প্রকাশিতঃ শুক্রবার, ১৭ আগস্ট ২০১৮ ০৫:২১:৫৫ পূর্বাহ্ন
মাশরাফির অবদানকে বড় করে দেখছেন তামিম
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট সিরিজে যাচ্ছেতাইভাবে হেরে যাওয়া বাংলাদেশ দলকে সীমিত ওভারের ক্রিকেট চাঙ্গা করতে মাশরাফি মুর্তজা বড় অবদান রেখেছেন বলে মনে করেন ওপেনার তামিম ইকবাল।
এদিকে ব্যাট হাতে ওয়ানডে ও টি ২০ সিরিজ জেতাতে বড় অবদান রেখেছেন তামিম নিজে। দেশে ফেরার পর কাল মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তামিম সাকিব আল হাসানেরও প্রশংসা করলেন-
প্রশ্ন : টেস্ট সিরিজে খারাপ করার পর ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য আপনাদের প্রস্তুতি ছিল কেমন?
তামিম : টেস্ট সিরিজে যতটা ভালো খেলা উচিত ছিল, আমরা তা পারিনি। আমরা এর চেয়ে আরও ভালো খেলতে পারতাম। এর চেয়ে ভালো দল আমরা। টেস্ট সিরিজের পর মানসিকভাবে আমরা দুর্বল ছিলাম। ওয়ানডেতে ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনে মাশরাফি ভাইয়ের বড় অবদান ছিল। তিনি হয়তো অন্যের হয়ে ব্যাটিং-বোলিং করে দেননি। কিন্তু দলের ভেতরের পরিবেশ বদলাতে অনেক সাহায্য করেছিলেন। টেস্ট সিরিজের পর নেতিবাচক মনোভাব ছিল সবার। মাশরাফি ভাই ইতিবাচক মনোভাব সবার মাঝে ছড়িয়ে দেন। প্রথম ওয়ানডেতে জেতার পর দলের সবার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। টেস্ট সিরিজের পর ওয়ানডে ও টি ২০তে ফিরে আসতে বিশেষ পারফরম্যান্সও দেখাতে হয়েছে।
প্রশ্ন : ওয়ানডে সিরিজ শুরু হওয়ার আগে কী আলোচনা হয়েছে আপনাদের মধ্যে?
তামিম : আমরা প্রথম দুই ম্যাচেই ওয়ানডে সিরিজ নিশ্চিত করতে চেয়েছিলাম। কারণ গায়ানার উইকেট আমাদের হয়ে কথা বলছিল। বল স্পিন করছিল, মাঠ বড় ছিল। সেন্ট কিটস অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে ছিল। দ্বিতীয় ম্যাচে হারের পর মাশরাফি ভাই সবাইকে বলেছিলেন, ‘আমরা যদি আগে থেকেই চিন্তা করি যে, ওরা আমাদের থেকে এগিয়ে আছে, তাহলে খেলার আগেই হেরে যাব। তাহলে তো শেষ ওয়ানডে খেলার কোনো মানে হয় না।’ এরপর আমরা আর কোনো চিন্তা না করে মাঠে পারফর্ম করে দেখাতে চেয়েছি।
প্রশ্ন : সাকিবের সঙ্গে আপনার ম্যাচজয়ী জুটি সম্পর্কে কী বলবেন?
তামিম : ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য প্রথম ওয়ানডেতে আমাদের জুটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ওই উইকেটে ব্যাট করা সহজ ছিল না। আমি অথবা সাকিব উইকেটটা যদি ছুড়ে দিয়ে আসতাম, তাহলে আরও কঠিন হতো। সেসময় অনেক ডট বল হয়েছে। তবে আমরা জানতাম, স্কোর বোর্ডের দিকে না তাকিয়ে উইকেটে তখন টিকে থাকাই রান পাওয়ার একমাত্র উপায়।
প্রশ্ন : সাকিবের সতর্ক ব্যাটিং সম্পর্কে আপনার বক্তব্য?
তামিম : সাকিবকেও তার স্বাভাবিক খেলার চেয়ে ভিন্ন ধাঁচে খেলতে হয়েছে। ওই উইকেটে দ্রুত রান তোলা যাচ্ছিল না। আগ্রাসী ব্যাটিং করলে হয়তো আউট হতে হতো। প্রথম ওয়ানডেতে আমাদের দু’জনেরই বিশেষ পারফরম্যান্স ছিল।
প্রশ্ন : ওপেনিংয়ে আপনি নিজের মতো খেলে যাচ্ছেন। যোগ্য সঙ্গী পাচ্ছেন না, এটা কতটা হতাশার?
তামিম : এটা হতাশার নয়। যারা ওপেন করছে তারা সবাই চেষ্টা করছে। প্রত্যাশামতো ফল পাচ্ছে না। কারও সামর্থ্য নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সবাই যোগ্য। ফর্মে ফেরার জন্য তাদের একটি ভালো ইনিংস দরকার।
প্রশ্ন : বিশ্বকাপের আগে তাদের ফর্মে ফেরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ?
তামিম : বিশ্বকাপের আগে আমাদের প্রচুর খেলা রয়েছে। টিম ম্যানেজমেন্ট যাদের নিয়ে ভাবছে তাদের সময় দেয়া উচিত। সুযোগ পেলে তারা ভালো করবে।
প্রশ্ন : সামনে এশিয়া কাপ। আপনার ভাবনা?
তামিম : পরের রাউন্ডে যাওয়ার জন্য প্রথম দুটি ম্যাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখনই যদি ফাইনাল কিংবা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চিন্তা করি, সেটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। প্রথম দুই ম্যাচের প্রতিপক্ষ নিয়েই আমাদের পরিকল্পনা করা উচিত।
প্রশ্ন : গ্রুপপর্বে প্রতিপক্ষ শ্রীলংকা ও আফগানিস্তান?
তামিম : অন্য গ্রুপেও আমরা থাকলে আরও কঠিন হতো। ওই গ্রুপে ভারত-পাকিস্তান আছে। আমাদের কাজ ভালো ক্রিকেট খেলা। প্রতিপক্ষ সবাই চেনা। আমাদের দিনে আমরা তাদের হারিয়েছি। ভালো প্রস্তুতি নিয়েই সেখানে যাব।
প্রশ্ন : পিসিএলে দুবাইয়ে আপনার খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সাকিব-মাহমুদউল্লাহরও আছে। অভিজ্ঞতা কীভাবে কাজে লাগানো যায়?
তামিম : গত কয়েক বছর ধরে কোনো না কোনো সময় আমরা সেখানে খেলেছি। উইকেট কেমন হতে পারে, কিছুটা হলেও আমাদের এ সম্পর্কে অনুমান আছে। ক্যাম্প শুরু হলে এ নিয়ে আলোচনা হবে।
প্রশ্ন : ঘরোয়া ক্রিকেটের সমস্যাগুলো কীভাবে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব?
তামিম : ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন। সুবিধা বিসিবি দিতে পারে, কিন্তু খেলোয়াড়রা যদি চ্যালেঞ্জ না নেয়, তাহলে কোনো লাভ নেই। ভালো করার উচ্ছা থাকতে হবে। এটা নিজের সঙ্গে নিজের চ্যালেঞ্জ। যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজে প্রথম টেস্টের কথা বলি, তাদের তো আমরা বলতে পারি না ফ্লাট উইকেট দেন। ওই উইকেটে চ্যালেঞ্জ নেয়া উচিত ছিল। এর আগেও আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভালো করেছি। বোর্ড আমাদের সব সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। আমাদের গড়পড়তা চিন্তা না করে আলাদাভাবে ভাবতে হবে।
প্রশ্ন : ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জির সঙ্গে কাজ করে কী মনে হচ্ছে?
তামিম : তার সঙ্গে যতটুকু কথা বলেছি, তাতে মনে হয়েছে দারুণ একজন কোচ। বাংলাদেশকে অনেক কিছু দেয়ার আছে তার। তার কথা আমার খুবই ভালো লেগেছে। ব্যক্তিগতভাবে তার সঙ্গে কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছি। তার কথামতো চলতে পারলে হয়তো আরও ৫-১০ ভাগ উন্নতি করতে পারব।