শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩:০৬

প্রকাশিতঃ সোমবার, ২১ জানুয়ারী ২০১৯ ০৫:০১:৪৮ অপরাহ্ন

ডাকসু নির্বাচন ৩১ মার্চ: ভিসি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ৩১ মার্চকে সময়সীমা ধরেই আমরা সব প্রস্তুতি নিচ্ছি। ইতিমধ্যে আচরণ প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সে বিষয়টি দেখবেন। সব বিষয় মূল্যায়ন করেই তফসিল ঘোষণা করা হবে। তবে যারা ভোট দিতে পারবেন তারা প্রার্থীও হতে পারবে এই বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে। সোমবার ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনসমূহের প্ল্যাটফর্ম ‘পরিবেশ পরিষদের’ সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মতবিনিময় সভায় এসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কার্যালয়সংলগ্ন অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ও ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এর আগে ডাকসু নির্বাচনের প্রধান অংশীদার বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন নিয়ে ১৬ সেপ্টেম্বর পরিবেশ পরিষদের প্রথম বৈঠক হয়। ১০ জানুয়ারি ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধন ও পরিমার্জনে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে বৈঠক করে কর্তৃপক্ষ। মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামন। এসময় প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালসহ বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষগণ উপস্থিত ছিলেন। সভা পরিচালনা করেন প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী। এসময় ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের দুই অংশ, জাসদ সমর্থিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দুই অংশ, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্রমৈত্রী, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, ছাত্র আন্দোলনসহ ১৪টি ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণ উপস্থিত ছিলেন। সূত্র আরও জানায়, বৈঠকে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ডাকসু নির্বাচনের জন্য ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সহযোগিতা চান। নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে যাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়, সে ব্যাপারে সজাগ থাকার জন্যও তিনি সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, একাডেমিক ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে প্রতি বছর নিয়মিতভাবে ডাকসু নির্বাচনের বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা ত্রুটিমুক্ত রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হবে বলেও জানান ভিসি। আলোচনার বিষয়ে বৈঠক শেষে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে গঠনতন্ত্র ও আচরণবিধি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গঠনতন্ত্র নিয়ে সংশোধনী কমিটি যে সুপারিশ করেছে তা সিন্ডিকেটে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, এই ডিজিটাল যুগে দুর্নীতি করার সুযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম হলকেন্দ্রিক তাই ভোটকেন্দ্র হলে করা হোক। সহাবস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে সহাবস্থান আছে কিন্তু ছাত্রদলকে ইতিবাচক ধারায় আসতে হবে। তাহলে তারা সহাবস্থান করতে পারবেন। বয়স নিয়ে রাব্বানী বলেন, যে কেউ প্রার্থী হতে পারে। তবে তাদের বয়সসীমা ৩০ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ছাত্রদল অন্তর্কোন্দলের কারণে ক্যাম্পাস ছেড়েছে। তাদের মধ্যে যারা নিয়মিত শিক্ষার্থী তারা প্রভোস্টের মাধ্যমে হলে থাকলে আমাদের সমস্যা নেই। ডাকসু নির্বাচনে নিয়মের বাইরে দুর্নীতি করে এখানো কোনো কিছু হওয়ার সম্ভব নয়। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসাইন বলেন, ছাত্রদলসহ সব ছাত্র সংগঠনের পক্ষে থেকে মধুর ক্যান্টিন, আবাসিক হলগুলোতে সহাবস্থানের দাবি করা হয়েছে। ভোটার এবং প্রার্থিতার ক্ষেত্রে যারা ডাকসুর ফি প্রদান করে সবাইক সুযোগ দিতে হবে। এখানে কোনো প্রতিবন্ধকতা করা যাবে না। ভোটকেন্দ্র একাডেমিক ভবনে স্থানান্তর করতে হবে। পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে নির্বাচনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করতে হবে। তার পাশে উপস্থিত থাকা ছাত্রলীগ নেতাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আমরা ছাত্রলীগ নেতারা আমাদের নেতাকর্মীদের ক্যাম্পাসে আসলে বিভিন্ন সময় মারধর করে। এ সময় তিনি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করেন। তিনি ডাকসুর সভাপতির (ভিসি) ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীয় করারও দাবি জানান। এ সময় ছাত্রদল নিয়মিত মধুর ক্যান্টিনে যাবে বলে ঘোষণা দেন আকরাম হোসাইন। ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, ভোটকেন্দ্র ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবনে আনার জন্য প্রশাসনের কাছে অধিকাংশ ছাত্র সংগঠন দাবি জানিয়েছেন। আমরাও একই দাবি জানিয়েছি। একই সঙ্গে, যারা ডাকসু ও হল সংসদের জন্য ফি দেন তাদের ভোটার ও প্রার্থী করার দাবি জানানো হয়েছে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে ভোটকেন্দ্র করার দাবি জানিয়েছি। যাতে সবার জন্য সহাবস্থান থাকে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আচরণবিধি কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা শুনেছি যারা এই দুই কমিটিতে দায়িত্ব পেয়েছেন তারা সবাই একটা দলের। আমরা চাই সব সংগঠনের নেতাদের পরামর্শ নিয়ে এসব কমিটি গঠন করা হোক। এদিকে সভা শেষে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা একসঙ্গে বের হন। এ সময় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলম রাব্বানী ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানের হাত ধরা ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমকর্মী ও দলীয় অন্য নেতাকর্মীদের মধ্যে বেশ আলোচনা দেখা যায়। পরে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের শীর্ষ এ দুই নেতাকে একে অপরকে আলিঙ্গন করেন। এছাড়া উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন এই দুই শীর্ষ নেতা। কথা শেষে ফেরার পথে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনকে দেখলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ভিপি-জিএসতো তোমারই হবা, দেইখো ভোটের আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভরে রেখো না।’ এ সময় সেখানে হাস্য রসাত্মক পরিবেশ তৈরি হয়। পরে স্মৃতি চিরন্তনে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মোটরসাইকেলে তুলে দিয়ে বিদায় জানান ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক। তবে এ সময় ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনকে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর পাশে দেখা যায়নি।
43A Railway Pde Lakemba, NSW 2195
email: editor@amardesh24.com
Copyright © 2016. Allright Reserved amardesh24.com