শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল, ১৪৪৫ | ০২:০৪ পূর্বাহ্ন (GMT)
ব্রেকিং নিউজ :
X
শিরোনাম :
  • নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছে আ.লীগ: কাদের
  • ইসি নয়, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হার্ডলাইনে যাবে বিএনপি


শুক্রবার, ১৭ আগস্ট ২০১৮ ০৫:১০:১২ পূর্বাহ্ন Zoom In Zoom Out No icon

সামাল দেয়া যাচ্ছে না কনটেইনার চাপ

বারবার ধারণক্ষমতা বাড়িয়েও চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার চাপ সামাল দেয়া যাচ্ছে না। প্রায়ই বন্দর ইয়ার্ডের ধারণক্ষমতা স্পর্শ করছে কনটেইনারের পরিমাণ। কখনও কখনও তা অতিক্রমও করছে সক্ষমতা। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে কনটেইনার জট। এর ফলে কিছুদিন পর পরই হোঁচট খাচ্ছে স্বাভাবিক পণ্য হ্যান্ডলিং কার্যক্রম। কয়েক দফা বৃদ্ধির পর বন্দরের কনটেইনার ধারণক্ষমতা পৌঁছেছে ৪৯ হাজার এককে (টুয়েন্টি ফিট ইকুইভিলেন্ট ইউনিটস), আগে ছিল ৪১ হাজার। সম্প্রতি বন্দরের সংরক্ষিত এলাকায় কিছু ইয়ার্ড সংস্কার ও নতুন ইয়ার্ড নির্মাণের ফলে কনটেইনার রাখার স্থান বেড়েছে বলে বন্দর সূত্রের দাবি। এতেও নিশ্চিত হতে পারছেন না বন্দর ব্যবহারকারীরা। তারা জানান, যে হারে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, তা সামাল দিতে আরও জায়গার প্রয়োজন। এজন্য হাতে নেয়া নতুন প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না হলে বন্দরে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ে দেখা দিতে পারে অচলাবস্থা। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দুইভাবে পণ্য পরিবহন হয়। খোলা পণ্য (বাল্ক কার্গো) পরিবহন করা হয় হ্যাচযুক্ত জাহাজে। অপরদিকে কনটেইনারবাহী জাহাজে পরিবহন করা হয় কনটেইনারজাত পণ্য। কনটেইনারজাত পণ্যের তিনগুণ হ্যান্ডলিং হয় খোলা পণ্য। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কনটেইনারে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের রফতানি এবং আমদানি-দুটোই বাড়ার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং প্রতি বছরই বাড়ছে। বছরে প্রবৃদ্ধি ১০ ভাগের বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৪ লাখ ১৯ হাজার ৪৮১ একক কনটেইনার ওঠানামা হলেও গত অর্থবছরে হয়েছে ২৭ লাখ ৫ হাজার ৯০৯ একক। বর্তমানে চট্টগ্রামে বন্দরে প্রতিদিন ৪০ হাজার থেকে ৪৩ হাজার একক পর্যন্ত কনটেইনার থাকছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী যে কোনো বন্দরে ধারণক্ষমতার ৭০ ভাগের নিচে কনটেইনার রাখতে হয়। বেশি থাকলে কনটেইনার ওঠানো-নামানো এবং ক্রেনের সাহায্যে ভারী যানবাহন তুলতে অসুবিধা হয়। এই হিসেবে ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার হলেও চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার থাকার কথা ৩৫ হাজার। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই কনটেইনার থাকছে বেশি। অভিযোগ রয়েছে, বন্দরে যে হারে পণ্য হ্যান্ডলিং বাড়ছে, সে হারে সক্ষমতা বাড়ছে না। গত ১০ বছরে নতুন টার্মিনাল নির্মিত হয়নি। অথচ এ সময়ে বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বেড়েছে কয়েকগুণ। সর্বশেষ ২০০৭ সালে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) নির্মিত হয়েছে, এটি পরিচালিত হচ্ছে বেসরকারি অপারেটরের মাধ্যমে। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক যুগান্তরকে বলেন, ‘দেশের আমদানি-রফতানির পরিমাণ বৃদ্ধি এবং বন্দরে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু নতুন ইকুইপমেন্ট স্থাপনের কারণে কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে। গত অর্থবছরে (২০১৭-১৮) ২৭ লাখ ৫ হাজার ৯০৯ একক কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। এর মধ্যে আমদানি কনটেইনার ছিল ১৩ লাখ ৬৩ হাজার ৩৭৫ একক। রফতানি কনটেইনার ১৩ লাখ ৪২ হাজার ৫৩৪ একক। প্রবৃদ্ধি ১০ ভাগের বেশি। আগের অর্থবছরও প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ ভাগের বেশি।’ তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে কয়েকটি পুরনো ইয়ার্ড সংস্কার ও নতুন ইয়ার্ড নির্মাণ করে কনটেইনার রাখার স্থান বাড়ানো হয়েছে। আগে কনটেইনার ধারণ ক্ষমতা ৪১ হাজার একক হলেও এখন ৪৯ হাজার। ওভার ফ্লো ইয়ার্ড নামে আরেকটি ইয়ার্ড প্রায় প্রস্তুত। এছাড়া কিছু বড় পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল, লালদিয়া টার্মিনাল ও বে টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এ তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। তখন ধারণক্ষমতাসহ বন্দরের সার্বিক পণ্য হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বাড়বে। বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কনটেইনারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মাথায় রেখে ২০০৮ সালে ধারণক্ষমতা বাড়িয়ে করা হয় ৩০ হাজার ৮৮৬ একক। এরপরও কনটেইনার জট না কমায় পুরনো কয়েকটি ইয়ার্ড সংস্কার করে ২০১৪ সালে ধারণক্ষমতা ৩৬ হাজার ৩৫৭ এককে উন্নীত করা হয়। এতেও সমস্যার সমাধান হয়নি। পরে ধাপে ধাপে বাড়ানো হয়। চলতি বছরের মাঝামাঝি ধারণক্ষতা ৪৯ হাজারে পৌঁছেছে। ক্লিয়ারিং এন্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু যুগান্তরকে বলেন, সামনে কোরবানির ঈদ, চারদিনের ছুটিতে স্বাভাবিকভাবেই পণ্য হ্যান্ডলিং ধীরগতিতে চলবে। ওই সময় কনটেইনার জট দেখা দিতে পারে। তিনি বলেন, ‘ ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির পরও আমরা নিশ্চিন্ত হতে পারছি না। যে হারে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ছে, সেই হারে কনটেইনার ইয়ার্ড বাড়াতে হবে।’





আরো খবর