ফরাসি পণ্য বয়কট করা থেকে বিরত থাকার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্স। ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন জায়গায় ফরাসি পণ্য, বিশেষ করে ফরাসি খাদ্যপণ্য বয়কটের ডাক উঠেছে। এ ছাড়া হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের জন্য ফ্রান্সের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের আহ্বান জানানো হচ্ছে।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, বয়কটের জন্য এসব আহ্বান ভিত্তিহীন এবং অবিলম্বে এসব বন্ধ করা উচিত। পাশাপাশি আমাদের দেশের ওপর সব ধরনের হামলা, যেগুলো উগ্রবাদীদের মাধ্যমে সংঘটিত হচ্ছে, সেগুলোও বন্ধ করা উচিত।
এদিকে, ইসলাম ধর্ম ও মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সাম্প্রতিক মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বেশ কয়েকটি আরব বাণিজ্য সমিতি ফরাসি পণ্য বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।
চলতি মাসের শুরুতে ম্যাক্রোঁ ‘ইসলামপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদ’ বিরোধী লড়াইয়ের নামে ইসলাম নিয়ে কটূক্তি করার জেরে গোটা আরবজুড়েই ফরাসি পণ্য বর্জনের হিড়িক পড়েছে।
ম্যাক্রোঁ বিশ্বব্যাপী ইসলামকে একটি ‘সংকটের’ ধর্ম হিসেবে বর্ণনা করেছেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন বন্ধ করা হবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ম্যাক্রোঁ। বিশ্বনবীকে নিয়ে একটি বিতর্কিত কার্টুন দেখানোর জেরে খুন হওয়া ফরাসি শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে সম্মান জানাতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেছেন।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গ্রুপ থেকে আরব দেশ এবং তুরস্কের সুপারমার্কেট থেকে ফরাসি পণ্য বর্জন করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
কুয়েতে আল-নাইম সমবায় সমিতির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা ফরাসি সব পণ্য বর্জন করার এবং সেগুলো সুপারমার্কেট থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দাহিয়াত আল-থুহর সমিতি একই পদক্ষেপ নিয়েছে এবং বলেছে, ‘ম্যাক্রোঁর অবস্থান এবং আমাদের প্রিয় নবীর (সা.) বিরুদ্ধে আপত্তিকর কার্টুনের পক্ষে তাঁর সমর্থনের ভিত্তিতে, আমরা ফরাসি সব পণ্য বাজার থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
কাতারে ওয়াজবাহ ডেইরি সংস্থা ফরাসি পণ্য বর্জনের ঘোষণা করেছে এবং বিকল্প সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কাতারের যৌথ স্টক সংস্থা আল মিরা কনজিউমার গুডস সংস্থা টুইটারে ঘোষণা করেছে, ‘আমরা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আমাদের তাক থেকে তৎক্ষণাৎ ফরাসি পণ্য প্রত্যাহার করে নিয়েছি।’
কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ও এই প্রচারে অংশ নিয়েছে। টুইটারে এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় বলেছে, ‘ইসলামী বিশ্বাস, পবিত্রতা এবং প্রতীকগুলোর বিরুদ্ধে যেকোনো কুসংস্কার সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য, কারণ এই অপরাধ সর্বজনীন মানবিক মূল্যবোধ এবং উচ্চতর নৈতিক নীতিকে ক্ষতি করে।’
উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিল (জিসিসি) ম্যাক্রোঁর বক্তব্যকে দায়িত্বজ্ঞানহীন হিসেবে বর্ণনা করেছে এবং বলেছে, তাদের লক্ষ্য মানুষের মধ্যে ঘৃণার সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়া।