আজ পয়লা ফাল্গুন। বনে আগুন লেগেছে কি না জানি না, কিন্তু মন তো আজও আছে, আমাদের মনে বসন্ত ঠিকই দোলা দিচ্ছে।
রবীন্দ্রনাথ যেমনটা বলেন, ‘পুষ্প ছিল বৃক্ষশাখে, হে নারী, তোমার অপেক্ষায়...।’ আমাদের নারীরা ঠিকই চয়ন করে নিচ্ছে পুষ্প, মালঞ্চ থেকেই, তবে এই মালঞ্চ শাহবাগের মোড়ে, ফুলের একটা দোকান মাত্র। তবু তো ফুলেরই দোকান।
আজ নগর ঢাকা বাসন্তী রঙের ঢেউয়ে দুলে উঠবে, ফুলে উঠবে। আর কে না জানে, ‘খোঁপার মতন কোনো ফুলদানি নেই’। ফুল ফুটবে খোঁপায় খোঁপায়, রং ফুটবে শাড়ির আঁচলে। আর কুন্তলে যদি ফুটলই কুসুম, নেই কেন সেই পাখি!
পাখিও খুঁজলে পাওয়া যাবে। চারুকলার বকুলতলায় বসন্তবরণের আয়োজন থাকুক কিংবা না থাকুক, একটু এগিয়ে বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের পাশের আমগাছে দখিনা বাতাসে ভাসছে মুকুলের সৌরভ আর কান পাতলে শোনা যাবে কোকিলের কুহুতান। শহীদ মিনারের পেছনে লাল হয়ে ফুটে আছে পলাশ।
বইমেলায় আজ বাসন্তী রঙের বন্যা আমাদের প্রাণের কল্লোলের সঙ্গে মিশে যাবে। নবীন কবির প্রেমের কবিতার সদ্য ছাপা বই থেকে সোঁদা গন্ধ প্রাণ ভরে নেবে নতুন শাড়ি পরা তরুণী। গতকালই বসন্তের রঙে সেজে মেলায় এসেছিলেন অনেকে।
বিপণিবিতানগুলো এরই মধ্যে এক পশলা বিক্রি সেরে নিয়েছে বসন্ত উপলক্ষে, ভালোবাসা দিবসের বিকিকিনি নিয়ে আজও তারা থাকবে ব্যস্ত। আজ ও কাল ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই অবস্থা দাঁড়াবে রেস্তোরাঁগুলোয়। মধ্য আয়ের দেশে উদ্যাপন মানে জোড় কিংবা দল বেঁধে খেতে যাওয়া।
চকলেট, কার্ড কিংবা উপহারের দোকানে আজ মৌতাত। আমার মতো পক্বকেশ লেখক কেশে গলা পরিষ্কার করে বলবেন, প্রিয়জনকে বই উপহার দিন, বসন্তে কিংবা ভালোবাসা দিবসে, অপ্রিয়জনকেও বই দিন, ফাল্গুনে দিন, বৈশাখেও দিন।
এই সব ডামাডোল থেমে গেলে সন্ধ্যার পর যখন আকাশে উঠবে এক ফালি চাঁদ, দখনে হাওয়া বইবে, তখন বারান্দায় কিংবা ছাদে দাঁড়ালে মন কি একটু কেমন কেমন করবে না? বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসবে না জানি, কিন্তু শুকনো পাপড়ির মতো তার স্মৃতির গন্ধ তো আসতেই পারে। এক মুহূর্তের জন্য উন্মনা তো হতেই পারি। বুদ্ধদেব বসুর মতো করে বলতে পারি, আমার মন ভালো নেই, কেন? সে কি আমি জানি। আমি একজনকে ভালোবাসি। কাকে? কী করে বলব? তাকে কি আমি দেখেছি!
মন কেমন করবেই। দূরে হয়তো কারও ল্যাপটপেই গান বাজছে, এত দিন যে বসেছিলেম পথ চেয়ে আর কাল গুনে, দেখা পেলেম ফাল্গুনে।
দেখা পাই বা না পাই, ফাল্গুন আজ এসেই গেছে।