শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৮:১২

প্রকাশিতঃ রোববার, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ ১১:১৪:২৩ পূর্বাহ্ন

অপেক্ষার শেষ চেয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা গুম হওয়াদের স্বজনদের

ঢাকা: ‘পরিবারের সামনে থেকে আমাদের ভাইদের, সন্তানদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চাক্ষুষ প্রশাসন তুলে নিয়ে গেলেও তাঁরা বলছেন কিছু জানি না। আমরা যেন পরের বছরও একই দাবিতে সমবেত না হই, এ জন্য সরকারের আন্তরিক হস্তক্ষেপ কামনা করছি’—এমন আকুতি জানালেন চার বছর আগে গুম হওয়া সাজেদুল ইসলামের বোন আফরোজা ইসলাম। রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘মায়ের ডাক, সন্তানদের মায়ের কোলে ফিরিয়ে দাও’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সমবেত হন গুমের শিকার ২৭টি পরিবারের সদস্যরা। অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান গুম হওয়া সাজেদুল ইসলামের বোন মারুফা ইসলাম। চার বছর আগে রাজধানী থেকে গুম হন সাজেদুল ইসলাম। আজ অনুষ্ঠানে তাঁর বোন আফরোজা ইসলাম বলেন, ‘আজ আমাদের গুম পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচিত হতে হচ্ছে। এই বিচার চাইতে গুম হওয়া মুন্নার বাবা, পারভেজের বাবা মারা গেছেন। পিন্টুর মা ও আমার মা অসুস্থ। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারের আন্তরিক হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’ সাজেদুল ইসলামের মা হাজেরা খাতুন বলেন, ‘আমি আমার ছেলেটাকে ফেরত চাই। আমি আমার মৃত্যুর আগে ছেলেটিকে দেখতে চাই।’ এ সময় গুমের শিকার পরিবারগুলোর সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রতিটি মুখে ছিল উৎকণ্ঠা আর কষ্টের ছাপ। অনুষ্ঠানে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসাচং ইউনিটের (রামরু) পরিচালক সি আর আবরার, মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন, মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের পরিচালক নাসিরউদ্দিন এলান প্রমুখ। ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী গুমের জন্য সরকারকে দায়ী করে বলেন, ‘গতকাল ফরহাদ মজহারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাঁর সঙ্গে আলোচনায় আমি বুঝতে পেরেছি পুলিশ ও র‌্যাব সক্রিয় ছিল বলে উনি ফিরে আসতে পেরেছেন। এতে বোঝা যায় তাঁর নিখোঁজ হওয়ার পেছনে অন্য কোনো শক্তি কাজ করেছিল। তাই পুলিশ ও র‌্যাবকে সক্রিয় করার জন্য জোর অনুরোধ জানাচ্ছি।’ নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমি গুমের পরিস্থিতির শিকার এই কঠিন সময়টি সম্পর্কে আমি জানি। প্রতিবছর এভাবে শোকবিহ্বল পরিস্থিতি দিয়ে গুমের শিকার পরিবারগুলো সরকারের নিকট আকুল আবেদন জানিয়ে যায়। তাদের সন্তান, ভাইয়ের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু এই আহ্বান কারও কানে পৌঁছায় না। গুম অস্বীকার করার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। এসব গুম রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতেই করা হচ্ছে।’ সি আর আববার বলেন, একটা ভয়ের আবহাওয়া ও পরিস্থিতি নিয়ে স্বজন হারানোরা এখানে এসেছেন। যারা গুমের পেছনে জড়িত, তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হোক। গুম পরিবারগুলোর যে অভিযোগ রাষ্ট্রের দায়িত্ব তার জবাব দেওয়া। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে তারাই এখন নীরব। আগামী মার্চ মাসের মধ্যে গণশুনানির দাবি জানিয়ে নূর খান লিটন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দেশের সংখ্যা দিয়ে গুমকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আমরা বিচারের নায্যতায় নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। সেই পরিস্থিতিতে আমরা মার্চ মাসের মধ্যে গণশুনানির দাবি জানাচ্ছি।’ নাসিরউদ্দিন এলান বলেন, গুমের ট্রেন্ড চেঞ্জ হয়েছে। ২০১৭ সালের আগ পর্যন্ত দেখা যেত প্রশাসন পরিচয় দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো। এখন উধাও হয়ে যাচ্ছে। নিখোঁজ না মারা গেল, নাকি গুম তা বোঝা যায় না।
43A Railway Pde Lakemba, NSW 2195
email: editor@amardesh24.com
Copyright © 2016. Allright Reserved amardesh24.com