শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল, ১৪৪৫ | ০৫:১২ অপরাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


সোমবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৭:২৫:৪৮ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

১০ বছরে প্রবাসী আয় বেড়েছে চার গুণ, শীর্ষে মধ্যপ্রাচ্য

বর্তমান সরকারের পর পর দুই মেয়াদের শাসনামলে গত ১০ বছরে আগের ১০ বছরের তুলনায় প্রবাসী আয় বেড়েছে প্রায় চার গুণ। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত ১০ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩ হাজার ১৮৫ কোটি ৬২ লাখ ডলার। এর আগের ১০ অর্থবছরে (১৯৯৮-৯৯ থেকে ২০০৭-০৮ অর্থবছর পর্যন্ত) রেমিট্যান্স এসেছিল তিন হাজার ৩৬৬ কোটি ৪২ লাখ ডলার। সেই হিসাবে গত ১০ বছরে এর আগের ১০ বছরের চেয়ে দেশে ৯ হাজার ৮১৯ কোটি ২০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স বেশি এসেছে, যা তুলনা করলে ৩.৯১ গুণ বেশি। সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছেন, বিদেশে কর্মী যাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ ও সুলভ করার পাশাপাশি রেমিট্যান্স আনার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর ড্রয়িং অ্যারেঞ্জমেন্ট, বিদেশে এক্সচেঞ্জ হাউস ও শাখা খোলা, রেমিট্যান্সের অর্থ দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশনা জারিসহ বেশ কিছু উদ্যোগের ফলে রেমিট্যান্স আসা বেড়েছে। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য মতে, ২০০৮ সাল থেকে চলতি ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ বছরে দেশ থেকে ৬০ লাখ ৭৩ হাজার ৯৬৯ জন কর্মী বিদেশে গেছে। যেখানে ১৯৭৬ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ৩১ বছরে বিদেশে যাওয়া কর্মীর সংখ্যা ছিল ৫৩ লাখ ৯০ হাজার ৯৭৪। এক বছরের হিসাবে সবচেয়ে বেশি কর্মী বিদেশে গেছে গত বছর (২০১৭)। এ সংখ্যা ১০ লাখ আট হাজার ৫২৫। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত বিদেশে যাওয়া কর্মীর সংখ্যা পাঁচ লাখ ৬৯৪। জানা গেছে, বিদেশে যাওয়া সবচেয়ে বেশি কর্মী রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। ওই দেশগুলো থেকেই সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে সৌদি আরব থেকে। এর পরিমাণ ছিল ২৫৯ কোটি ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সংযুক্ত আরব আমিরাত (দুবাই) থেকে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২৪২ কোটি ডলার। তৃতীয় অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে ১৯৯ কোটি ডলার। চতুর্থ অবস্থানে থাকা মালয়েশিয়া থেকে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১১৯ কোটি ডলার এবং পঞ্চম ও ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা কুয়েত ও ওমান থেকে ১১০ কোটি ডলার করে রেমিট্যান্স এসেছিল গত অর্থবছরে। রেমিট্যান্সসংক্রান্ত কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. রাজী হাসান সম্প্রতি অবসরে যাওয়ার আগে কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকারের দক্ষ জনশক্তি বিদেশে প্রেরণের পদক্ষেপের ফলে প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে বিগত বছরগুলোতে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বেড়েছে কয়েক গুণ। দেশে টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়া আগের চেয়ে এখন অনেক সহজ হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এখন মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেসের মাধ্যমেও কিছু রেমিট্যান্স আসা শুরু করেছে। রাজী হাসান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি বড় কার্যক্রম মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা। গত কয়েক বছরে মুদ্রা বিনিময় হারে বড় ধরনের কোনো অস্থিতিশীলতা দেখা যায়নি। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোতে শ্রমিকদের কাজের সুযোগ বেড়ে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্য থেকে রেমিট্যান্স আসা বেড়েছে। তবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করে মাঝখানে কিছুদিন অবৈধ পন্থায় প্রবাসীদের টাকা দেশে আসছিল। তখনো বাংলাদেশ ব্যাংক এর বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করায় সম্প্রতি বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসা আবার বেড়েছে বলে দাবি করেন তিনি। রাজী হাসান বলেন, অবৈধ পন্থায় রেমিট্যান্স প্রেরণ বন্ধের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে কিছু মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট নজরদারির মধ্যে রয়েছে। কিছু মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে। বর্তমানে যে হারে বিদেশে কর্মী পাঠানো হচ্ছে, তাদের প্রশিক্ষিত করে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারলে একইসংখ্যক কর্মী দিয়ে আরো বেশি প্রবাসী আয় দেশে আনা সম্ভব হতো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তা ছাড়া অর্থনৈতিক কূটনীতির মাধ্যমে প্রবাসী শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর বিষয়ে দর-কষাকষি করাও সম্ভব বলে মনে করেন তাঁরা। রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. তাসনীম সিদ্দিকীর তৈরি করা ‘ইফিসেন্সি অব মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স রেমিট্যান্স : দ্য বাংলাদেশ কেস’ শীর্ষক একটি ওয়ার্কিং পেপারের সুপারিশমালায় তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ও পেশাদার শ্রেণির কর্মী গমন কমছে। যে হারে কর্মী বিদেশে যাচ্ছে তার সঙ্গে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ অবস্থায় বিএমইটির বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। ফিলিপাইনের উদাহরণ দিয়ে তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, অনেক দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রকল্প পরিকল্পনা এবং শ্রমিকের সম্ভাব্য চাহিদা কত হতে পারে, তা সংগ্রহ করতে হবে এবং সেগুলো নিয়মিত বিশ্লেষণ করতে হবে। দেশের মানবসম্পদকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে এবং এর বিপণনব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রি, প্লাম্বার, ফিটিং মিস্ত্রিসহ এ রকম কিছু ভালো কাজের জায়গাগুলোতে দক্ষ শ্রমিক প্রেরণের জন্য তাদের দক্ষতার যথাযথ সনদপত্র প্রদানের পদ্ধতি চালু করার ওপর জোর দেন তিনি। অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতি যে কটি ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে তার প্রধান একটি ভিত রেমিট্যান্স। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের ওপর ভর করে দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৩১.৬৫ বিলিয়ন ডলার বা তিন হাজার ১৬৫ কোটি ডলারের বেশি। গত ১২ সেপ্টেম্বর হালনাগাদ এ তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রবাসীদের বেশি করে রেমিট্যান্স পাঠাতে উদ্বুদ্ধ করতে চার বছর ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড দিয়ে আসছে। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুরস্থ বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমিতে (বিবিটিএ) ২০১৭ সালের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রেরণকারী, এক্সচেঞ্জ হাউস ও ব্যাংকগুলোকে পুরস্কৃত করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে রেমিট্যান্সপ্রবাহ ভালো না থাকলে বাংলাদেশের বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসত। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৯৬৮ কোটি ৯২ লাখ ডলার। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এক হাজার ৯৮ কোটি ৭৪ লাখ ডলার, ২০১০-১১ অর্থবছরে এক হাজার ১৬৫ কোটি তিন লাখ ডলার, ২০১১-১২ অর্থবছরে এক হাজার ২৮৪ কোটি ৩৪ লাখ ডলার, ২০১২-১৩ অর্থবছরে এক হাজার ৪৪৬ কোটি ১১ লাখ ডলার, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এক হাজার ৪২২ কোটি ৮২ লাখ ডলার, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ১১ লাখ ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার এবং সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৭ কোটি ৮৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠায় প্রবাসীরা।





আরো খবর