বৌভাতের অনুষ্ঠানের সব কার্যক্রম চলছিল বেশ ধুমধাম করে। কনেপক্ষ ঢাকঢোল পিটিয়ে আনন্দ উল্লাস করে গাড়িবহর নিয়ে উপস্থিত হন বরের বাড়িতে। সেই অনুষ্ঠানেই খবর ছড়িয়ে পড়ে বর মারা গেছেন। পরে অনুষ্ঠানস্থলেই হয় বরের জানাজা।
এমনই হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে গত বুধবার পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নের বাজিতা গ্রামে। বিয়ের সব আয়োজন রেখেই ওই দিন বিকাল ৫টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় বর মো. রফিকুল ইসলামের (২৫) লাশ।
মির্জাগঞ্জ উপজেলায় এ রকম প্রথম কোনো ঘটনায় সর্বত্রই শোকের মাতম ছড়িয়ে পড়েছে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, সোমবার মির্জাগঞ্জ উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নের বাজিতা গ্রামের সফেজ মিয়ার ছেলে মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী বেতাগী উপজেলার বাসন্ডা গ্রামের মো. মন্নান মিয়ার মেয়ে ময়না আক্তারের (১৮) বিয়ে হয়। ওই দিনই মেয়েকে বউ সাজিয়ে নিয়ে আসা হয় বরের বাড়ি বাজিতা গ্রামে।
মঙ্গলবার রাতে বর রফিক নিজ বাড়িতে স্বাভাবিক জ্বর নিয়ে একটু অসুস্থ বোধ করেন। বুধবার সকালে চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে নির্ধারিত তারিখে বুধবার বর রফিকের বাড়িতে কনে পক্ষের জন্য বৌভাতের আয়োজন করা হয়। বৌভাতে কনেপক্ষের লোকজন বরের বাড়িতে পৌঁছলেই খবর আসে রফিক আর বেঁচে নেই। বিয়ের আনন্দ মাতমে পরিণত হয়। আর স্বামীর মৃত্যুর খবরে জ্ঞান হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন নববধূ ময়না আক্তার। তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে।
একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাবা-মা উভয়েই পাগলপ্রায়। আত্মীয়স্বজনসহ এলাকাবাসীর সান্ত্বনা দেয়ার কোনো ভাষা নেই। মেহমানদের জন্য রান্না করা খাবার বাড়ির আঙিনায় থরে থরে সাজানো পাতিলেই রয়ে গেছে।
মৃত রফিকুল ইসলামের চাচা পশ্চিম চৈতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনসার উদ্দিন জানান, রফিকের বাবা সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে রেকর্ড অফিসে (সিভিল বিভাগ) কর্মরত আছেন। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে মা বাড়িতে থাকতেন। রফিক ও আমি রোববার একত্রে বিয়ের সব কেনাকাটা করি কিন্তু আজ আমাদের মাঝে সে আর নেই। সব কিছুই শেষ হয়ে গেল।