বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১ জিলকদ, ১৪৪৫ | ০৮:১৭ অপরাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৭ ১১:৪৭:১০ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

রোহিঙ্গা সংকট: এখনই প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা

ঢাকা: কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা এখন স্থানীয় জনগণের তুলনায় বেশি হওয়ায় সেখানে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের দীর্ঘমেয়াদে রাখলে কী করতে হবে সেই পরিকল্পনা এখনই করা প্রয়োজন বলছেন বিশ্লেষকেরা। মিয়ানমারে সেনা অভিযান ও নির্যাতনের মুখে সম্প্রতি প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, এর আগে আরো প্রায় সাড়ে তিন লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। সব মিলিয়ে প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে রয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকটকে বাংলাদেশের জন্য এক নজিরবিহীন সংকট বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, এদেরকে দীর্ঘকাল বাংলাদেশে রাখা সম্ভব নয়। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের মধ্যে যেসব দেশী-বিদেশী ত্রাণ সংস্থা কাজ করছে ব্র্যাক তার অন্যতম। ইতোমধ্যে ব্র্যাক রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য, আশ্রয়, বিশুদ্ধ খাবার পানি, চিকিৎসা এবং পয়নিষ্কাশন সুবিধার মতো জরুরি চাহিদা মেটাতে কাজ করছে। কিন্তু দশ লাখের বেশী রোহিঙ্গাকে যদি আরও দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশে রাখতে হয়, তখন ত্রাণ সংস্থাগুলো কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে? আলাপকালে ব্র্যাকের উর্ধ্বতন পরিচালক আসিফ সালেহ বলছিলেন, স্থায়ী জায়গায় নিয়ে যাবার পর আরো দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার প্রয়োজন আছে। এখানে প্রোটেকশন (রক্ষা করার) ব্যবস্থা দরকার। কারণ, এখানে কোনো আইন নেই। নারীরা আছেন , তারা ভায়োলেন্সের শিকার হচ্ছেন, ট্রাফিকিংয়ের শিকার হচ্ছেন। তাদের নানাভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে-সে জায়গায় কাজ করা জরুরী। প্রথম ছয়মাসের জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সাহায্য করছে, কিন্তু তারপরে কী হবে-সে জায়গায় কাজ করার প্রয়োজন আছে। সালেহ জানান আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো দীর্ঘমেয়াদে রোহিঙ্গাদের সবধরনের সাহায্য করতে এখনো সেভাবে তৈরি নয়, কিন্তু সবাই চিন্তা করছে এভাবে তৈরি হতে হবে। কারণ এ বিষয়ে কূটনৈতিক সমাধান শীগগিরই হবে এমনটা আমরা কেউই মনে করছে না বলে জানান সালেহ। রোহিঙ্গাদের জন্য কাজ করতে যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন হচ্ছে সেই অর্থ সংস্থান কিভাবে করছে ব্র্যাক? আসিফ সালেহ জানান, যেকোনো বিপর্যয়ের জন্য ব্র্যাকের নিজস্ব অর্থনৈতিক তহবিল আছে। প্রথমে নিজস্ব অর্থায়নে দেড় মিলিয়ন ডলারে কাজ শুরু করলেও ব্র্যাক এরপর তহবিল আনার চেষ্টা করে বাইরে থেকে। আমাদের ছয় মাসের বাজেট ছিল ১৯ মিলিয়ন ডলার। ১১ মিলিয়ন ডলারে কমিটমেন্ট পেয়েছি, আমরা চেষ্টা করছি -এটা আনার। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ নানান ধরনের কর্মসূচিতে ব্র্যাক কাজ করলেও এই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করার মধ্যে কোন চ্যালেঞ্জগুলো কঠিন বলে মনে হচ্ছে? সালেহ বলছিলেন এর চ্যালেঞ্জটা অন্যরকমের। অন্যান্য সংস্থা থেকে যারা এসেছেন, অনেকে সিরিয়া সংকটে কাজ করেছেন, নাইজেরিয়ার সংকট দেখেছেন। মানবিক সংকটে কাজ করা বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন- রোহিঙ্গা সংকট হচ্ছে স্মরণকালের মধ্যে সবচেএ ভয়াবহ একটা সংকট। এত দ্রুত এত বড় জনগোষ্ঠী এত ছোট জায়গায় কখনো আসেনি। স্থানীয় জনগণের সংখ্যা কিন্তু কম ছিল, টেকনাফে দুই লাখ, উখিয়ায় দেড় লাখের মতো-সাড়ে তিনলাখের মতো স্থানীয় জনগণ। এখন রোহিঙ্গাদের সংখ্যা তাদের তুলনায় বেশী, স্থানীয় জনগণ সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছেন। আর এ কারণে স্থানীয় জনগণের জন্য কাজ শুরু করা জরুরী হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক আসিফ সালেহ। প্রথমে যারা সহানুভূতি নিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন, সেই জায়গাগুলোতে সেটা কমছে দ্রুত। একটা টেনশান তৈরি হচ্ছে। স্থানীয়রা দেখছে তাদের কাজ আছে, কিন্তু মজুরি কম। ফলে সম্পর্কের অবনতি বা একটা সংকট তৈরি হবার আশঙ্কাও রয়েছে বলে মনে করেন সালেহ। এমনকি কাছাকাছি থাকার কারণে, স্বাস্থ্য নিয়েও চিন্তিত স্থানীয় জনগণ। তারা মনে করে রোহিঙ্গাদের কলেরা হলে তাদেরও হবে। সেখানে রোহিঙ্গারা নিজেদের চাহিদা মেটাতে গাছ কাটার ফলে বনভূমির পর বনভূমি উজাড় হয়ে যাচ্ছে, ফলে পরিবেশ বিপর্যয়েরও আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সালেহ।





আরো খবর