শুরুটা হয়েছিলো একটি ছোট্ট চিন্তা থেকে। একটি বাস্তব সমস্যাকে কিভাবে সমাধানের চেষ্টা করা যায় সেই পরিকল্পনা থেকে। তার ধারাবাহিকতায় জুলাই মাসের প্রায় পুরোটা জুড়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো ধারাবাহিক ওয়ার্কশপ। সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের সামাজিক সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে এ ধরণের একটি উদ্যোগ অস্ট্রেলিয়ায় বিরল একটি ঘটনা। নানা ভাষার ও সংস্কৃতির মাল্টিকালচারাল এই দেশে নানা প্রেক্ষাপটের গণমাধ্যমগুলোর সাথে জড়িত মানুষদেরকে একত্রিত করে এমন প্রশিক্ষণমূলক উদ্যোগ ছিলো এবারই সর্বপ্রথম। এই উদ্যোগের সূচনা এবং আয়োজনের দায়িত্ব পালন করেছে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাভাষী কমিউ্নিটি মিডিয়াগুলোর মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রনিধানযোগ্য স্থানে থাকা পত্রিকা সুপ্রভাত সিডনি।
অস্ট্রেলিয়াতে অন্য যে কোন বিষয়ের মতোই সাংবাদিকতাও নানা ধরণের বাস্তব ও প্রয়োজনীয় নিয়মকানুনের আওতায় পরিচালিত হয়। এসব নিয়মকানুনের মাঝে ডিফেইমেশন বা মানহানি বিষয়ক আইনকানুন বেশ কড়াকড়ির সাথেই মেনে চলা হয়। বিশ্বের নানা দেশ থেকে অভিবাসীরা এসে এই দেশকে যখন তাদের নিজেদের ঘর বানিয়ে নেয়, তার পাশাপাশি তারা নিজেদের ভাষায় নানারকম গণমাধ্যমও পরিচালনা করে। কিন্তু তাদের মাঝে স্থানীয় এসব নিয়মকানুন সম্পর্কে সচেতনতার অভাব দেখা যায়। ফলাফলস্বরুপ অনেক সময় কমিউনিটি মিডিয়াগুলোকে অনাকাঙ্খিত ভাবে মানহানি মামলা সহ নানা আইনী ঝামেলার ভোগান্তি পোহাতে হয়।
১১ জুলাই ২০২১ তারিখ রবিবার প্রথম ওয়ার্কশপের বিষয় ছিলো অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী বিভিন্ন কমিউনিটিকে এ দেশের মেইনস্ট্রিম গণমাধ্যম কিভাবে দেখে থাকে এবং উপস্থাপন করে থাকে? এ বিষয়ক বর্তমান পরিস্থিতিতে কমিউনিটি মিডিয়াগুলো কি ভূমিকা রাখতে পারে। যিয়াদ আল দাউদের সভাপতিত্বে এবং চালর্স স্টার্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক শিবলী আবদুল্লাহর পরিচালনায় এই ওয়ার্কশপটিতে আলোচনা উপস্থাপন করেন ইউনিভার্সিটি টেকনলজি সিডনি ইউটিএসের মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সিনিয়র লেকচারার ড. কাটরিওনা বনফিলিওলি।
দ্বিতীয় পর্বের মিডিয়া ওয়ার্কশপটি অনুষ্ঠিত হয় ১৬ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যায়। অস্ট্রেলেশিয়ান মুসলিম টাইমসের ম্যানেজিং এডিটর জিয়া আহমেদের সভাপতিত্বে এবং অজবুলেটিনের এডিটর ইন চীফ ড. ফজলে রাব্বির পরিচালনায় এদিন কমিউনিটি মিডিয়ার ভবিষ্যত সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলো আলোচনা করেন বিশিষ্ট অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিক ফ্র্যান মোলয়।
১৮ জুলাই রবিবার তৃতীয় পর্বের ওয়ার্কশপে সভাপতিত্ব করেন টুএমএফএম কমিউনিটি রেডিওর প্রতিনিধি রফিক হোসাইন এবং পরিচালনায় ছিলেন হানিফ বিসমি। এদিনে গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্কশপে অস্ট্রেলিয়ায় সাংবাদিকতার আইনী বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন ব্যারিস্টার ডেভিড ব্যারেন।
ওয়ার্কশপের চতুর্থ পর্ব ছিলো ২৩ জুলাই রবিবার। টার্কিশ মিডিয়া লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট ইউকসেল সিফসির সভাপতিত্বে ও হানিফ বিসমির পরিচালনায় এদিন সাংবাদিকতার নৈতিক অনুষঙ্গ এবং অস্ট্রেলিয়ান কমিউনিটি মিডিয়ার সাথে নৈতিকতার সম্পর্ক বিষয়ে আলোচনা করেন ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির কমিউনিকেশন এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ড. জান আশিক আলী।
২৫ জুলাই রবিবারের ওয়ার্কশপটিতে সভাপতি ছিলেন দ্য ট্রিবিউনের সম্পাদক সাইয়েদ আতিকুল হাসান এবং পরিচালনায় ছিলেন অজবুলেটিনের এডিটর ইন চীফ ড. ফজলে রাব্বী। এদিনের ওয়ার্কশপের বিষয় ছিলো পশ্চিমা সংস্কৃতির সাংবাদিকতার ইতিহাস ও চর্চা থেকে শিক্ষণীয় ও বাস্তবে প্রয়োগযোগ্য বিষয়সমূহ। এদিনের ওয়ার্কশপে আলোচক ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. জিম ট্যাগার্ট ওএএম।
ধারাবাহিক এই সিরিজ ওয়ার্কশপের সর্বশেষ পর্বটি ছিলো গত ৩০ জুন শুক্রবার সন্ধ্যায়। সুপ্রভাত সিডনির প্রধান সম্পাদক আবদুল্লাহ ইউসুফ শামীমের সভাপতিত্বে এবং চার্লস স্টার্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব শিবলী আবদুল্লাহর পরিচালনায় এদিন মানহানি মামলা সংক্রান্ত ঘটনায় সাংবাদিকদের বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে আলোচনা করেন ইউনিভার্সিটি টেকনলজি সিডনির দুইজন শিক্ষক ড. কাটরিওনা বনফিলিওলি এবং ড. জান্নাবী দাস।
সিডনি সহ অস্ট্রেলিয়ার নানা প্রান্ত থেকে অংশগ্রহণ করা নানা ভাষার ও দেশের সাংবাদিকদের জন্য এই সিরিজ ওয়ার্কশপটি হয়ে উঠেছিলো জমজমাট এক শিক্ষণীয় আলোচনার অনুষ্ঠান। বাংলাভাষী বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকরাও এই ওয়ার্কশপগুলোতে অংশ নিয়ে সুপ্রভাত সিডনিকে সহায়তা করেছে। করোনাভাইরাসজনিত দুর্যোগময় পরিস্থিতির মাঝেও অনলাইনে বিপুল সংখ্যক অংশগ্রহণকারীদের নিয়মিত অংশ নেয়ার কারণে এবং আলোচকদের তথ্যবহুল ও আকর্ষণীয় আলোচনার কারণে চমৎকার এই উদ্যোগটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটলে সিডনিতে একটি আকর্ষনীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বদের অংশগ্রহণে সকল অংশগ্রহণকারীদের জন্য সনদ বিতরণ ও পুনর্মিলণী আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
এই সিরিজ ওয়ার্কশপের প্রতিটি পর্বে নিয়মিত আলোচনার পর প্রাণবন্ত প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি পর্বেই একজন সেরা প্রশ্নকারীকে নির্বাচন করা হয়েছে এবং পুরস্কৃত করা হয়েছে। প্রতিটি পর্বের আলোচনা এবং প্রশ্নোতর পর্বগুলো মিলে অস্ট্রেলিয়ায় কমিউনিটি মিডিয়ার সাথে জড়িত সাংবাদিকদের জন্য এই আয়োজনটি ছিলো অনবদ্য শিক্ষণীয় এক অভিজ্ঞতা। অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসেও এটি ছিলো এ ধরণের সর্বপ্রথম একটি উদ্যোগ, যার আয়োজন করতে পেরে এবং সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরে বাংলভাষী মিডিয়া সুপ্রভাত সিডনি গর্বিত ও আনন্দিত।