স্বাস্থ্য ও পরিবেশ / ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাদ্য নিয়ে নীতিমালা নেই, ঝুঁকিতে মানুষ
সোমবার, ০৬ জুলাই ২০২০ ০৬:১২:৩০ পূর্বাহ্ন
ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাদ্য নিয়ে নীতিমালা নেই, ঝুঁকিতে মানুষ
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য পুষ্টি বিষয়ক এক নির্দেশনায় করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সময় শিল্প উৎপাদিত ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার পরিহার করার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এ ধরনের অসম্পৃক্ত চর্বি সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্ট ফুড, স্ন্যাক্স, তেলে ভাজা খাবার, পিৎজা, পাই, পেস্ট্রি, কুকি, মার্জারিন ও স্প্রেডস বা মাখিয়ে খাওয়ার মিশ্রণে পাওয়া যায়।
খাবারে ট্রান্সফ্যাটের অনিয়ন্ত্রিত মাত্রা, মোড়কে ট্রান্সফ্যাটের পরিমাণ উল্লেখ এবং চিহ্নিতকরণের বাধ্যবাধকতা না থাকায় সার্বিক পরিস্থিতি দিনদিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। জাঙ্ক ফুড এবং বেকারি পণ্যের ওপর মানুষের অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা ট্রান্সফ্যাটের স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলছে। সবমিলিয়ে ট্রান্সফ্যাটের কারণে দেশের মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে থাকলেও তাদের সুরক্ষার জন্য কোনো নীতিমালা নেই বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক কাজল কুমার কর্মকার বাংলানিউজকে বলেন, ‘কার্বোহাইড্রেট, চর্বি ও কোলেস্টেরল বাড়ায় এমন খাবার পরিহার করতে হবে। প্রচুর সবুজ শাক-সবজি ও প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে। পাশাপাশি শরীর সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। এসময় নিয়মিত খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনা যাবে না।’ তবে এক্ষেত্রে ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাদ্য পরিহারে নীতিমালা জরুরি বলে তিনি মনে করেন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাট একটি নীরব ঘাতক। এর মূল উৎস পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল (পিএইচও) যা সাধারণত ডালডা বা বনস্পতি ঘি নামে পরিচিত। ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার রক্তের এলডিএল বা ‘খারাপ কোলেস্টেরল’ বাড়ায়, অপরদিকে এইচডিএল বা ‘ভালো কোলেস্টেরল’ এর মাত্রা কমিয়ে দেয়। অতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট গ্রহণে খারাপ কোলেস্টেরল রক্তবাহী ধমনিতে জমা হয়ে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে, যা অকাল মৃত্যুর অন্যতম কারণ।
বাংলাদেশে প্রতিবছর ২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদরোগজনিত কারণে মারা যায়। ২০১০ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে অন্তত আট হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ হিসেবে উচ্চ মাত্রার ট্রান্সফ্যাট গ্রহণ দায়ী।
ট্রান্সফ্যাটের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে সব মানুষকে সুরক্ষার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২৩ সালের মধ্যে শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাটমুক্ত বিশ্ব অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্য অর্জনে সংস্থাটি ২০১৮ সালে একটি অ্যাকশন প্যাকেজ ঘোষণা করে যেখানে খাদ্যে ট্রান্সফ্যাট নির্মূলে সরকার কীভাবে কাজ করবে তার নির্দেশনা রয়েছে। ইতোমধ্যে ভারত, থাইল্যান্ড, ব্রাজিল, তুরস্কসহ পৃথিবীর ৩০টিরও বেশি দেশ খাদ্যে ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিলেও বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) খাবারে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ মাত্রা ২ শতাংশে নামিয়ে আনার বিষয়ে গত জানুয়ারি মাসে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। এ বিষয়ে গঠিত ১০ সদস্যের একটি টেকনিক্যাল কমিটি কাজ শুরু করলেও করোনা ভাইরাসের প্রকোপে পিছিয়ে পড়েছে নীতিমালা চূড়ান্তকরণ প্রক্রিয়া।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আবু আহমেদ শামীম বাংলানিউজকে বলেন, ‘এটি নিয়ে আমাদের কাজ অনেক দূর এগোলেও করোনার কারণে নীতিমালা আটকে রয়েছে। করোনার মাঝখানে আমাদের কোনো মিটিং হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এটি হচ্ছে না বলে মনে করি। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে খুব দ্রুত এটি হয়ে যাবে।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের মহামারি থেকে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে অনতিবিলম্বে খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্সফ্যাটের মাত্রা নির্ধারণ করা জরুরি। এ লক্ষ্যে দ্রুততার সঙ্গে নীতিমালা চূড়ান্ত করার তাগিদ দিয়েছেন তারা।