বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৯:৪৪

প্রকাশিতঃ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০১৯ ০৯:৩৮:১৬ পূর্বাহ্ন

মূল পরিকল্পনাকারীর জবানবন্দিতে নুসরাত হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা

ফেনীর সোনাগাজীতে নিপীড়নের পর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হাফেজ আবদুল কাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে তিনি নুসরাত হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। নৃশংসভাবে নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার লোমহর্ষক বর্ণনা উঠে এসেছে তার জবানিতে। বৃহস্পতিবার ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শরাফ উদ্দিন আহমদের আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় এ জবানবন্দি দেন কাদের। সোনাগাজী সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার ‘ঘনিষ্ঠ’ হাফেজ কাদের বিকাল ৪টা থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা জবানবন্দি দেন। এ নিয়ে এই ঘটনায় চারজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি হত্যার পরিকল্পনা, হত্যাকাণ্ডে তার ভূমিকা, কীভাবে গায়ে আগুন দেয়া হয় তার বর্ণনা দিয়েছেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) চট্টগ্রাম বিভাগীয় এসপি মো. ইকবাল গণমাধ্যমকে হাফেজ আবদুল কাদেরের স্বীকারোক্তির তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, হাফেজ আবদুল কাদের আদালতের কাছে স্বীকার করেছেন তিনি ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। ঘটনার দিন তিনি হত্যাকারীদের নিরাপত্তায় মাদ্রাসার গেট পাহারায় ছিলেন এবং পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে অন্যতম। নিজের সক্রিয় অংশগ্রহণের কথাও জানিয়েছেন তিনি। তার রুমেই হয়েছে পরিকল্পনা। আবদুল কাদের সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষক। তাকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন বুধবার রাতে রাজধানী থেকে গ্রেফতার করে। আবদুল কাদের তার জবানবন্দিতে বলেছেন, কাদের মাদ্রাসার বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার পক্ষে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন, কারাগারে সাক্ষাৎ এবং হত্যাকাণ্ডের দুদিন আগে অর্থাৎ ৪ এপ্রিল সকালে ও রাতে পৃথক সভায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ১২ জনের উপস্থিতিতে রাফি হত্যার রূপরেখা নির্ধারণে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। তার পরামর্শে হত্যাকাণ্ডে কে কোথায় থাকবে, তা নির্ধারিত হয়। তার দায়িত্ব ছিল মাদ্রাসার পরিবেশ শান্ত রাখা এবং গেটের পশ্চিম পাশে অবস্থান করে পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক শাহ আলম বলেন, হাফেজ আবদুল কাদের এ মামলার এজাহারের ৭ নম্বর আসামি। মামলার আসামি নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম, মো. আবদুর রহিম ওরফে শরিফ এবং হাফেজ আবদুল কাদেরসহ চারজন স্বীকারোক্তিতে একই ধরনের কথা বলেছেন। তাদের স্বীকারোক্তি থেকেও অনেকের নাম উঠে এসেছে। স্থানীয়রা জানান, নুসরাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার অনুগত হিসেবে মাদ্রাসার হোস্টেলে থাকতেন আবদুল কাদের। তার বাবা আওয়ামী লীগ কর্মী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। আবদুল কাদের সরাসরি শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে উপজেলা জামায়াতের আমির মো. মোস্তফা জানিয়েছেন, ইতিপূর্বে অপকর্মের দায়ে তাকে শিবির থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এ মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে যারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন, তারা সবাই জানিয়েছেন- এ হত্যাকাণ্ড সংগঠনের মূল পরিকল্পনাকারী আবদুল কাদের। তিনি সিরাজউদ্দৌলার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন, কারাগারে সিরাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা এবং হত্যাকাণ্ডের দুদিন আগে অর্থাৎ ৪ এপ্রিল সকালে ও রাতে পৃথক পৃথক সভায় উপস্থিত ছিলেন। ১২ জনের উপস্থিতিতে নুসরাত হত্যার রূপরেখা প্রণয়নে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। তার পরামর্শে হত্যাকাণ্ডে কে কোথায় থাকবে, তা নির্ধারিত হয়। আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও পিবিআই। এদের মধ্যে অধ্যক্ষ এসএম সিরাজউদ্দৌলা, কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মুকছুদ আলম, শিক্ষক আবসার উদ্দিন, সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষের ভাগ্নি উম্মে সুলতানা পপি, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের হোসেন, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, কামরুন নাহার মনি, জান্নাতুল আফরোজ মনি, শরিফুল ইসলাম ওরফে শরিফ ও হাফেজ আবদুল কাদের। এর আগে রোববার দিনে নুর উদ্দিন, রাতে শাহাদাত হোসেন শামীম এবং বুধবার বিকালে আবদুর রহিম শরিফসহ তিন আসামি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইনের আদালতে নুসরাত হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা তিনজনই ওই মাদ্রাসার ছাত্র। জবানবন্দিতে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার নির্দেশে তারা নুসরাতের গায়ে আগুন দিয়েছে বলে স্বীকার করেছেন। তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করেছে পিবিআই। এর আগে টানা পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান অগ্নিদগ্ধ নুসরাত জাহান রাফি। পর দিন সকালে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনদের বুঝিয়ে দিলে সোনাগাজী পৌরসভার উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে নুসরাতকে দাফন করা হয়। এর আগে ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা। এ ঘটনায় ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। ওই দিনই অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে আটক করে পুলিশ। সে ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।
43A Railway Pde Lakemba, NSW 2195
email: editor@amardesh24.com
Copyright © 2016. Allright Reserved amardesh24.com