কুষ্টিয়ায় বহুল আলোচিত ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনায় যুবলীগ নেতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কলেজ পরিচালনা পর্ষদ ও কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জের ধরে ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনিসুর রহমান আনিস (৩৫), তার ক্যাডার কয়া গ্রামের হৃদয় আহমেদ (২০) ও একই উপজেলার ছেঁউড়িয়া মন্ডলপাড়া এলাকার সবুজ হোসেন (২০)। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া গ্রামে বাঘা যতীনের বাস্তুভিটায় অবস্থিত কয়া মহাবিদ্যালয়ে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের পুরোধা বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুর করে কয়েকজন দুর্বৃত্ত। কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের রেশ কাটতে না কাটতে বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনায় দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এ অবস্থায় অপরাধীদের ধরতে মাঠে নামে পুলিশ। শুক্রবার সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী কয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনিসুর রহমান আনিসকে গ্রেফতার করা হয়। একই সঙ্গে ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী কয়া মহাবিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী খলিলুর রহমানকে জিজ্ঞাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খলিলুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে আনিসুর রহমান আনিস, হৃদয় আহমেদ, সবুজ হোসেন ও বাচ্চু নামে চারজন বাঘা যতীনের ভাস্কর্যের কাছে বসে গল্প করছিলেন। এ সময় খলিলুর এত রাতে বসে থাকার কারণ জানতে চাইলে যুবলীগ নেতা আনিসুর রহমান আনিস তাকে বলেন, ‘আপনি কলেজ ক্যাম্পাসের ভিতরে থাকেন। এদিকে কিছু হলে আমরা দেখব।’ খলিলুর বলেন, আনিসের কথা শুনে তিনি ক্যাম্পাসের ভিতরে চলে যান।
এরপর রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি তিনবার হাতুড়িপেটার মতো শব্দ শুনে ক্যাম্পাসের বাইরে ছুটে গিয়ে দেখেন আনিস ও তার সহযোগীরা মোটরসাইকেলে পালিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, যুবলীগ নেতা আনিস প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, কয়া মহাবিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি তাঁতী লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট নিজামুল হক চন্নুকে ফাঁসাতে তিনি জেলা যুবলীগের শীর্ষস্থানীয় এক নেতার নির্দেশে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। আনিস পুলিশকে জানান, চন্নুকে হটিয়ে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি পদটি দখলে নিতে চান জেলা যুবলীগের ওই শীর্ষ নেতা। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভির আরাফাত বলেন, কলেজ ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙা হয়েছে বলে গ্রেফতার ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানতে পেরেছেন। তিনি বলেন, আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পুরো ঘটনা বেরিয়ে আসবে। এর পেছনে অন্য কারও মদদ আছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ সুপার বলেন, এ ঘটনায় জড়িত বাচ্চু নামে একজন এখনো পলাতক। তাকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল কুষ্টিয়া শহরে মানববন্ধন করেছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। এ ছাড়া ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। এদিকে বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় স্থানীয় যুবলীগ নেতার জড়িত থাকার ঘটনায় সংগঠনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। জেলা যুবলীগ সভাপতি রবিউল ইসলাম বলেন, তারা এ ঘটনায় বিব্রত। ঘটনা তদন্তে এরই মধ্যে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জেলা যুবলীগ। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অন্যদিকে গ্রেফতার তিন আসামিকে গতকাল বেলা ৩টার দিকে কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কুমারখালী থানার ওসি (তদন্ত) রাকিবুল হাসান বলেন, আসামিদের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।