হত্যা বা আত্মহত্যার মতো ঘটনার রহস্য উন্মোচনে লাশের ময়নাতদন্ত করে নানা ধরনের নমুনা সংগ্রহ করে পুলিশ। এসব লাশ সাধারণত কাটা হয় ডোম ঘরে। অথচ সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মুন্না ভক্ত (২০) নামের এক ডোম নিজের যৌন লিপসা চরিতার্থ করেছে বলে প্রমাণ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার মুন্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মুন্না ভক্তকে মানসিক বিকারগ্রস্ত উল্লেখ করে আজ শুক্রবার সিআইডির অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক সৈয়দ রেজাউল হায়দার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটবে কখনোই আমরা ভাবতে পারি না। আমার ধারণা মুন্না মানসিক রোগী। গ্রেপ্তারের পর সে এই ঘটনা স্বীকারও করে নিয়েছে।’
সিআইডির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে সিআইডি অন্তত পাঁচজন তরুণীর লাশের গায়ে একজন ব্যক্তির শুক্রাণু পেয়েছে। ১১ বছর থেকে ২০ বছর বয়সী এসব তরুণীর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছিল। এ তথ্য পেয়ে ঘটনা অনুসন্ধানে নামেন সিআইডির কর্মকর্তারা।
সূত্র আরো জানায়, প্রথমে সিআইডি তথ্য পায়, কয়েকজন তরুণীর শরীরে একই ব্যক্তির শুক্রাণু পাওয়া গেছে। তখন তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ভেবেছিলেন, লাশগুলো কাছাকাছি এলাকার হওয়ায় কোনো সিরিয়াল কিলার এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। কিন্তু মৃত ওই তরুণীদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, তাদের কেউই ধর্ষণের শিকার হয়নি। এরপর অধিকতর তদন্ত শুরু করে সিআইডি।
সিআইডির আরেকটি সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের মার্চ থেকে এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে আসা কয়েকটি নমুনায় একজন পুরুষের শুক্রাণুর উপস্থিতি পাওয়া যায়। এরপর ডিএনএ ল্যাব সংগৃহীত আলামতের পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইল তৈরি করে। লাশগুলো সব মোহাম্মদপুর ও কাফরুল থানা এলাকার। এরপর ওই লাশগুলো ডোম ঘরে থাকার সময় কে কে দায়িত্বে ছিলেন তা খুঁজে বের করে সিআইডি। তারপর মুন্নার গতিবিধির ওপর নজর রাখা হয় এবং একপর্যায়ে তারা প্রমাণ পায় মুন্না মৃত তরুণীদের সঙ্গে যৌন লিপসা চরিতার্থ করেছেন। এরপর গতকাল তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনটিভি অনলাইনকে জানান, লাশকাটা ঘরে ফরেনসিক মেডিসিন চিকিৎসকদের সহকারী হিসেবে ডোম কাজ করেন। এই লাশকাটা ঘরেই এমন বীভৎস ঘটনা ঘটবে, তা তাঁরা ভাবতেই পারেননি। মৃতদেহের সঙ্গে এ ধরনের যৌনকর্ম এক ধরনের মানসিক রোগীর কাজ। মেডিকেল টার্মে একে বলা হয় ‘নেক্রোফিলিয়া’। বিশ্বে এ ধরনের বিকৃত ঘটনার অনেক নজির রয়েছে।
মুন্না ভক্তের গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট এলাকায়। ২০১৮ সাল থেকে তিনি তাঁর মামা কুমার লালের সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে কাজ করছেন।
কুমার লাল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি কখনোই ভাবতে পারিনি মুন্না এমন কাজ করবে। অনেক সময় মুন্না ওই লাশকাটা ঘরেই ঘুমাত। সে মাঝেমধ্যে নেশাও করত। এ নিয়ে তার সঙ্গে অনেকবার আমার ঝগড়াও হয়েছে। গত বুধবার থেকে মুন্নাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। গতকাল আমি শেরেবাংলা নগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করি। রাতে শুনলাম মুন্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’