প্রকাশিতঃ শনিবার, ০৬ জুলাই ২০১৯ ০২:০৫:৫৩ পূর্বাহ্ন
হজযাত্রীদের স্বাস্থ্যগত প্রস্তুতি
আমরা সবাই জানি, হজ পালন করতে অনেক ধরনের আনুষঙ্গিকতা পালন করতে হয়। তার প্রায় প্রত্যেকটিতেই শারীরিক পরিশ্রম বা কায়িক শ্রম প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। যার জন্য ধর্মীয় বিধান মতে শারীরিক ও আর্থিকভাবে যোগ্য ব্যক্তিদের বেলায়ই হজকে ফরজ করা হয়েছে, কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে শারীরিক ও আর্থিক যোগ্যতার সমন্বয় ঘটে না। তার মানে আমাদের জনগোষ্ঠীর যখন শারীরিক সামর্থ্য থাকে তখন হয়তো আর্থিক সামর্থ্য অর্জিত হয় না এবং আমরা অনেকেই আর্থিক যোগ্যতা থাকলেও কম বয়সে হজ পালন করতে চাই না।
ফলশ্রুতিতে আমাদের হজযাত্রীদের গড় বয়স পঁয়তাল্লিশের ঊর্ধ্বে থাকে। আমরা জানি, বয়স ৪৫ বা তারও বেশি হলে শরীরে নানা ধরনের রোগ বাসা বাঁধে। বিশেষ করে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা।
হজযাত্রীদের অনেকেই হয়তো জানেন যে, তারা এ ধরনের কোনো না কোনো অসুস্থতায় ভুগছেন, আবার অনেকেই হয়তো জানেন না যে, তাদের এ ধরনের কোনো অসুস্থতা আছে। তাই বয়স্ক ব্যক্তিরা যারা হজে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন তাদের আর্থিক প্রস্তুতির পাশাপাশি শারীরিক প্রস্তুতিও নিয়ে রাখতে হবে, তাতে অনেক অনাকাক্সিক্ষত ঝামেলা এড়িয়ে সুস্থ সুন্দরভাবে হজব্রত পালন করতে পারবেন। হজে প্রচুর হাঁটাহাঁটি ও ছোটাছুটি করতে হবে, যার প্রস্তুতি হিসেবে আপনার পায়ে কোনো ধরনের আর্থাইটিসজনিত (বাতব্যথাজনিত) সমস্যা থাকলে তা চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে আপনার হাঁটাহাঁটির যোগ্যতা বৃদ্ধি করে হজ পালন নির্বিঘ্নে করতে পারবেন। উচ্চ রক্তচাপ এমন এক ধরনের অসুস্থতা যার ফলে মানুষের কায়িক শ্রম করার যোগ্যতা কমে যায় এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ না করে অধিক কায়িক শ্রম সম্পাদন করতে গেলে ব্যক্তির স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়, তাই হজযাত্রার আগে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি কমিয়ে হজ পালন নির্বিঘ্নে করা যেতে পারে। হজযাত্রীদের মধ্যে থেকে অনেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন।
তাই হজযাত্রার আগে আপনার চিকিৎসকের পরার্মশক্রমে চিকিৎসা গ্রহণ করে হজযাত্রার জন্য শারীরিকভাবে যোগ্য হয়ে হজব্রত পালনের যাত্রা শুরু করবেন। যদি কেউ পরিশ্রম করতে গেলে সহজেই হাঁপিয়ে ওঠেন, নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসে বা শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হন অথবা বুকে চাপ বা ব্যথা অনুভূত হয় তার সঙ্গে শরীর অত্যধিক ঘেমে যায় তবে অবশ্যই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করে যাবেন। তা না হলে হজ পালন করতে গিয়ে আপনি বড় ধরনের অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে যেতে পারেন। হৃদরোগের আরও কিছু লক্ষণ হলো শারীর ফুলে যাওয়া বা হাত-পা-মুখে পানি আসা, ভরা পেটে হাঁটতে গেলে বুকে ব্যথা অনুভব করা, তবে হাঁটার গতি কমালে ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট দূরীভূত হওয়া। এসব ব্যক্তির পেটে অত্যধিক গ্যাস উৎপন্ন হয়ে থাকে।
অনেকেই একটু বেশি কাজ করলে অত্যধিক পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েন। এসব লক্ষণ অনুভূত হলে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে এবং চিকিৎসা গ্রহণ করে হজযাত্রা শুরু করা উচিত। যারা দীর্ঘ সময় ধরে ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন তারা স্বাভাবিকভাবেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন, তাই চেকআপের পাশাপাশি হার্টের চেকআপ করাও যুক্তিযুক্ত।