রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ১০:৫৪

প্রকাশিতঃ মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১১:১৮:০৯ পূর্বাহ্ন

রাখাইনে গ্রামের পর গ্রামের অস্তিত্ব নেই, ভেঙেচুরে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে

রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের গ্রামের পর গ্রামের এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই। ভেঙেচুরে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে মাটির সঙ্গে। সেখানে গড়ে উঠেছে একের পর এক পুলিশ ব্যারাক, সরকারি বিভিন্ন বিশাল বিশাল ভবন এবং রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন শিবির। ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সামরিক নৃশংস অভিযানে কমপক্ষে ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। এ ঘটনাকে জাতি নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ। তবে সেনাদের ব্যাপকহারে হত্যাযজ্ঞ চালানোর অভিযোগ বার বারই অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমার। বিসির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রতিনিধি জোনাথন হেড লিখেছেন, রাখাইনে প্রবেশাধিকার স্বাভাবিকভাবেই কঠোর বিধিনিষেধে আটকানো। আমরা সরকারি একটি গাড়িবহরে করে সেখানে সফরে গেলাম। পুলিশের তদারকি ছাড়া কোনো মানুষের ছবি তোলা ও সাক্ষাৎকার নেয়ার অনুমোদন দেয়া হয়নি আমাদের। কিন্তু আমরা পরিষ্কারভাবে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে ইচ্ছাকৃতভাবে নির্মূল করে দেয়ার সুস্পষ্ট প্রমাণ দেখতে সক্ষম হয়েছি। স্যাটেলাইটে পাওয়া ছবির বিশ্লেষণ করেছে অস্ট্রেলিয়ান স্ট্রাটেজিক পলিসি ইন্সটিটিউট। তাতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের নৃশংসতায় রোহিঙ্গাদের যেসব গ্রাম ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল তার মধ্যে শতকরা কমপক্ষে ৪০ ভাগ পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে। জোনাথন হেড আরো লিখেছেন, যখন আমি ক্যাম্প প্রশাসক সোয়ে শয়ে অংয়ের কাছে জানতে চাইলাম, কেন এসব গ্রাম ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে? জবাবে তখন তিনি গ্রাম নিশ্চিহ্ন করার কথা প্রত্যাখ্যান করলেন। কিন্তু তাকে আমি স্যাটেলাইটে পাওয়া ছবিগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলাম। তিনি তখন আমাকে বললেন, অতি সম্প্রতি তিনি এখানে কাজে যোগ দিয়েছেন। এসব প্রশ্নের উত্তর তিনি দিতে পারবেন না। জোনাথন হেড লিখেছেন, রাখাইনে যা দেখতে পেয়েছি সে বিষয়ে বক্তব্য জানতে আমরা মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্রের দ্বারস্থ হলাম। কিন্তু কোনো উত্তর দেয়া হলো না সেখান থেকে। জোনাথন হেড আরও লিখেছেন, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের শুরুতে যখন সেনাবাহিনীর নৃশংসতা চরমে তখন মিয়ানমারের সেনা কমান্ডার, সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং বলেছেন, ১৯৪২ সাল থেকে যে অসম্পন্ন কাজ রয়ে গেছে তারা সেদিকে দৃষ্টি দিয়েছেন। তিনি রাখাইনে জাপান ও বৃটিশ বাহিনীর মধ্যকার লড়াইয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। ওই সময় রোহিঙ্গা ও রাখাইন বৌদ্ধরা সমর্থন করছিলেন বিরোধী পক্ষগুলোকে। এতে একজন অন্যজনকে হত্যা করছিলেন। এর ফলে সেখানে বিপুল সংখ্যক বেসামরিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হন। সেনাপ্রধান বলেছেন, উত্তর রাখাইনে মুসলিমদের বন্যা নেমেছিল। এই রাখাইন হলো বাংলাদেশ সীমান্তের সঙ্গে লাগোয়া। সীমান্তের কাছে মংডু ও বুথিডাং হলো দুটি জেলা। ২০১৭ সাল থেকে এখানে সবচেয়ে বেশি গ্রাম ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। আর এ দুটি জেলাই ছিল মিয়ানমারে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একমাত্র অঞ্চল। সেখান থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের পালিয়ে আসার ফলে বাকি যারা রয়ে গেছেন তারা এখন সেখানকার মোট জনসংখ্যার সম্ভবত শতকরা মাত্র ১০ ভাগ। তারা এখন হয়তো সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়ে থাকতে পারেন। বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে মিয়ানমার সরকার, চলাচলের স্বাধীনতা নেই অথবা নাগরিকত্বের পরিষ্কার কোনো পন্থা নেই। এর ফলে বেশির ভাগ শরণার্থীর ফিরে যাওয়ার ইচ্ছাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এর ফলে মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করবে, এর মধ্য দিয়ে সম্ভবত সেই ‘অসম্পূর্ণ কাজ’ এখন সম্পূর্ণ করা হচ্ছে।
43A Railway Pde Lakemba, NSW 2195
email: editor@amardesh24.com
Copyright © 2016. Allright Reserved amardesh24.com