প্রকাশিতঃ শনিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০১:৪০:৪১ পূর্বাহ্ন
বন্যায় প্লাবিত হয়েছে দেশের ১৫ জেলার নিম্নাঞ্চল। এর মধ্যে ১১ জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। ১০ নদ-নদীর পানি ২২ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, বর্তমানে দেশের ১৫ জেলা বন্যায় আক্রান্ত। এগুলো হচ্ছে কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পাবনা, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও শরীয়তপুর। আক্রান্ত এসব জেলার মধ্যে আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও শরীয়তপুরের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের ১০ নদ-নদীর পানি ২২ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে দুধকুমার, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তিস্তা, ঘাঘট, তুরাগ, পদ্মা, আত্রাই ও ধলেশ্বরী। ব্রহ্মপুত্রের পানিসমতল স্থিতিশীল আছে। যমুনা, গঙ্গা ও পদ্মার পানি সমতলে বাড়ছে যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি সমতলে হ্রাস পাচ্ছে যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এ ছাড়া আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা অববাহিকার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।
ধুনটে ভাঙার শঙ্কা : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বগুড়ার ধুনট উপজেলায় যমুনার পানি হুহু করে বেড়ে ফুঁসে উঠছে। পানি বেড়ে গতকাল বিপৎসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে প্রবল চাপে চুনিয়াপাড়া-দড়িপাড়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ চুইয়ে লোকালয়ে ঢুকছে পানি। পানির চাপ আরও বাড়লে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
৮ হাজার পরিবার পানিবন্দী : ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি এক রাতেই বিপৎসীমার ৮০ সেন্টিমিটার বেড়েছে। গতকাল সকাল ৯টায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার। বৃহস্পতিবার পানির প্রবাহ ছিল ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। এক রাতে পানি বেড়েছে ৮০ সেন্টিমিটার। গতকাল পানি কমতে থাকলেও ডালিয়া ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে রাখা হয়েছে। কদিন আগের আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই তিস্তাপাড়ের মানুষের মধ্যে আবারও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তিস্তার পানি বাড়ার ফলে তিস্তাবেষ্টিত রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার সাত ইউনিয়নের প্রায় ৮ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
লালমনিরহাটে পানিবন্দী ১৫ হাজার পরিবার: উজানের ঢল ও ভারতের গজলডোবার সবকটি গেট খুলে দেওয়ায় তিস্তায় পানি বেড়ে গতকাল সকালে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তবে বিকাল ৩টা থেকে পানি কমে ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে লালমনিরহাটে তিস্তা-ধরলার ৬৩ চরের ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানি বাড়ার ফলে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন।
মানুষের দুর্ভোগ চরমে : কুড়িগ্রামে অন্যসব নদ-নদীর পানি কমলেও আবারও ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি অস্বাভাবিক বেড়েছে। ফলে এ দুই নদ-নদীর অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। গতকাল চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ৫০ আর ধরলার সেতু পয়েন্টে ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে সদর উপজেলা, চিলমারী ও উলিপুর, রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার ২ শতাধিক চর ও দ্বীপচরের ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দী জীবন যাপন করছেন।
দুর্ভোগে মানুষ : যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়ায় বসতভিটা-ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সিরাজগঞ্জের বন্যাকবলিতরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। ল্যাট্রিন তলিয়ে যাওয়ায় অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
পানি বিপৎসীমার ওপরে : নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল সকাল ৯টার পর থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এদিকে ডোমার চেয়ারম্যানপাড়ায় কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী শতাধিক পরিবার।
গাইবান্ধায় বাড়ছে নদ-নদীর পানি : গাইবান্ধার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। তবে আগের তুলনায় পানি গতকাল কম হারে বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘটের পানি ১ সেন্টিমিটার করে বেড়ে বিপৎসীমার যথাক্রমে ৫১ ও ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। জেলার শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দী।
পদ্মার পানি বিপৎসীমার ওপরে : ফরিদপুরে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর, আলিয়াবাদ ও চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রাম। এ ছাড়া সদরপুর, চরভদ্রাসন, ভাঙ্গা উপজেলার বেশকিছু ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।