বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৫:০২

প্রকাশিতঃ বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২১ ০৯:১১:৪৩ অপরাহ্ন

টিকা: অন স্পট রেজিস্ট্রেশন কেন বন্ধ

সারা দেশে গণটিকাদান শুরুর ৫ম দিনের মাথায় করোনার টিকা নেয়ার অন স্পট সুবিধা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন থেকে যারা নিবন্ধন করে আসবেন, শুধু তাদেরই টিকা দেয়া হবে। কেন্দ্রে আর নিবন্ধন হবে না। বিভিন্ন কেন্দ্রে অতিরিক্ত ভিড় তৈরি এবং অন স্পট নিবন্ধনকারীদের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ফলে যারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন, তারাই ঢুকতে পারছেন না। গতকাল ঢাকায় কিছু কিছু কেন্দ্রে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন টিকা প্রত্যাশীরা। টিকা কেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্যবিধিও মানা হচ্ছে কম। যারা টিকা দিচ্ছেন তাদের হাতে নেই গ্লাভস।

অন স্পট নিবন্ধন কেন বন্ধ করা হলো-জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান মানবজমিনকে বলেন, অন স্পট-এ ম্যানেজমেন্ট (ব্যবস্থাপনায়) একটু সমস্যা হচ্ছে।

বেশি মানুষ অনলাইনে নিবন্ধন না করে চলে আসছেন। এ ছাড়াও টিকার হিসাব রাখার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। তাই অন স্পট বন্ধ করা হয়েছে। তবে ৮০ বছরের উপরে বয়স্কদের বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে, তাদেরকে কীভাবে সহযোগিতা করা যায়। তিনি আরো জানান, শনিবার তারা টিকাকেন্দ্রগুলো সরজমিন পরিদর্শন করবেন। তারপর রোববার বয়স্কদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন।

এদিকে প্রতিদিনই টিকাগ্রহণকারীদের সংখ্যা বাড়ছে। সারা দেশে ৫ম দিনে টিকা নিয়েছেন ২ লাখ ৪ হাজার ৫৪০ জন। যা আগের দিন ছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ৪৫১ জন। গতকাল কিছু কিছু টিকাদান কেন্দ্রে মানুষকে দীর্ঘ লাইনেও অপেক্ষা করতে হয়েছে টিকা নিতে। কিছু কেন্দ্রে দিনের টিকার নির্ধারিত চাহিদাও অতিক্রম করেছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন টিকা প্রত্যাশী কেন্দ্রে আসা মানুষ। কুর্মিটোলা হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে এমন ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে, গতকাল সকাল ৮টা থেকেই ঢাকার কেন্দ্রগুলোতে টিকা প্রত্যাশীদের ভিড় ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভেনশন সেন্টারে ৮টি বুথে কোভিড-১৯ টিকাদান কেন্দ্রে ১ হাজার ৪৫৭ জন টিকা নিয়েছেন। এই দিন করোনার ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা চিকিৎসক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিকসহ দেশের বিশিষ্টজনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ টিকা নিয়েছেন এখানে। তবে এখানে অনেককে টিকা নিতে এসে ভোগান্তিতে পড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিএসএমএমইউ সূত্র বলছে, প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১২শ’ জনকে টিকা দেয়ার জন্য নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত লোক মেসেজ ছাড়াই চলে আসছেন। এতে সমস্যা হচ্ছে তাদের। তখন তাদের ফেরত যেতে হচ্ছে বলে সূত্র দাবি করছেন।

সারা দেশে এ পর্যন্ত মোট টিকা নিয়েছেন ৫ লাখ ৪২ হাজার ৩০৯ জন। অন্যদিকে টিকা নিতে অনলাইনে নিবন্ধনকারীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ১২ লাখ ৩৭ হাজারের কিছু বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় নিবন্ধন করেছেন প্রায় ৩ লাখ মানুষ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস’র গতকালের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, গতকাল ঢাকা মহানগর ব্যতীত ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোতে টিকা নিয়েছেন ২৬ হাজার ৭০৬ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৯ হাজার ৩৩৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫২ হাজার ৮৬৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৩ হাজার ১৮০ জন, রংপুর বিভাগে ১৯ হাজার ৩৮০ জন, খুলনা বিভাগে ২৩ হাজার ৪৭৯ জন, বরিশাল বিভাগে ৯ হাজার ৩৯৭ জন এবং সিলেট বিভাগে টিকা নিয়েছেন ১৫ হাজার ৭৩৯ জন। ৫ দিনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার উপসর্গ বা অ্যাডভার্স ইভেন্ট ফলোইং ইমিউনাইজেশন (এইএফআই) রিপোর্ট করেছেন ৩৬৩ জন।

কেন্দ্রে নিবন্ধন আপাতত বন্ধ: গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, এখন থেকে যারা নিবন্ধন করে আসবেন, শুধু তাদেরই টিকা দেয়া হবে। কেন্দ্রে আর নিবন্ধন হবে না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, নিবন্ধন না করে অনেকে টিকা নিতে আসছেন। এতে বিভিন্ন কেন্দ্রে অতিরিক্ত ভিড় তৈরি হচ্ছে। ভবিষ্যতে যদি টিকাদান কেন্দ্রে নিবন্ধনের প্রয়োজন পড়ে তখন আবারো জানানো হবে। জাহিদ মালেক জানান, এ পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি মানুষ টিকা নেয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন। তিনি বলেন, আমরা চাই সুষ্ঠুভাবে ভ্যাকসিন নেয়া হোক। আমরা বিভিন্ন রকমের জায়গা তৈরি করে দিয়েছি। সুন্দর পরিবেশ তৈরি করেছি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, যারা অন স্পট রেজিস্ট্রেশন করেছেন, তাদের সংখ্যাই বেশি। আর যারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন, তারাই ঢুকতে পারছেন না। বয়স্ক লোকেরা কেন্দ্রে যাচ্ছেন, তাদের কষ্ট হচ্ছে। যারা ভ্যাকসিন দিচ্ছেন ডাক্তার ও নার্স তাদেরও কষ্ট হচ্ছে। আমরা এই পরিস্থিতি চলতে দিতে চাই না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, রেজিস্ট্রেশন যেহেতু অনেক সফলভাবে হচ্ছে, ১০ লাখের বেশি হয়ে গেছে। এ কারণে আমরা এখন অন স্পট রেজিস্ট্রেশন আর করবো না। মন্ত্রী জানান, এর আগে দেশজুড়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা দেয়ার জন্য গ্রামাঞ্চলের এবং যাদের স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনের সুবিধা নেই, তাদের জন্য কাছের টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা নেয়ার সুযোগ ছিল।

43A Railway Pde Lakemba, NSW 2195
email: editor@amardesh24.com
Copyright © 2016. Allright Reserved amardesh24.com