প্রকাশিতঃ রোববার, ১৪ জানুয়ারী ২০১৮ ০৫:১১:০১ অপরাহ্ন
সিসি’র মিসর : ঋণের বোঝা ও প্রহসনের নির্বাচন
মীযানুল করীম
মুসলিম বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী এবং বিশ্বের একটি সুপ্রাচীন সভ্যতার অধিকারী দেশের নাম মিসর। এটি আফ্রিকা মহাদেশের সর্বাধিক জনবহুল রাষ্ট্র। মিসর তার বিভিন্ন দিকের বিবেচনায় বিশ্বমুসলিমের নেতৃত্ব দেয়ার মতো একটি অবস্থানে থাকাই ছিল প্রত্যাশিত। তার পরিবর্তে এই দেশ গণতন্ত্র হন্তা স্বৈরাচারী রাষ্ট্রশক্তি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। আর এখন মিসর ডুবতে বসেছে ঋণের ভারে। নৈতিকভাবে দেউলিয়া ও রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতালিপ্সু, দাম্ভিক স্বেচ্ছাচারী অপশক্তি যখন সরকারি ক্ষমতার সবটুকু কুক্ষিগত করে, তখন ক্রমেই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং বিদেশের মদদগারদের তল্পিবহনই তার প্রধান দায়িত্ব বলে মনে করে। এমন অবস্থায় সরকার বৈদেশিক ঋণের ভারে বিপর্যস্ত হয়ে অতিরিক্ত করের বোঝা চাপিয়ে জনগণকে জর্জরিত করে তোলে। মিসরে যেভাবে সরকারের ঋণ বাড়ছে, তা জাতির জন্য বিরাট অশনিসঙ্কেত। তবুও স্বৈরতন্ত্রী শাসকের বোধোদয় হচ্ছে না। বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন, মিসরের আজকের অর্থনৈতিক সঙ্কটের একটা বড় কারণ হলো, একনায়ক জেনারেল সিসির চমক লাগানো আর খামখেয়ালিমূলক প্রকল্পের পেছনে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করা।
মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে মিসরের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া পরিসংখ্যান মোতাবেক, মিসরের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ মাত্র এক বছরেই ৪১ শতাংশ বেড়ে ৭৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। অথচ ২০১২ সালে দেশটির ঋণ ছিল ৩৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার, যা বর্তমান পরিমাণের মাত্র ৪৩ শতাংশের মতো। স্মর্তব্য, তখন মিসরে ক্ষমতায় ছিলেন সে দেশের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুরসি। তার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন, মুসলিম ব্রাদারহুড দলের গণতান্ত্রিক সরকারকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাব উৎখাত করে ক্ষমতায় আসেন বর্তমান শাসক ও প্রধান সেনাপতি জেনারেল আবদুল ফাত্তাহ আল সিসি।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
মিসরের ঋণবিষয়ক গবেষক ও গ্রন্থকার সালমা হুসাইন দেখিয়েছেন, ২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে মিসর সরকারের বৈদেশিক ঋণ দ্রুত বেড়ে গেছে। পার্লামেন্টকে অবহিত না করেই বিরাট অঙ্কের ঋণ নেয়া হয়েছে বিদেশ থেকে। এর উৎস এমন সব দেশ, যারা মিসরের বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক মিত্র। এরা হলো মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি ধনাঢ্য রাষ্ট্র। সিসি সরকারের যেসব নতুন ঋণ বিদেশ থেকে নেয়া হয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় লক্ষণীয় যা গণবিরোধী ও স্বেচ্ছাচারী সরকারের পক্ষেই করা সম্ভব। যেমন- ক. পার্লামেন্টকে এই ঋণের বিষয় যাচাই-বাছাই কিংবা মনিটরিং করতে দেয়া হয়নি। খ. এই বিপুল ঋণের জন্য কত হারে সুদ দিতে হবে, তা রহস্যজনকভাবে জাতির কাছ থেকে গোপন রাখা হয়েছে। গ. কোন কোন খাতে এই ঋণের অর্থ ব্যয় করা হবে, তা নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। বলাবাহুল্য, কোনো গণতান্ত্রিক ও জনকল্যাণকামী সরকারের কর্মকাণ্ড এমন অস্বচ্ছ, খামখেয়ালিপূর্ণ ও জবাবদিহিতাবিহীন হতে পারে না।
প্রত্যেক ক্ষমতালোভী, স্বৈরাচারী ও গণবিরোধী শাসক এমন কিছু বিশালায়তন প্রকল্প হাতে নেয়, যার ব্যয় বহন করা জাতির পক্ষে সম্ভব নয়। অতএব, বিদেশের মুরব্বিদের থেকে ঋণ আনতে হয়। আর এটা তো ওপেন সিক্রেট যে, বৈদেশিক ঋণের অর্থের সাথে ‘মহাজন’ রাষ্ট্রটির অন্যায় প্রভাবও ঢোকে ঋণগ্রহীতা দেশটিতে। ঋণের বোঝা সহজে ঘাড় থেকে নামানো যায় না। এই সুযোগে ঋণদাতাদের নজরদারি ও খবরদারি চলে ঋণগ্রহীতা দেশে। অপর দিকে স্বৈরশাসক তার পরিবার, গোষ্ঠী বা দলের স্বার্থে ও অস্বচ্ছ উপায়ে বড় বড় প্রকল্প নিয়ে এর পেছনে ঋণের অর্থ ঢালতে থাকে। এসব প্রকল্পের সাথে জনগণের স্বার্থের তেমন সম্পর্ক না থাকলেও ঋণের বোঝা তাদের ঘাড়েই চাপানো হয়।
মিসরের গণতন্ত্র হন্তা ও গণহত্যাকারী শাসকচক্রের নেয়া কিছু প্রকল্পের জন্য বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ নিতে হয়েছে, যা তাদের Prestige Project. এ ক্ষেত্রে প্রথমেই বলতে হয়, হাজার বছরের ঐতিহাসিক কায়রো নগরী বাদ দিয়ে বাইরের মরুভূমিতে মিসরের প্রশাসনিক রাজধানী প্রতিষ্ঠার জন্য সিসির গৃহীত প্রকল্পের কথা। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের মানুষ স্মরণ করবে তদানীন্তন পাকিস্তানের স্বৈরশাসক জেনারেল আইয়ুব খানের নতুন রাজধানী স্থাপনের মহাপ্রকল্পকে। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা জবরদখলের কিছু দিন পরই আইয়ুব খান দেশের রাজধানী করাচি থেকে রাওয়ালপিন্ডি নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। অথচ মহানগরী করাচি থেকে সেনাশহর পিন্ডির দূরত্ব হাজার মাইলের মতো। মিয়ানমারে দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকা সামরিক জান্তা কয়েক বছর আগে দেশের রাজধানী সুপরিচিত ইয়াঙ্গুন থেকে নেইপিডো নামের অপরিচিত স্থানে সরিয়ে নিয়েছে। এ জন্য ঢেলেছে কোটি কোটি টাকা।
পর্যবেক্ষকেরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ করেছেন, মিসরের বর্তমান শাসনামলে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ চার বছরে ৩৩৭ ডলার থেকে বেড়ে এখন ৮১২ ডলারে দাঁড়িয়েছে। মিসরের মতো স্বল্পোন্নত দেশের জন্য এটা উচ্চমাত্রা হিসেবে গণ্য হয়েছে। এই ঋণের বড় অংশ খরচ হচ্ছে নতুন রাজধানী স্থাপনের মতো চমক লাগানোর মহাপ্রকল্প বাস্তবায়নে; সেই সাথে সরকারের বাজেট ঘাটতি মেটাতে। অথচ এই অর্থ অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করা হলে জাতীয় অর্থনীতি সমৃদ্ধ হতো আর জাতি হতো উপকৃত।
২০১২ সালে মিসরের বৈদেশিক ঋণের ৮৮ শতাংশই ছিল তিন বছরের বেশি, অর্থাৎ দীর্ঘমেয়াদি। এখন তা ৫৯ শতাংশে নেমে এসেছে। এমনকি, ঋণের ১৭ শতাংশ পরিশোধের মেয়াদ খুব কমÑ মাত্র এক বছর কি তারও কম; অথচ এর সুদ দিতে হবে উচ্চ হারে।
অর্থনীতি নিয়ে যারা গবেষণা করেন, তাদের দৃষ্টিতে মিসরের ঋণ ও জিডিপির অনুপাত উদ্বেগজনক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। তাহরির ইনস্টিটিউট ফর মিডল ইস্ট পলিসির একজন গবেষক লিখেছেন, ‘এ ক্ষেত্রে ইউরোপের ধনী দেশগুলোর সাথে তুলনা করা এবং এটা বলা উচিত নয় যে, মিসরের এই অনুপাত বেলজিয়ামের সমান কিংবা এটা জাপানের চেয়ে কম। কারণ, ওসব দেশে সরকারের অর্থপ্রশাসন মিসরের মতো দুর্বল নয়।’
মিসরকে দুই হাতে ঋণ দিয়ে তার বোঝা ভারী করছে কয়েকটি আরব দেশ এবং পাশ্চাত্যের কথিত দাতাগোষ্ঠী। এদের মধ্যে আছে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানিসমেত ২২ দেশের ‘প্যারিস ক্লাব’। মিসরের জন্য পশ্চিমা জগতের দেয়া ঋণের স্তূপ দিন দিন আরো উঁচু হয়ে উঠছে। গত ৫ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাংক মিসরের জন্য আরো ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ মঞ্জুর করেছে। এর মধ্য দিয়ে তারা মিসরকে ৩ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার কাজ শেষ করে এনেছে। তদুপরি, আইএমএফ মিসরকে ঋণ দিচ্ছে ১২ বিলিয়ন ডলার।
এ দিকে, মিসরের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১৬ সালের নভেম্বরে মিসরীয় পাউন্ড মুদ্রার ব্যাপারে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে যে, বাজারে রাতারাতি বেশির ভাগ পণ্যের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেল। অথচ চিনি, রান্নার গ্যাস ও পেট্রলের মতো জরুরি পণ্যের ওপর সরকারের ভর্তুকি কমিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে দাম এত বেড়েছে যে, আইএমএফের সাথে মিসরের ঋণচুক্তির আগে এসব পণ্য এখনকার তিন ভাগের এক ভাগ দামে কেনা যেত। এ পরিস্থিতির কারণ, আইএমএফ বা আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের চাপিয়ে দেয়া কৃচ্ছ্র নীতি। মিসরে ২০১৭ সালে মূল্যস্ফীতি ছিল অব্যাহত। এ অবস্থায় জনগণ আইএমএফের নীতিকে মেনে নিতে পারছে না। এহেন বাস্তবতায় তিক্ত সত্য উচ্চারণ করেছিলেন মোহাম্মদ আদেল নামের জনৈক রাজনৈতিক কর্মী। ‘আইএমএফকে অপমান করেছেন’- এমন হাস্যকর অভিযোগে গত জুলাই মাসে তাকে অন্তরীণ করেছে সিসি সরকার।
বন্দুকের জোরে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে কয়েক হাজার প্রতিবাদী নারী-পুরুষের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে যিনি ক্ষমতার দম্ভে উন্মত্ত, সেই আবদুল ফাত্তাহ সিসির এখন কী অবস্থা? একটি গোপন রিপোর্ট ফাঁস করে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানাচ্ছে, সেনাবাহিনী ব্যবহার করে গণতন্ত্র খুনের হোতা যে প্রধান সেনাপতি, সেই জেনারেল সিসি এখন তার সেনাবাহিনী থেকে বিচ্ছিন্ন।
কিন্তু অন্যসব স্বৈরাচারীর মতো তিনিও সহজে তার ক্ষমতার ভিত্তি, অর্থাৎ অস্ত্রের জোর হারাতে চান না। তাই মারণাস্ত্রসজ্জিত নিজস্ব বাহিনী গড়েছেন, যা মিসরীয় সেনাবাহিনীর চেয়ে বেশি শক্তি রাখে। সিসির কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়েই সেনাবাহিনী সরে গেছে তার কাছ থেকে। এখন তার নবগঠিত বাহিনীর মিলিশিয়ারাই সব সময় তাকে ঘিরে রাখে। সিসি সেনাদের শান্ত রাখার জন্য তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানান আর্থিক সুবিধা দিচ্ছেন। তিনি মনে করেন, তারা টাকা কামানোর কাজে ব্যস্ত থাকলে তার বিরুদ্ধে কিছু করার সময় সুযোগ পাবে না। অতএব, তার গদি নিরাপদ থাকবে।’
এ দিকে, বিশেষ করে বিরাট সিনাই উপদ্বীপসহ দেশের বহু স্থানে আইএস জঙ্গিরা বড় বড় সহিংস হামলা চালাচ্ছে। সেনাবাহিনী তাদের সাথে এঁটে উঠতে না পারায় সিসির ওপর বাড়ছে তার পশ্চিমা মুরব্বিদের চাপ।
মিসর দীর্ঘ দিন ছিল ইসরাইলের সবচেয়ে বড় শত্রুদের একটি। ১৯৬৭ ও ’৭৩ সালের যুদ্ধে মিসর মার খেয়েছে ইহুদিদের হাতে। ’৬৭ সালের লড়াইয়ে সিনাই ও গাজা হারিয়েছিল ইসরাইলের কাছে। সেই মিসর সিসির আমলে হয়েছে ইহুদিবাদী রাষ্ট্রটির দোসর। মিডল ইস্ট মনিটর এবার জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি জেরুসালেমকে রাজধানী করার ইসরাইলি ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে সেখানে মার্কিন দূতাবাস স্থাপনের ঘোষণা দিলে সিসির সরকার গোপনে ট্রাম্পকে জানিয়ে দেয়- ‘আমরা এ ক্ষেত্রে আপনার পক্ষেই রয়েছি আমাদের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক।’ এমনকি, দেশ ও জাতির মানমর্যাদা বিকিয়ে দিয়ে ট্রাম্পকে আশ্বস্ত করা হয় এ ভাষায়- ‘হোয়াইট হাউজে যেসব কর্মী আছে, আমরা তাদের অংশ। আপনি যেসব কাজ দিয়েছেন, সেগুলো আমরা করছি। আমাদেরকে সব সময় পাবেন আপনার পাশে।’
গত ১০ জানুয়ারি ঢাকার দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত খবরে আরো জানানো হয়, জেরুসালেম ইস্যুতে ট্রাম্পকে সিসি সরকার সমর্থন করার বিষয়ে একাধিক টেপ হাতে আছে বলে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে। মিসরের গোয়েন্দা সংস্থা এ ব্যাপারে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে প্রচারণা চালাতে দেশের জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের নির্দেশ দিয়েছে। সাংবাদিক মাইকেল ওলফ রচিত এবং বর্তমানে সাড়া জাগানো Fire and Fury : Inside The Trump's White House বইটিতেও এ বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে।
গত শুক্রবার কোনো কোনো পত্রিকার খবরে নিউ ইয়র্ক টাইমসের ফাঁস করে দেয়া আরেক তথ্যে জানা যায়, আগামী নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রেসিডেন্ট ‘নির্বাচিত’ হওয়ার লক্ষ্যে সিসি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অন্য কাউকে এ পদে প্রার্থী হতে দেয়া হবে না। এমনকি, জেনারেল আহমদ শফিকের মতো সুপরিচিত ব্যক্তিও ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না। মিসরের একজন সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তার ফোন রেকর্ড থেকে এটা জানা গেছে। এই গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রহসনমূলক নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করার কাজে। যেমন- ফাঁস হওয়া তথ্যে দেখা যায়, গোয়েন্দা কর্মকর্তা টিভি টকশো উপস্থাপককে বলছেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট পদে সম্ভাব্য প্রার্থী আহমদ শফিকের সমালোচনা করা চাই।’ ওই অফিসার ফোনে সাফ বলে দেন, ‘শফিক আমাদের আদেশ না মানলে তার এবং তার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করব। নির্বাচনে কাউকে সিসির প্রতিদ্বন্দ্বী হতে দেয়া হবে না।’ আলজাজিরা বলেছে, ‘মিসরের সরকার যে নির্বাচনে কারচুপি করতে চায়, এই টেপ তা বলে দিচ্ছে।’
দেশে দেশে যুগে যুগে গণবিরোধী শাসকদের চরিত্র অভিন্ন। আগে তারা নির্বাচনের ধার ধারতেন না কিংবা স্রেফ এক প্রার্থী বা এক দলের কথিত নির্বাচন হতো। এরপর জনগণকে ধোঁকা দিতে এবং আন্তর্জাতিক চাপে, একাধিক প্রার্থী ও দলকে দৃশ্যমান করে নির্বাচন ম্যানেজ করার পালা শুরু হয়েছে। শুধু সেনা অভ্যুত্থানকারী দখলদাররা নন, গণতন্ত্রের মুখোশধারী ব্যক্তিরাও রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে নির্বাচনী প্রহসন মঞ্চায়নের মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখছেন দীর্ঘকাল। মিসরে অতীতে নাসের, সাদাত ও মোবারকের মতো স্বৈরশাসকেরা নির্বাচনকে নিজের গদি রক্ষার হাতিয়ার বানিয়েছিলেন। এখন সিসি তাদের অনুসরণে একই নোংরামির আশ্রয় নিচ্ছেন। তাদের দৃষ্টিতে দেশের চেয়ে দল আর দলের চেয়ে তারা নিজেরা বড়। যেকোনোভাবে নিজেদের ক্ষমতায় থাকা জাতির জন্য ‘অপরিহার্য’ এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা কিংবা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের নিয়ন্ত্রিত সরকারের ‘বিকল্প নেই’- এমন প্রচারণা অব্যাহত রেখে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করা তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ পলিসি