বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২:০৩

প্রকাশিতঃ সোমবার, ২০ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:১২:১০ পূর্বাহ্ন

বিয়ের ১৩ দিন পর ভারত থেকে লাশ হয়ে ফিরলো কুমিল্লার সুমি

পরিচয় গোপন করে তিন বছর প্রেম ও বিয়ের ১৩ দিনের মাথায় ভারতীয় স্বামী ও শাশুড়ির নির্যাতনে লাশ হয়ে ফিরলো কুমিল্লার সুজানগরের সুমনা আক্তার সুমি (২৫)। যৌতুকের দাবিতে তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সুমির পিতা মো. ইদ্রিস মিয়া। শনিবার রাতে ভারতের সেনামুড়ার রহিমপুরে সুমিকে নির্মম নির্যাতনের পর গুরুতর আহত অব¯’ায় সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়ার কাছে ফেলে যায় স্বামী ও তার লোকজন। বিষয়টি বিএসএফের নজরে এলে তারা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। ১৯ নভেম্বর রোববার দুপুরে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকার আন্তর্জাতিক সীমারেখায় শশীদল বিওপির বিজিবি ও ভারতের আশাবাড়ী বিএসএফ’র পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ব্রাহ্মণপাড়া ও ভারতের কলমচুড়া থানা পুলিশের উপস্থিতিতে সুমির লাশ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ। বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী আশাবাড়ীর এলাকার লোকজন ও সুমির স্বজনরা জানান, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কলমচুড়া থানা এলাকার রহিমপুর গ্রামের আব্দুল হালিমের ছেলে নাজমুল হাসান এর সাথে গত ৫ নভেম্বর কুমিল্লা জেলার কোতয়ালী থানার সুজানগর এলাকার ইদ্রিস মিয়ার মেয়ে সুমনা আক্তার সুমি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সম্পর্কে জড়িয়ে পারিবারিক ই”ছার বিরুদ্ধে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। বিয়ের সময় নাজমুল হাসান তার ঠিকানা দেয় কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থানার শশীদলের আশাবাড়ি এলাকা। নিহত সুমির পিতা মো. ইদ্রিস মিয়া জানান, বিয়ের এক সপ্তাহ পরে পাষন্ড স্বামী সুমিকে যৌতুকের জন্য মারধর ও চাপ প্রয়োগ করে। এক পর্যায়ে সুমি স্বামীর সংসারের সুখের কথা ভেবে স্বজনদের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে স্বামী নাজমুল হাসানকে দেয়। তারপরও সুমির স্বামী নাজমুল আরো যৌতুকের জন্য সুমির উপর শারিরিক ও মানসিক অত্যাচারের মাত্র বাড়িয়ে দেয়। এতে সুমি ধৈর্য্য হারিয়ে স্বামীর সংসার না করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং তার স্বামীকে যৌতুকের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে। এ নিয়ে গত ১৮ নভেম্বর বিকেলে সুমি স্বামীর সাথে ঝগড়া করে আশাবাড়ী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা পর তার স্বামী ও তার মামা শ্বশুর আব্দুল জলিল বাংলাদেশের সীমানা থেকে সুমিকে ধরে নিয়ে ভারতের সীমানায় মারধর করে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার চেষ্টা করে এবং বস্তা বন্ধী করে ভারতের কাটা তারের বেড়া অতিক্রম করে বাংলাদেশের সীমানায় ফেলে দেওয়ার চেষ্টাকালে বিএসএফ’র নজরে আসে। এ সময় ভারতের সীমান্ত প্রতিরক্ষা বাহিনী (বিএসএফ) এর উপস্থিতি টের পেয়ে স্বামী নাজমুল হাসান ও মামা শ্বশুর আব্দুল জলিল পালিয়ে যায়। ঘটনা¯’ল থেকে বিএসএফ সুমিকে উদ্ধার করে ভারতের বঙ্গনগর সরকারি হাসপাতালে নেওয়ার পথে সুমি মারা যায়। পরে তার লাশ ভারতে ময়নাতদন্ত করে ভারতের কলমচুড়া থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা নিয়ে রোববার দুপুরে সুমির লাশ বাংলাদেশে হস্তান্তর করে। এ সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ৬০ ব্যাটালিয়ন বিজিবির নন কমিশনার অফিসার মেহেদী হাসান, শশীদল বিজিবির কোম্পানী কমান্ডার নায়েব সুবেদার টিপু সুলতান, ব্রাহ্মণপাড়া থানার এস আই সুনিলসহ বিজিবি ও থানা পুলিশের অন্যান্য সদস্যরা। অপরদিকে ভারতের আশাবাড়ী বিএসএফ ক্যাম্প কমান্ডার এস কে মিতু ও কলমচুড়া থানা পুলিশ এবং বিএস এফ ও পুলিশের সদস্যগণ। এ ব্যাপারে শশীদল বিজিবির কোম্পানী কমান্ডার নায়েব সুবেদার টিপু সুলতান সত্যতা স্বীকার করে এই প্রতিনিধিকে জানান, ভারতে সুমির লাশ ময়নাতদন্তের পর একটি মামলা করে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ভারত এবং ব্রাহ্মণপাড়া থানা পুলিশের উপস্থিতিতে বিএসএফ আমাদের কাছে সুমির লাশ স্থানন্তর করে। পরে আমরা একই দিনে সুমির লাশ তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করি। নিহত সুমির পিতা মো. ইদ্রিস মিয়া জানান, আমরা গবীব বলে কারো কাছে বিচার চাইতে পারি নি। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। এদিকে রোববার রাতে কুমিল্লা শহরের সুজানগরে সুমির লাশ আনা হলে আত্মীয়দের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠে। রাতে তাকে সুজানগর কবর স্থানে দাফন করা হয়।
43A Railway Pde Lakemba, NSW 2195
email: editor@amardesh24.com
Copyright © 2016. Allright Reserved amardesh24.com