বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ০৯:২৬

প্রকাশিতঃ বুধবার, ২৩ মে ২০১৮ ০২:০৩:৪৮ অপরাহ্ন

আম নিয়ে আতঙ্ক নয়

বাজারে অভিযান চালিয়ে কয়েক হাজার মণ আম ধ্বংস করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)। তারা মনে করছে, জানা-বোঝার ঘাটতির কারণে এভাবে আম নষ্ট করা হচ্ছে। র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) দুই অভিযানে আড়াই হাজার মণ এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ৪০০ মণ আম ধ্বংস করেছে। তাদের অভিযোগ আমগুলো অপরিপক্ব এবং কার্বাইড ও ইথোফেন দিয়ে পাকানো হয়েছে। এ আম স্বাস্থ্যের জন্য কি ক্ষতিকর? নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, অপরিপক্ব আমে স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টির পরিমাণ স্বাভাবিক পাকা আমের চেয়ে কম থাকে। কিন্তু এটা ক্ষতিকর নয়। তাই এসব আম ধ্বংস করার কোনো মানে হয় না। আর কার্বাইড (ক্যালসিয়াম কার্বাইড) দিয়ে পাকালে ফলে এর অবশিষ্টাংশ বা রেসিডিউ থাকে না। তাই তা ক্ষতিকর নয়। আবার নির্দিষ্ট মাত্রায় ইথোফেন ব্যবহার করে ফল পাকানো দেশের আইনে বৈধ। সারা বিশ্বেও তাই। ২০১৪ সালের আগে ফরমালিন মেশানোর অভিযোগে প্রচুর আম ও অন্যান্য ফল ধ্বংস করা হয়েছিল। পরে দেখা যায়, যে যন্ত্র দিয়ে ফরমালিন পরীক্ষা করা হচ্ছে, তা বাতাসে ফরমালডিহাইড মাপার যন্ত্র। তিনটি সংস্থার পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে হাইকোর্ট সেই যন্ত্রটি ফল ও মাছে ফরমালিন পরীক্ষায় অকার্যকর ঘোষণা করেন। অপরিপক্ব আম বাজারে আনা নিয়ন্ত্রণ করতে গত কয়েক বছর আমের বড় দুই অঞ্চল রাজশাহী ও সাতক্ষীরায় আম পাড়ার সময় বেঁধে দিচ্ছে প্রশাসন। এবার সাতক্ষীরায় ১৫ মে এবং রাজশাহীতে ২০ মে আম পাড়ার তারিখ ঘোষণা করে আমচাষি ও ব্যবসায়ী সমিতিকে নিয়ে তা বাস্তবায়ন করছে প্রশাসন। ঢাকার অভিযানে ধ্বংস করা আমের বেশির ভাগ সাতক্ষীরার। কিন্তু সাতক্ষীরায় আম পাড়ার সরকারি তারিখ ১৫ মেতেই ঢাকায় অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ অবস্থায় ফল পাকানোর বৈজ্ঞানিক বিষয়াদি জানাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে নিয়ে আজ কর্মশালার আয়োজন করেছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। সংস্থাটির চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, আইনে ফল পাকাতে নির্দিষ্ট মাত্রায় ইথোফেন ব্যবহার বৈধ। তবে কার্বাইড ব্যবহার বৈধ নয়। এটি ব্যবহার করার ফলে এর কোনো ‘রেসিডিউয়াল ইফেক্ট’ থাকে না, তাই ক্ষতি নেই। তিনি বলেন, অপরিপক্ব আম পাকানোর দায়ে ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা যায়, সাজা দেওয়া যায়। কিন্তু ফল ধ্বংস করা উচিত নয়। র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমগুলো পাকে নাই। কেমিক্যাল দিয়ে পাকিয়ে বাজারে এনেছেন ব্যবসায়ীরা।’ তিনি আরও বলেন, নিরাপদ খাদ্য আইনে আছে ফলে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করা যাবে না। আর ইথোফেনের ক্ষেত্রে কেউ বলেন এটা বেশি ক্ষতিকারক না, কেউ বলেন ক্ষতিকারক। ফলে রাসায়নিক আছে কি না তা কীভাবে নিশ্চিত হলেন, জানতে চাইলে সারোয়ার আলম বলেন, ‘আড়ত থেকে ইথোফেন বা কার্বাইডের জার উদ্ধার করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা এগুলো ব্যবহার করেছেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু ফলে আছে কি না বা কী মাত্রায় আছে, সেটা পরীক্ষা করা হয়নি।’ জাতীয় জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) কারিগরি সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির একজন পরীক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, সারা পৃথিবীতে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাতের জন্য অনেক ফল একই সঙ্গে পাকাতে ইথোফেন ব্যবহার করা হয়। এটি পরীক্ষা করে রেসিডিউ কতটুকু আছে, তা বের করা সম্ভব। ইউরোপিয়ান ফুড সেফটি অথরিটির ওয়েবসাইট দেখে তিনি আরও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নে আম ও কলায় ইথোফেনের নির্ধারিত মাত্রা আছে। তাই পরীক্ষা না করে কোন ফল ক্ষতিকর, তা বলা যাবে না। তিনি বলেন, কার্বাইড দিয়ে পাকানো ফলের গায়ে আর্সেনিক ও ফসফরাস লেগে থাকতে পারে। এটা ক্ষতিকর উপাদান, কিন্তু আম ও কলা যেহেতু ছিলে খাওয়া হয়, সেহেতু ক্ষতির আশঙ্কা নেই। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. ইকবাল রউফ মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ইউরোপে আমের ইথোফেনের নির্ধারিত মাত্রা বা এমআরএল প্রতি কেজিতে শূন্য দশমিক ০৫ মিলিগ্রাম। আম পাকার সময় প্রাকৃতিকভাবেও ইথোফেন তৈরি হয়। তিনি আরও বলেন, ‘কার্বাইড ব্যবহার দেশের আইনে নিষিদ্ধ। এটি যিনি প্রয়োগ করবেন, তাঁর স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা থাকে বলে আমরা কার্বাইড নিরুৎসাহিত করি। তবে ফলের ভেতরে কার্বাইড প্রবেশের ঝুঁকি কম।’ বোতল পেয়েই সাজা কারওয়ান বাজারে গত সোমবার অভিযান পরিচালনা করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মশিউর রহমান। অভিযানকালে সোনার বাংলা বাণিজ্যালয়ের ৪০০ মণ আম ধ্বংস করা হয়। এ ছাড়া একটি কলার আড়তে রাসায়নিকের একটি খালি গ্যালন পাওয়ায় ৫০ কাঁদি কলা ধ্বংস করা হয়। ব্যবসায়ী মো. হালিমকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অভিযানকারী দলের সঙ্গে ছিলেন বিএসটিআইয়ের মাঠ পরিদর্শক এ এফ এম হাসিবুল হাসান। জানতে চাইলে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বাই কার্বনেটের কাজ হলো তাপ উৎপাদন করা। ফল পাকাতে এই তাপটাকেই কাজে লাগানো হয়। কার্বাইড সরাসরি ব্যবহার করা হয়েছে, এটা নিশ্চিত হয়েছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেটাই প্রশ্ন, কীভাবে করেছে। আমরা শুধু ক্যানটা পেয়েছি। কলায় ছিল কি না, তা ম্যাজিস্ট্রেট স্যার বলতে পারবেন।’ এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মশিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ব্যবসায়ীর দখল থেকে বাই কার্বনেটের গ্যালন উদ্ধার করা হয়েছে। সে তো ফল ব্যবসায়ী। তার কাছে এটা থাকবে কেন?’ কোন আম কখন খাবেন রাজশাহীতে আমচাষি, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে ৮ মে সভা করে কোন আম কখন গাছ থেকে পাড়া হবে, তা ঠিক করে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। আম পাড়ার সূচিটি এমন-২০ মে থেকে গোপালভোগ, ১ জুন থেকে হিমসাগর, ক্ষীরশাপাতি ও লক্ষ্মণভোগ এবং ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া জাতের আম পাড়া শুরু হবে। ১৬ জুনের আগে আম্রপালি ও ফজলি এবং ১ জুলাইয়ের আগে আশ্বিনা জাতের আম নামানো যাবে না। রাজশাহী অ্যাগ্রো ফুড প্রডিউসার্স সোসাইটির আহ্বায়ক মো. আনোয়ারুল হক বলেন, ‘আগাম যে আম বাজারে এসেছে তা সাতক্ষীরার। রাজশাহীতে আমরা পাড়তে দিইনি।’ তিনি আরও বলেন, নানা ধরনের নেতিবাচক খবরের কারণে মানুষ ভালো আম খাওয়ার ক্ষেত্রেও দ্বিধায় ভোগে। এতে কৃষক আমের ভালো দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সাতক্ষীরায়ও আম পাড়ার দিন ঠিক করা হয়েছে। জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী আবদুল মান্নান বলেন, আমচাষি ও অন্যদের সঙ্গে বৈঠক করে ১৫ মে থেকে হিমসাগর, ২২ মে থেকে ল্যাংড়া ও ২৯ মে থেকে আম্রপালি পাড়ার সময় ঠিক করা হয়। সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন বলেন, ‘এবার কৃষক পর্যায়ে সঠিক মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার ও আম পাড়ার সময় নির্ধারণের ক্ষেত্রে বেশ সফল হয়েছি। তবে নির্ধারিত সময়ের আগে আম বাজারজাতকরণ ঠেকাতে পুরোপুরি সফল হতে পারিনি, ৮০ ভাগ সফল হয়েছি।’
43A Railway Pde Lakemba, NSW 2195
email: editor@amardesh24.com
Copyright © 2016. Allright Reserved amardesh24.com