বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৩:১৩

প্রকাশিতঃ বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০১৯ ০২:১৭:১৭ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রাম কাস্টমস: মিথ্যা ঘোষণায় আনা ৩০৩ চালান আটক

দুইমাসে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা ৩০৩টি পণ্য-চালান আটক করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিচার্জ (এআইআর) শাখা। চট্টগ্রাম বন্দরে শতভাগ কায়িক পরীক্ষায় এসব চালান ধরা পড়ে। আটক চালান থেকে অর্ধশত কোটি টাকা শুল্ক ও জরিমানা আদায় করা হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ও আমদানিকারক মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি করে থাকে। কাস্টমসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে নানা কৌশলে এগুলোর চালান বন্দর থেকে বের করে নেয়া হয়। অভিযোগ আছে, অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রকৃত আমদানিকারকদের নানা অজুহাতে ঘাটে ঘাটে হয়রানি করে থাকে। তবে যাদের সঙ্গে অবৈধ লেনদেন হয় তাদের নানাভাবে ছাড় দেয়। সম্প্রতি এআইআর শাখা সন্দেহজনক পণ্য চালানের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করলে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীদের মধ্যে। আর অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের রক্ষায় নানা কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার কাজী মোস্তাফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য এনে শুল্ক ফাঁকি দিতে চাইলে, রাষ্ট্রের ক্ষতি করতে চাইলে তাদের ছাড় দেয়া হবে না। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে আইন সবার জন্য সমান। কাউকে বাড়তি সুবিধা দেয়ার সুযোগ নেই।’ তিনি বলেন, ‘কোনো আমদানিকারক বা ব্যবসায়ী অহেতুক হয়রানির শিকার হোক সেটা আমরা চাই না। বড় বিনিয়োগকারী, শিল্পমালিক-যারা দেশে হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছেন তাদের ব্যাপারে সরকারের মনোভাব যেমন ইতিবাচক তেমনি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসও তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দেয়ার চেষ্টা করছে।’ কাস্টম কমিশনার বলেন, আমদানি পণ্য চালান ছাড় বা শুল্কায়নের ক্ষেত্রে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি হয়রানি করে, অনৈতিক সুবিধা দাবি করে তবে আমাকে সরাসরি জানালে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাভেদ ট্রেডিং কোম্পানি নামে ঢাকার তেজগাঁওয়ের একটি প্রতিষ্ঠান ১ হাজার ১৬০ পিস ‘ইলেকট্রনিক মোটর’ ঘোষণা দিয়ে নিয়ে আসে ‘বল বিয়ারিং’। শতভাগ কায়িক পরীক্ষায় মিথ্যা ঘোষণার বিষয়টি ধরা পড়ে। এই চালানে ৫৭ লাখ ৪২ হাজার ৯৫৭ টাকা শুল্ক ফাঁকি দেয়া হয়। পরে জরিমানাসহ এ প্রতিষ্ঠান থেকে আদায় করা হয় ৬৫ লাখ ৯৫ হাজার ৬৪১ টাকা। আসাদ অ্যান্ড ব্রাদার্স নামে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান ৬ হাজার ৭০০ কেজি স্ক্র্যাপার (হাঁড়ি-পাতিল মাজনি) ঘোষণা দিয়ে নিয়ে আসে ১৩ হাজার ৮০৮ দশমিক ১৬ কেজি প্লেয়িং কার্ড বা তাস। এই চালানে শুল্ক ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা হয় ৬০ লাখ টাকা। কায়িক পরীক্ষায় মিথ্যা ঘোষণার বিষয়টি ধরা পড়ার পর এই টাকা আদায় করা হয় জরিমানাসহ। র‌্যাংগস ইলেকট্রনিক্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান র‌্যাংগস ব্র্যান্ডের বিভিন্ন স্ক্রিন সাইজের মোবাইল ফোন নিয়ে আসে। কিন্তু তাদের চালানে ঘোষণাবহির্ভূত এবং অতিরিক্ত পণ্য পাওয়া যায়। এতে ৮৮ লাখ ২৪ হাজার ১৮৫ দশমিক ৬৫ টাকা শুল্ক ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা হয়। কায়িক পরীক্ষায় বিষয়টি ধরা পড়ার পর অতিরিক্ত এই শুল্ক আদায়ের পাশাপাশি জরিমানা আদায় করা হয়। এভাবে লালখান বাজার চট্টগ্রামের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এপেক্স ইন্টারন্যাশনাল, ঢাকা মদনপাল লেনের সানরাইজ ইন্টারন্যাশনাল, কেরানীগঞ্জের সিদ্দিক অ্যান্ড কোং, চট্টগ্রামের মেহেদীবাগের পি টু পি, জুবিলি রোডের মডার্ন ফুটওয়ার ইন্ডাস্ট্রিজ, ঢাকার নবাবপুরের জিএস পাওয়ার, সিমসন রোডের কল্পনা এন্টারপ্রাইজসহ বিভিন্ন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের ৩০৩টি পণ্য চালানে কায়িক পরীক্ষায় শুল্কের ব্যাপক হেরফের ধরা পড়ে। ফাঁকি দেয়া শুল্ক ও জরিমানা দিয়েই তাদের পণ্য ছাড় করতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার-১ মোহাম্মদ আকবর হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘মিথ্যা ঘোষণায় আনা কোনো পণ্য চালান যাতে বন্দর থেকে বের হয়ে যেতে না পারে, কেউ যাতে শুল্ক ফাঁকি দিতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন বর্তমান কমিশনার মহোদয়। পাশাপাশি কোনো নিরীহ ও স্বনামধন্য আমদানিকারক যাতে কায়িক পরীক্ষার নামে, ল্যাব টেস্টের নামে কিংবা অন্য কোনো অজুহাতে অহেতুক হয়রানির শিকার না হন- সে বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে বলেছেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। আকবর হোসেন বলেন, গত দু’মাসে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করেছে এআইআর শাখা। অভিযানে ৩০৩ পণ্য চালান ধরা পড়েছে। এসব চালান থেকে ৪০ কোটি টাকা অতিরিক্ত শুল্ক ও ১০ কোটি টাকারও বেশি জরিমানা আদায় করা হয়েছে।’
43A Railway Pde Lakemba, NSW 2195
email: editor@amardesh24.com
Copyright © 2016. Allright Reserved amardesh24.com