/ অপহরণ থেকে উদ্ধার হয়েও নির্মম মৃত্যু : শোকে কাতর পরিবার
বুধবার, ১৮ জুলাই ২০১৮ ০৬:৪২:৫১ পূর্বাহ্ন
অপহরণ থেকে উদ্ধার হয়েও নির্মম মৃত্যু : শোকে কাতর পরিবার
টাঙ্গাইলে মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত নারায়ণগঞ্জের তিন পরিবার শোকে কাতর। নিহত জান্নাতুল ফেরদৌস বন্যাসহ তার খালাতো ভাই ফারুক ও মামা সিরাজুলকে হারিয়ে শোকে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে পরিবারের প্রতিটি সদস্য।
বুধবার সকালে সোনারগাঁওয়ে নিহতদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় কান্নার রোল। মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজন নিহত হওয়ায় প্রতিবেশীরা এসে তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে অপহৃত জান্নাতুল ফেরদৌস বন্যাকে রাজশাহী থেকে উদ্ধার করে ফেরার পথে মঙ্গলবার ভোররাতে টাঙ্গাইলে মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে তিনজন নিহত হন। এ সময় সোনারগাঁও থানা পুলিশের চার সদস্য আহত হন।
নিহত সিরাজুল ইসলামের ভাতিজা আতিকুর রহমান জানান, ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার মৃত আমির হোসেনের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস বন্যাকে নিয়ে তার মা সাইদা খানম সোনারগাঁওয়ের হাড়িয়া চৌধুরীপাড়া এলাকায় মামার বাড়িতে বসবাস করতেন। ছয় মাস আগে উপজেলার বারদী ইউনিয়নের দলরদী গ্রামের সৌদি প্রবাসী আল আমিনের সঙ্গে মোবাইলফোনে বন্যার বিয়ে হয়। কোরবানির ঈদের পর তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। এদিকে সম্প্রতি রাজশাহীর পিকআপ চালক রফিকুল ইসলাম রকির সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্যার প্রেমের সর্ম্পক গড়ে উঠে। পরে গত ১৬ জুন (ঈদের দিন) বিকেলে প্রেমের টানে বন্যা রাজশাহীর প্রেমিক রকির কাছে স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে চলে যায়। ঘটনার দুই দিন পর ১৮ জুন বন্যার মা ছাইদা খানম বাদি হয়ে সোনারগাঁ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সেদিনই বন্যা তার প্রেমিক রকির মোবাইলফোন থেকে কল করে ভালো আছে বলে মাকে জানায়। পরে মোবাইলফোনের সূত্র ধরে সোনারগাঁ থানা পুলিশের এসআই তানভীর আহম্মেদের নেতৃত্বে এএসআই হাবিবুর রহমান হাবিবসহ একটি দল গত রোববার বন্যাকে উদ্ধারের জন্য রাজশাহীতে যান। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ছিলেন বন্যার মামা সিরাজুল ইসলাম, খালাতো ভাই ফারুক হোসেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে প্রেমিক রকি পালিয়ে যায়। তবে ঘটনাস্থল থেকে বন্যাকে উদ্ধার করে পুলিশ।
বন্যাকে উদ্ধার করে ফেরার পথে টাঙ্গাইলের কুমুদিনি হাসপাতাল এলাকায় মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে জান্নাতুল ফেরদৌস বন্যা, তার খালাতো ভাই ফারুক (৪২) ও মামা সিরাজুল ইসলাম (৫৫) নিহত হন। এ সময় পুলিশের এসআই তানভীর আহম্মেদ, এএসআই হাবিবুর রহমান, কনস্টেবল আজহারুল ইসলাম ও গাড়িচালক আক্তার হোসেন আহত হন। আহতদের প্রথমে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নিহত ফারুকের ছেলে অনিক বলেন, ‘সোমবার বাবা আমাদের ফোন করে জানায় বন্যা খালাকে খুঁজে পাওয়া গেছে। তাকে সাথে নিয়ে ফেরার পথে আছেন। সন্ধ্যার পরই রওনা দেবেন। মঙ্গলবার সকালে শুনি আবার বাবা নেই।’ এ বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনিক।
তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি শোনার পর থেকে চাচি ও আমার চাচাতো ভাই-বোন বারবার শোকে মূর্ছা যাচ্ছেন। তাদের কান্না কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। সোমবারও চাচার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। চাচা নেই, এটা মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে।’ এ বলে ফের কান্নায় ভেঙে পড়েন।
সোনারগাঁও থানার ওসি মো. মোরশেদ আলম বলেন, ‘নিহত বন্যার মা বাদি হয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে মোবাইলফোনের সূত্র ধরে রোববার আমাদের একটি টিম বন্যাকে উদ্ধারের জন্য রাজশাহী যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে ফেরার পথে টাঙ্গাইলের কুমুদিনি এলাকায় রাস্তার স্প্রিড বেকারে প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে তিনজন নিহত হন। এ সময় পুলিশের তিন সদস্য ও গাড়িচালক আহত হন। আহতদের প্রথমে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’
ওসি বলেন, ‘লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’