সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ১০:৩৪

প্রকাশিতঃ শনিবার, ১৮ মে ২০১৯ ১২:২৩:৩৪ অপরাহ্ন

প্রবাসীর স্ত্রী‌কে 'অর্ধনগ্ন' করে প্রকা‌শ্যে লাঠিপেটা

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় প্রকাশ্যে তিন সন্তানের জননী এক নারীকে (৩৫) প্রায় অর্ধনগ্ন করে ব্যাপক লাঠিপেটা ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে মোলাইম খান নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। গত সোমবার ঘটনাটি ঘটলেও ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর শনিবার মানুষের নজরে আসে। ওই নারী উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের এক ওমান প্রবাসীর স্ত্রী। আর লাঠিপেটাকারী ওই ব্যক্তি একই ইউনিয়নের রাউৎগাঁও উজানপাড়া গ্রামের মৃত সরল খানের পুত্র। স্থানীয় ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নির্যাতনের শিকার ওই প্রবাসীর স্ত্রী তিন কন্যার জননী। বড় কন্যার কিছুদিন আগে বিয়ে দেওয়া হয়। বাড়িতে ওই নারী তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে থাকতেন। মোলাইম খান এবং ওই প্রবাসীর বাড়ি পাশাপাশি গ্রামে। গত সোমবার দুপুরে প্রবাসীর স্ত্রী স্থানীয় ফুলেরতল বাজার থেকে মোবাইল ব্যাংকিং থেকে নগদ টাকা উত্তোলন করে বাড়িতে আসেন। এসময় ওই নারীর পিছু ধরে মোলাইম খাঁ ওই প্রবাসীর বাড়িতে যান। এসময় প্রবাসীর স্ত্রীকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে আনেন। পরে ওই নারীর দুই মেয়ের সামনে প্রায় অর্ধনগ্ন করে প্রকাশ্যে বেধড়ক লাঠিপেটা শুরু করেন। মারধর শেষে মোলাইম খান ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। এদিকে, মোলাইম খান ওই নারীকে নিজের বিবাহিত স্ত্রী দাবি করছেন ও স্ত্রীর আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে তাকে মারধর করেছেন বলে দাবি করেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। নির্যাতনের শিকার ওই নারী বলেন, ‘আমার শ্বশুর, শাশুড়ি মারা গেছেন। ভাসুর ( স্বামীর বড় ভাই) অন্যত্র থাকেন। আমার স্বামী ওমান প্রবাসী এবং আমার তিন মেয়ে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। আমি আমার দুই মেয়েকে নিয়ে একা বাড়িতে থাকি। ’ তিনি আরো বলেন, আমার চাচা শ্বশুরের সাথে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে কোর্টে মামলা রয়েছে। মোলাইম খান আমার দূরসম্পর্কের আত্মীয়। আমি নারী হওয়ায় চাচা শ্বশুরের সাথে জমি সংক্রান্ত মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেই। এজন্য মাঝে মধ্যে আমার বাড়িতে আসতেন মোলায়েম। মামলা পরিচালনার জন্য ২০১৫ সালের ২৩ মার্চ একই তারিখে কয়েকটি সাদা (লেখাবিহীন) স্ট্যাম্প কাগজে স্বাক্ষর নিতে আসেন মোলাইম। আমি জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজে সই দিতে হবে। আমি সরল বিশ্বাসে সেই সাদা স্ট্যাম্প কাগজে সই দেই। কিছুদিন পর মোলাইম আমার স্বামীর কাছে মোবাইলের হোয়াটস্অ্যাপে স্বামীকে তালাকের হলফনামার এবং ‘কোর্টম্যারেজের’ কাগজের ছবি পাঠান। আমার স্বামী বিদেশ থেকে ওই হলনামা কাগজের কথা আমাকে জানান। এ বিষয়টি আমি মোলাইমকে জিজ্ঞেস করি। পরে ২০১৫ সালের ২৩ মার্চ একই তারিখে দুটি স্ট্যাম্প কাগজে সে প্রতারণার মাধ্যমে আমার দস্তখত নিয়ে (রেজি. নং ৭৫৭) কাগজে ‘তালাকনামা’ এবং (রেজি. নং ৭৫৮) কাগজে ‘কোর্ট ম্যারেজ’ হলফনামা দেখিয়ে আমাকে তার স্ত্রী দাবি করে। তখন সে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে আমাকে বিভিন্ন সময় হয়রানী করে ও আমাকে একদিন মারধরও করে। পরবর্তীতে ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে কোর্ট ম্যারেজ এবং তালাকনামা বাতিলের জন্য এফিডেবিটের (রেজি. নং-৪৮২৪) মাধ্যমে আদালতে আবেদন করি। এরপরও প্রায় সে আমাকে উত্যক্ত করতে থাকে। তিনি আরো বলেন, ঘটনার দিন গত সোমবার দুপুরের দিকে আমি বরমচা‌লের ফুলেরতল বাজারে যাই এবং সেখান থেকে টাকা তুলে বাড়িতে ফিরে আসি। মোলাইম আমার পিছু নিয়ে আমার বাড়িতে আসে এবং ঘরে ঢুকে আমার গলায় শ্বাসরোধ করে রাখে। পরে আমার শাড়ি জোরপূর্বক খুলে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে এবং টেনেহিঁচড়ে ঘরের বাহিরে নিয়ে এসে আমাকে কাঠের লাটি দিয়ে ব্যাপক মারধর করতে থাকে। এসময় আমার মেয়েরা এগিয়ে এলে তাদের উপর চড়াও হয় মোলাইম। মোলাইম খান এসময় আমার গলায় থাকা এক ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার চেইন নিয়ে যায় বলে দাবি করেন তিনি। পরে আমার আত্মীয় স্বজন এসে আমাকে উদ্ধার করে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। আমার সমস্ত শরীরে মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। থানায় আমি মোলাইম খানকে আসামী করে অভিযোগ দায়ের করেছি। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। এ ব্যাপারে মোলাইম খানের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার দুই স্ত্রী আছে এবং ওই নারীও আমার স্ত্রী। আমি তাকে কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে বিয়ে করেছি। আগের স্বামীর সাথে তার তালাক হয়ে গেছে। ঘটনার দিন তার বাড়িতে গেলে প্রথমে সে আমার ওপরে হামলা চালায়। এক পর্যায়ে আমি আত্মরক্ষার্থে তাকে মারধর করি। তার দাবি, তার সাথে বিয়ের সব কাগজপত্র আপোসের জন্য স্থানীয় ফুলেরতল মসজিদ পঞ্চায়েতের (কমিটির) সাবেক সভাপতি আনারউদ্দিনসহ কমিটির সদস্যদর কাছে দেওয়া আছে। এ ব্যাপারে ফুলেরতল মসজিদ পঞ্চায়েতের (কমিটির) সাবেক সভাপতি আনার উদ্দিনের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কেউ কিছু জানায়নি। আমি পরস্পরের মাধ্যমে মারধরের ঘটনাটি জানতে পেরেছি। এব্যাপারে কুলাউড়া থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নারীর ওপর এমন অমানবিক নির্যাতন কোনভাবেই কাম্য নয়। মোলাইম খান ওই নারীকে পাশবিকভাবে লাঠিপেটা ও নির্যাতন করেছেন। ধর্ষণচেষ্টা ও মারধরের ঘটনায় প্রবাসীর স্ত্রী বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
43A Railway Pde Lakemba, NSW 2195
email: editor@amardesh24.com
Copyright © 2016. Allright Reserved amardesh24.com