়ছে চাপা অসন্তোষ। কখনো সেটা প্রকাশ পাচ্ছে প্রকটভাবেই। তারা এখন চাচ্ছেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যেন তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়, যে প্রক্রিয়া একই সাথে তাদের আগের স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তা দেবে।





আরো খবর