রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ, ১৪৪৫ | ০৯:৩১ পূর্বাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


বৃহস্পতিবার, ১৭ জানুয়ারী ২০১৯ ০৬:০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

ব্রেক্সিট কেন? কী-ই বা ঘটছে

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর ব্রেক্সিট চুক্তি নাকচ হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা। তেরেসা মেকেও আস্থা ভোটের মুখোমুখি হতে হয়েছে। কাজেই ইউরোপ থেকে বেরিয়ে যেতে লন্ডনের হাতে সময় একেবারেই কম। কী ঘটবে এই সময়ে- ব্রেক্সিট কী? সংক্ষিপ্তভাবে বলতে গেলে ব্রেক্সিট বলতে বোঝায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ছে যুক্তরাজ্য। ব্রিটেনের ব্রি ও এক্সিট (প্রস্থান) মিলে ব্রেক্সিট শব্দটি গঠিত। অতীতে ইউরো মুদ্রা থেকে গ্রিকে বেরিয়ে আসাকেও বলা হয়েছিল গ্রেক্সিট। ২০১৬ সালের দিকে ব্রেক্সিট শব্দটি অক্সফোর্ড অভিযানে স্থান পায়। থিংকট্যাংক প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ ইনফ্লুয়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা পেটার উইল্ডিং ২০১২ সালের মে মাসে ব্রেক্সিট শব্দটি লিখেছেন। তার আট মাস আগে তখনকার প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ঘোষণা করেন, ইউরোপ থেকে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ ঘটবে কিনা, তা নিয়ে তিনি গণভোটের আয়োজন করবেন। কেন ব্রিটেন ইউরোপ ছাড়ছে? অনেক ব্রিটিশ নাগরিক নিজ দেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিধিনিষেধ মেনে চলা নিয়ে বেশ নাখোশ। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যে অভিবাসীদের সংখ্যা বাড়ি নিয়ে ব্রিটিশদের মধ্যে অস্বস্তি রয়েছে। ইইউর নিয়মানুযায়ী, ইউনিয়নের ২৮ দেশ ভিসা ছাড়াই এক দেশ থেকে আরেক দেশে চলাচল করতে পারে। তখনকার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন তার সরকারের প্রথম মেয়াদে ইইউর বাইরের দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের সংখ্যা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু ইউরোপীয় নাগরিকদের প্রবেশ ঠেকাতে পারেননি। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, দ্বিতীয় মেয়াদে ইইউভুক্ত দেশের নাগরিকদের যুক্তরাজ্যে প্রবেশে নিরুৎসাহিত করতে চার বছরের জন্য সুবিধা বন্ধ রাখার প্রস্তাব দেন। এতে ইউরোপীয় রাষ্ট্রপ্রধানের অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা সদস্য দেশের নাগরিকদের সুবিধা ভাতা দেয়ায় বৈষম্য হলে তা ইইউর প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে বলে দাবি তোলেন। আর এ কারণেই যুক্তরাজ্যকে ইইউতে রাখা না রাখার ব্যাপারে প্রশ্ন তৈরি হয়। ব্রেক্সিট প্রশ্নে ইইউভুক্ত নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়ে অভিবাসীদের সুবিধা সীমিত করাসহ চারটি সংস্কার প্রস্তাব দেন ক্যামেরন এবং পরবর্তী সময় সে প্রস্তাব নিয়ে ক্যামেরনের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেন ইইউ নেতারা। ইইউর সঙ্গে সমঝোতার পর দেশে ফিরে ব্রেক্সিটের জন্য গণভোটের তারিখ ঘোষণা করেন ক্যামেরন। ২০১৬ সালের ২৩ জুন ব্রিটেনের ইউরোপ ছাড়ার গণভোট হয়। ব্রিটেনের ইইউতে থাকা না থাকার প্রশ্নে দেশটির জনগণই ওই গণভোটে চূড়ান্ত রায় দেন। যাতে ৫১.৯ শতাংশ লোক ব্রেক্সিটের পক্ষে ও ৪৮.১ শতাংশ বিপক্ষে ভোট দেন। তিন কোটিরও বেশি লোক ভোট দিয়েছিলেন। ভোট পড়েছিল ৭১.৮ শতাংশ। ব্রিটেনের বিরোধী দলীয় নেতা জেরেমি করবিন। ছবি: এএফপি ভোট নিয়ে ব্রিটেনজুড়ে বিবাদ ইংল্যান্ডে ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দিয়েছে ৫৩.৪ শতাংশ। ওয়েলসও পক্ষে ভোট দেয়। সেখানে ইউরোপ ছাড়তে রায় দেয় ৫২.৫ শতাংশ ও থাকতে চেয়েছিল ৪৭.৫ শতাংশ। বিপরীতে স্কটল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার পক্ষে সায় দিয়েছিল। স্কটল্যান্ডের ৬২ শতাংশ লোক ইউরোপের সঙ্গে থাকতে চাইলেও ৩৮ শতাংশ ছিল বিপক্ষে। উত্তর আয়ারল্যান্ডের ৫৫. ৮ শতাংশ ব্রেক্সিটের বিপক্ষে, আর ৪৪.২ শতাংশ ইউরোপ ছাড়ার পক্ষে ভোট দেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন কী? সাধারণত ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আমরা ইইউ নামে চিনি। ২৮ দেশ মিলে একটি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অংশীদারত্ব হচ্ছে এ ইউনিয়ন। অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের যাত্রা শুরু হয়। এতে ইউরোপীয় দেশগুলো একসঙ্গে বাণিজ্য করার ও যুদ্ধ এড়িয়ে চলার প্রতিজ্ঞার কথা জানায়। পরে এটি একক মার্কেটে পরিণত হয়। এসব দেশের পণ্য ও লোকজন ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে মুক্তভাবে চলাফেরার সুযোগ পায়। বিষয়টি এমন দাঁড়িয়েছে যে, পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি দেশে পরিণত হয়েছে। ইউনিয়নের ইউরো নামে নিজস্ব মুদ্রা চালু আছে। ১৯ সদস্য রাষ্ট্র এ মুদ্রা নিজেদের দেশে ব্যবহার করে। কেবল তাই নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্ট আছে। জলবায়ু, পরিবহন, ভোক্তা অধিকার ও মোবাইল ফোনের চার্জসহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক বিস্তৃত নীতিমালাও রয়েছে ইউরোপের। ব্রিটেন কখন ইউরোপ ছাড়বে? ইউরোপ ছাড়তে ব্রিটেনকে লিসবন চুক্তির দারস্ত হতে হচ্ছে। এতে কোনো দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়তে চাইলে ঐকমত্যে পৌঁছাতে দুই বছর সময় দেয়া হয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে সরকার ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ ইইউ ছাড়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। কাজেই চলতি বছরের ২৯ মার্চ বেলা ১১টায় ইইউ থেকে ব্রিটেনের পূর্ণোচ্ছেদ ঘটবে। তবে ইউরোপীয় আদালতের আদেশে বলা আছে, এ প্রক্রিয়া বন্ধের সিদ্ধান্তও নিতে পারবে ব্রিটেন। ইউনিয়নের ২৮ সদস্য রাজি হলে সময় বাড়িয়েও নিতে পারবে তারা। কিন্তু সব পক্ষই এখন নির্ধারিত তারিখের দিকে তাকিয়ে আছে। তেরেসা মেও এটিকে ব্রিটিশ আইনের আওতায় নিয়ে এসেছেন। পার্লামেন্টের বাইরে ব্রেক্সিটবিরোধী বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি সত্যিই কি ইউরোপ-ব্রিটেনের বিচ্ছেদ ঘটছে? আইন অনুসারে আগামী ২৯ মার্চ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ছে ব্রিটেন। তাতে ইউরোপের সঙ্গে দেশটি কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারলেও বিচ্ছেদ ঘটবে। কাজেই ব্রেক্সিট বন্ধ করতে হলে ব্রিটিশ আইনে পরিবর্তন আনতে হবে। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ইউরোপীয় কোর্ট অব জাস্টিস রায় দিয়েছে, ইউনিয়নের বাকি ২৭ দেশের অনুমতি ছাড়াই ব্রিটেন অনুচ্ছেদ ৫০ বাতিল করতে পারবে এবং চলমান শর্তেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে থাকতে পারবে। একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ব্রেক্সিটে কী বিলম্ব হবে? ব্রিটেন যুক্তিযুক্ত কারণ দেখাতে পারলে ইইউ নেতারা সম্পর্কোচ্ছেদের সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। বুধবার এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে ইউরোপীয় কমিশনের মুখপাত্র বলেন, এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে সময় বাড়ানোর কোনো অনুরোধ আসেনি। যথাযোগ্য কারণে সময় বাড়ানোর অনুরোধ এলে সে ক্ষেত্রে ইইউ সদস্যভুক্ত ২৭ দেশের নেতারা ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী, ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার (ব্রেক্সিট) শেষ সময়সীমা আগামী ২৯ মার্চ। কিন্তু কী প্রক্রিয়ায় বিচ্ছেদ হবে সে বিষয়ে যুক্তরাজ্য এখনও চূড়ান্ত কোনো চুক্তিতে উপনীত হতে পারেনি। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে মঙ্গলবার দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে হাউস অব কমন্সে তার খসড়া ব্রেক্সিট চুক্তি উপস্থাপন করেছিলেন, ভোটে যা চরমভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। ৬৫০ সদস্যের নিম্নকক্ষে চুক্তিটি ৪৩২-২০২ ভোটে হেরেছে। আধুনিক যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো প্রধানমন্ত্রীর তোলা প্রস্তাব হাউস অব কমন্সে এত বড় ব্যবধানে হারল। ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রধান জ্যঁ-ক্লদ জাঙ্কার লন্ডনকে যত দ্রুত সম্ভব তাদের ইচ্ছার কথা পরিষ্কারভাবে জানাতে বলেছেন। ভোটের ফল দেখে নিদারুণ হতাশ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইইউর মধ্যস্থতাকারী মাইকেল বার্নিয়ের। ইইউ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সীমান্ত আছে। মের প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট চুক্তির যে বিষয়গুলো নিয়ে বিরোধীদের আপত্তি ছিল, তার অন্যতম এই সীমান্ত বা ব্যাকস্টপ। মে বিচ্ছেদের পরও যুক্তরাজ্যের অংশ নর্দান আয়ারল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের মধ্যে সীমান্ত বাণিজ্যে খুব একটা হেরফের করতে চাননি। মঙ্গলবারের ভোটের পর আয়ারল্যান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা এখন কোনো চুক্তি ছাড়াই বিচ্ছেদের প্রস্তুতি গ্রহণ জোরদার করবে।





আরো খবর