শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০২:৫৪

প্রকাশিতঃ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০১৯ ১০:৪৭:১৭ পূর্বাহ্ন

বিদ্যুৎ সংযোগ না পেয়েও বকেয়া বিলের মামলা: সেই দিনমজুরের জামিন

বিদ্যুৎ সংযোগ না পেয়েও বকেয়া বিলের মামলায় গ্রেফতার দিনমজুর আবদুল মতিন মিয়া (৪৫) জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কুমিল্লার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা দিনমজুর আবদুল মতিনের জামিন মঞ্জুর করেন। এর আগে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) প্রকল্প কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সানাউল্লাহ দিনমজুর আবদুল মতিনের জামিনের আবেদন করেন। মোহাম্মদ সানাউল্লাহ দিনমজুর আবদুল মতিনের জামিনে মুক্ত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেন। জামিন পেয়ে আবদুল মতিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ সারাদিন কাজ করে যা পাই তা দিয়ে সংসার কোনো রকম চালাই। রাতে কেরোসিনের বাতি জ্বালাই ঘরে। কখনও বিদ্যুতের বাতি জ্বালাইনি। প্রধানমন্ত্রী বিনামূল্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিলেও আমি বিদ্যুৎ সংযোগ পাইনি দালালদের খরচপাতি ছাড়া মোটা অংকের টাকা দিতে পারিনি বলে। আমার গ্রামের আজাদ মিয়া ও আবুল বাশারদের টাকা দিয়েও বিদ্যুতের সংযোগ দেয়নি আমাকে। এর পরও বকেয়া বিলের মামলায় আমাকে জেলে পাঠানো হয়। আমাকে যারা হয়রানি করেছে, তাদের বিচার চাই। এদিকে সংযোগ না পেয়েও বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের মামলায় কারাগারে যাওয়া মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের মোচাগড়া গ্রামের দিনমজুর আবদুল মতিনকে নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এ ঘটনায় কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সমিতি-১ চান্দিনা অফিস দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ অফিস সূত্র জানায়, দেবিদ্বার জোনের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মৃণাল কান্তি চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও বাঙ্গরা-দৌলতপুর জোনের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজুর রহমানকে সদস্য করে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মৃণাল কান্তি চৌধুরী বলেন, আবদুল মতিনের নামের মিটারটি তার পার্শ্ববর্তী সফিকুল ইসলামের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সফিকুল ইসলামও বিষয়টি অফিসকে জানায়নি। কোনো বিদ্যুৎ বিলও পরিশোধ করেনি। আব্দুল মতিন নোটিশ পেয়েও তার ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় বিষয়টি আমলে নেননি। যার কারণে এ ঘটনাটি ঘটেছে। কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি- ১ এর চান্দিনা অফিসের জেনারেল ম্যানেজার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝির কারণে এমনটা হয়েছে। আমরা মামলাটি নিষ্পত্তি করেছি। ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোচাগড়া গ্রামের দক্ষিণপাড়ার ২৫৬ পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য গত চার বছর আগে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এ আবেদন করে। আবেদনের পর স্থানীয় দালাল আবুল কালাম আজাদ ও আবুল বাশার প্রতিটি গ্রাহকের কাছ থেকে মিটারপ্রতি ১৫-২০ হাজার টাকা করে আদায় করে। ওই সময় মতিন মিয়াও আবেদন করেন এবং কর্তৃপক্ষও সংযোগের অনুমোদন দেয়। মতিন মিয়া স্থানীয় দালালচক্রকে চার হাজার টাকা দেয়ার পর বাকি টাকা দিতে পারেননি। এতে মতিন মিয়ার সঙ্গে প্রতারণার আশ্রয় নেয় স্থানীয় দালালরা। মতিন মিয়ার অজান্তে কৌশলে তার আবেদনে একই এলাকার মৃত আবদুস সামাদের ছেলে সফিকুল ইসলামের ছবি লাগিয়ে দিয়ে তার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নেয় স্থানীয় দালাল চক্রটি। প্রথম দিকে মতিনের নামেই সফিকুল মিটারের বিল জমা দিলেও গত ১৭ মাস ধরে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রেখেছে। কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১-এর চান্দিনা অফিসের এজিএম লক্ষ্মণ চন্দ্র পাল বাদী হয়ে মিটারের অনুমোদন পাওয়া মতিন মিয়ার নামে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় গত মঙ্গলবার রাতে মুরাদনগর থানার এসআই কবির হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ আবদুল মতিনকে গ্রেফতার করে বুধবার দুপুরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
43A Railway Pde Lakemba, NSW 2195
email: editor@amardesh24.com
Copyright © 2016. Allright Reserved amardesh24.com