শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৯ জিলকদ, ১৪৪৫ | ০৭:১৯ পূর্বাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ ০৯:০০:৪৫ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

পুনর্বাসনে সরকারের প্রকল্প নেই: ভিক্ষার নামে বাণিজ্য চলছে

রাজধানী ঢাকাতে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ ও ভিক্ষুক পুনর্বাসনে এখন সরকারের কোনো প্রকল্প নেই। ফলে একদিকে যেমন ভিক্ষুকের সংখ্যা কমছে না অন্যদিকে ভিক্ষাবৃত্তি ঘিরে তৈরি হচ্ছে একধরণের সিন্ডিকেট। অভিজাত এলাকাগুলোতে রাস্তার পাশে ভিক্ষুক নিষিদ্ধের সাইনবোর্ড থাকলেও অনেক সময় দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। বারিধারায় এমন একটি সাইনবোর্ডের নিচেই থালা হাতে ভিক্ষায় বসেছেন এক প্রতিবন্ধি ব্যক্তি। তার পাশেই দাঁড়ানো আরেকজন ভিক্ষুক। প্রতিবন্ধী হলেও এশারত আলী নামে সেই ভিক্ষুক সতর্ক হলেন ক্যামেরা দেখার পর। ফোনে কারো সঙ্গে কথা বললেন তিনি। এর প্রায় ২০ মিনিট পর সেখানে এশারতকে নিতে এলো একটি রিকশা। এশারতকে রিকশায় তুলে নিলেন রিকশাচালক। তার কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেলো ৫ হাজার টাকায় এশারত আলী ভাড়া থাকেন রাজধানীর বাড্ডায়। সেখান থেকে গুলশান-বারিধারায় ভিক্ষার নির্দিষ্ট স্পটে যেতে প্রতিদিন খরচ করেন ১২০ টাকা। সবমিলিয়ে মাসে তার খরচ হয় কমপক্ষে বিশ হাজার টাকা। এই টাকা তিনি জোগাড় করেন ভিক্ষা করেই। এদিকে রাজধানীর গুলশান এলাকায় দেখা মিললো যানজটে আটকা পড়া গাড়ি থেকে ভিক্ষা করছেন অনেকেই। ভিক্ষুক নিষিদ্ধ এলাকাতেই যখন এই দশা, তখন রাজধানীর অন্য এলাকার অবস্থা সহজেই অনুমান করা যায়। 'মৌসুমী ভিক্ষুক' রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানের সামনে প্রতি শুক্রবার জুম্মার নামাজের আগে জড়ো হন প্রায় অর্ধশত ভিক্ষুক। যাদের একটা বড় অংশই ভিক্ষা করেন সপ্তাহে একদিন। এছাড়াও অনেকেই আছেন, যারা সামর্থ থাকা সত্ত্বেও কাজ না করে বিভিন্ন অজুহাতে ভিক্ষাকেই অর্থ উপার্জনের উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছেন। আকলিমা নামে একজন ভিক্ষুক বলছিলেন, "আমি তো ভাঙ্গারি দোকানে কাজ করি। শুক্রবার এট্টু আহি ভিক্ষা করতে। এক/দুই ঘণ্টা ভিক্ষা করি। এট্টু হাতখরচ হয়। আমারে ভিক্ষুক কওন যায় না। যারা হারাদিন ভিক্ষা করে, হ্যারাই ভিক্ষুক।" ভিক্ষুকদের মধ্যে দেখা গেলো, এদের একটা বড় অংশই দেখতে বেশ শক্তপোক্ত। কিন্তু এরপরও কাজে না গিয়ে ভিক্ষার পথে নেমেছেন তারা। রাজধানীর বাইতুল মোকাররম মসজিদের সামনে গিয়ে দেখা যায়, এরকম অনেকেই নাছোড়বান্দা হয়ে ভিক্ষা চাইছেন মুসল্লিদের কাছে। এতে মুসল্লিরা বিরক্ত হলেও তারা অনেকটা অসহায়। একজন মুসল্লি বলছিলেন, "এদের তো অনেকে কম বয়সী। কাজ করতে পারবে। কিন্তু করবে না। অনেকে আবার বাচ্চাদেরও নিয়ে এসেছে। ভিক্ষার জন্য এরা খুবই জবরদস্তি করে। ভিক্ষা না দিলে অনেক সময় গালাগালও করে। কিন্তু এদেরকে ভিক্ষা দেই না। যারা অসহায় তাদের দেই।" পুনর্বাসনের উদ্যোগ কোথায়? রাজধানীতে ভিক্ষুকের সংখ্যা কত তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। সত্যিকারের ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের জন্যও এখন আর কোন উদ্যোগ নেই। তবে রাজধানীতে ভিক্ষুকদের নিয়ে প্রথম একটি জরিপ করা হয়েছিলো ২০১১ সালে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের সেই জরিপে তথ্য সংগ্রহ করা হয় প্রায় ১০ হাজার ভিক্ষুকের। এদের মধ্যে বিভিন্ন জেলায় পুনর্বাসনের জন্য নির্বাচিত করা হয় ২ হাজার ভিক্ষুককে। তবে পুনর্বাসিত হয় মাত্র ৬৬ জন। প্রকল্পটিও পরে বন্ধ করে দেয়া হয়। কেন সেই প্রকল্প ব্যর্থ হলো আর কেনইবা ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের আওতায় আনা গেলো না, সে বিষয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম) আবু মোহাম্মদ ইউসুফ বলছিলেন, "কাউকে ভ্যান, কাউকে রিকশা, কাউকে সেলাইমেশিন এরকম বিভিন্নভাবে উদ্যোগ নিয়ে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হয়েছিলো। কিন্তু কিছুদিন পর দেখা গেলো, তারা ঐসব ভ্যান, রিকশা বিক্রি করে আবারো ভিক্ষায় চলে আসছে। ফলে প্রকল্পটা আর অগ্রসর হয়নি। তবে এখন আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রত্যেকটা জেলায় এই প্রকল্প শুরু করার।" কিন্তু যারা পেশাদার ভিক্ষুক তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে? সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরীন মনে করেন, ভিক্ষুক নির্মূলে পুনর্বাসনের সঙ্গে সঙ্গে পেশাদার ও মৌসুমী ভিক্ষুকদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলছিলেন, "অনেকেই ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। আবার অনেককে বাণিজ্যিকভাবেও ভিক্ষাবৃত্তিতে ব্যবহার করছে একটা সিন্ডিকেট। তাদেরকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।...পাশাপাশি ভিক্ষার যে মূল কারণ দারিদ্র সেটার দিকে নজর দিতে হবে। তাদের পুনর্বাসনের আওতায় আনতে হবে।" সমাজসেবা অধিদপ্তরও মনে করে, ঢাকায় ভিক্ষাবৃত্তি ঘিরে একধরনের ব্যবসা তৈরি হয়েছে। রাজধানীসহ সারাদেশেই ভিক্ষাবৃত্তি নির্মূলে এখন বিশদ প্লান নিয়ে এগুতে চায় সংস্থাটি। ইউসুফ বলছিলেন, "ভিক্ষুক নির্মূলে কী ধরনের প্রকল্প বা কর্মসূচি নিতে হবে সে বিষয়ে আমরা একটা বিশদ নীতিমালা তৈরি করেছি। এটি চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে পুরোদমে একসঙ্গে সারাদেশে ভিক্ষুক পুনর্বাসনের কাজ শুরু হবে। এই নীতিমালায় পেশাদার ভিক্ষুকদের চিহ্নিত করে শাস্তির বিষয়টিও রয়েছে।" সূত্র: বিবিসি বাংলা।





আরো খবর