বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০১:১৯

প্রকাশিতঃ রোববার, ১৩ মে ২০১৮ ০৭:১৪:৪৭ পূর্বাহ্ন

কোটা সংস্কারে রোজার মধ্যেও আন্দোলন চালিয়ে যাব

সরকারি চাকরিতে কোটাপ্রথা বাতিলে সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির জন্য আজ রোববার থেকে ফের আন্দোলনে নামছেন শিক্ষার্থীরা। এর অংশ হিসেবে আজ দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্লাটফর্ম ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’। এছাড়া বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনেরও ঘোষণা দিয়েছেন তারা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলাকে এ বিষয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মৌসুমি বলেন, আপনি জানেন সামনে রোজা, কিন্তু রোজার মধ্যেও আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। প্রজ্ঞাপন না হওযা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকাল আন্দোলন চলবে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা অহিংস আন্দোলন করবে এবং তা হবে মূলত অবস্থান কর্মসূচি। পরবর্তী সময় তারা সড়ক অবরোধ, ধর্মঘট বা ক্লাস বন্ধ করার মত কর্মসূচি দেবেন কিনা সে বিষয়েও শিগগিরিই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান মৌসুমি। গত ৮ এপ্রিল থেকে চারদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেন। পরের দিন সচিবালয়ে দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেন আন্দোলনকারীরা। মন্ত্রী বলেন, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তাদের অত্যন্ত সুন্দর আলোচনা হয়েছে। আমরা তাদের বলেছি- আগামী ৭ মের মধ্যে সরকার বিদ্যমান কোটার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। সেই পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত থাকবে। এ সময় সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনও ৭ মে পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার পর ৯ এপ্রিল রাতে আন্দোলন স্থগিত হয়ে যায়। তবে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর এক বক্তব্য কেন্দ্র করে ১০ এপ্রিল থেকে ফের আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। তারা কোটা সংস্কারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে সিদ্ধান্ত আসার দাবি জানান। পরে ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদের অধিবেশনে কোটাপদ্ধতি বাতিল ঘোষণা করে সব চাকরিতে শতভাগ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পর দিন শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনন্দ মিছিল বের করেন। এর দুই সপ্তাহ পর গত ২৬ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে কোটা বাতিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশের দাবি জানান আন্দোলনকারী। না হলে ফের আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন তারা। পর দিন ২৭ এপ্রিল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে বৈঠকে বসেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। সর্বশেষ গত ২ মে সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে কোটা বাতিলের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো ধরনের ক্ষোভ থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। ছাত্ররা কোটাব্যবস্থা বাতিল চেয়েছে, বাতিল করে দেয়া হয়েছে। এর পর গত ৭ মে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানিয়েছিলেন, সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি বাতিল বা সংস্কারের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। তার এ বক্তব্যের পর গত ৯ মে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা। এ সময় তারা ঘোষণা দেন ১০ মের মধ্যে কোটা সংস্কারে প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে আজ রোববার থেকে সারা দেশে সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে কঠোর আন্দোলন শুরু হবে। সর্বশেষ গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের কর্মসূচির ঘোষণা দেয় সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর ফের আন্দোলন কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে সগংঠনটির আহ্বায়ক হাসান আল মামুন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই অহিংস আন্দোলন করে আসছি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্দোলন স্থগিত করেছি। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে দফায় দফায় সময় নেয়া হলেও দাবি পূরণে অগ্রগতি দেখছি না। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে বৈঠকে মামলা প্রত্যাহারসহ যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তারও বাস্তবায়ন হয়নি। এর আগে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আলোচনায় তাদের পক্ষ থেকে যেসব কথা বলা হয়েছে, তারও বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ আমরা তাদের অনুরোধ রক্ষা করে আন্দোলন স্থগিত রেখেছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের হতাশ করেছেন।’ মামুন আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও কেন গেজেট প্রকাশ হচ্ছে না? আমরা আশঙ্কা করছি, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা যাতে বাস্তবায়ন না হয়, সে জন্য একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সংসদে ঘোষণা দেয়ার পরও প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দেয়া হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে। আমরা এ চেষ্টা সফল হতে দেব না। আশা করছি, প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই কোটার যৌক্তিক সংস্কার চেয়েছি। বাতিলের দাবি আমাদের কখনই ছিল না। তবুও যেহেতু প্রধানমন্ত্রী বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন, আমরা সেই দাবির প্রতি অশ্রদ্ধা দেখাইনি। তবে যদি কোটা বাতিল না করে যৌক্তিক সংস্কার করা হয়, তাহলেও আমাদের আপত্তি থাকবে না। তবে সেটা অবশ্যই আমাদের দেয়া পাঁচ দফার আলোকে হতে হবে
43A Railway Pde Lakemba, NSW 2195
email: editor@amardesh24.com
Copyright © 2016. Allright Reserved amardesh24.com